বৈদিক যুগের শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে তােমার পরিচিতি দাও। বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।

বৈদিক যুগের শিক্ষাদান পদ্ধতি

বৈদিক যুগে পঠনপাঠনের বিষয় ছিল যজ্ঞের "মন্ত্র'। লিখিত পুস্তক তখন ছিল না। শিক্ষাপদ্ধতি ছিল আবৃত্তি। শিক্ষক বা আচার্য যথাযথ ছন্দ ও ধ্বনিতে মন্ত্র উচ্চারণ করতেন, ছাত্র বা শিষ্যরা তা শুনে মনন ও অনুধাবনের সঙ্গে আয়ত্ত করত। সুতরাং, শিক্ষা-শিখন প্রক্রিয়ায় ছাত্র অর্থাৎ শিষ্যদের ভূমিকা ছিল মুখ্য।


বৈদিক যুগের ঋষিরা মনে করতেন প্রকৃত জ্ঞান কেবল অনুশীলনের দ্বারাই অর্জন করা যায় না। এর জন্য প্রয়ােজন আকাঙ্ক্ষার নিরসন। সমস্ত জাগতিক কামনা, বাসনার উর্ধ্বে উঠতে হবে। এর জন্য প্রয়ােজন সন্ন্যাস ও যােগ| তাই সন্ন্যাস ও যােগ শিক্ষাপদ্ধতির অন্তর্ভুক্ত ছিল। বৈদিক ব্রাহ্মপ্য যুগের শিক্ষাদান পদ্ধতি বিশ্লেষণ করে কয়েকটি স্তর পাওয়া যায়। যেমন一


(১) উপক্ৰম: পূর্বজ্ঞান পরীক্ষা করে শিক্ষার্থীর জ্ঞানের স্তর অনুধাবন করা হত।


(২) শুশূষা: আচার্যের মন্ত্রোচ্চারণ শােনার প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি করাই ছিল শুশূষা।


(৩) শ্রবণ: শিষ্যরা যেভাবে মনােযােগের সঙ্গে আচার্যের পাঠদান গ্রহণ করত তাকেই বলা হত শ্রবণ।


(৪) গ্রহণ: গ্রহণ হল বিষয়বস্তুর উপলদ্ধি।


(৫) ধারণ: অনুশীলনের দ্বারা বিষয়বস্তুকে স্মৃতিতে রাখাকে বলা হত ধারণ।


(৬) আলোচনা: গুরু-শিষ্যের আলােচনার মাধ্যমে গভীরভাবে বিষয়বস্তু উপলদ্ধির প্রয়াস করা হত।


(৭) অভিজ্ঞান: অভিজ্ঞান হল আচার্যের দেয় বিষয়বস্তুকে হৃদয়ঙ্গম করার চেষ্টা। একে অর্থাভিজ্ঞানও বলে।


(৮) তত্ত্বাভিনিবেশ: আচার্য কর্তৃক ব্যক্ত জ্ঞানের অন্তর্নিহিত সত্য উপলব্ধি করা হল তত্ত্বাভিনিবেশ।


বৈদিক ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার সাদৃশ্য


ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা থেকেই বৌদ্ধ শিক্ষার আবির্ভাব ঘটেছে। স্বাভাবিকভাবেই উভয় শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে বেশ কিছু সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়। নীচে সেই সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করা হল


ধর্মভিত্তিক সাদৃশ্য


  • ব্রাহ্মণ্য এবং বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাই ধর্মকে ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল।


  • বৈদিক ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার লক্ষ্য ছিল মােক্ষলাভ এবং বৌদ্ধ শিক্ষার লক্ষ্য ছিল নির্বাণ বা মুক্তিলাভ—উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট সাদৃশ্য দেখা যায়।


  • বৈদিক শিক্ষা এবং বৌদ্ধ শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই কর্মের নীতি, পুনর্জন্মবাদ স্বীকার করা হত।


প্ৰণালীগত সাদৃশ্য


  • বৈদিক শিক্ষার মুক্তিবাদ ও বৌদ্ধ শিক্ষার পরিনির্বাণবাদের মধ্যে প্রণালীগত সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।


  • বৈদিক শিক্ষার চতুরাশ্রমের বানপ্রস্থ ও সন্ন্যাসের সঙ্গে বৌদ্ধ শিক্ষায় ভিক্ষু, সংসার ত্যাগ ও পরিব্রাজকের সাদৃশ্য পরিলক্ষিত হয়।


অন্যান্য সাদৃশ্য


  • ব্রাহ্মণ্য শিক্ষার আশ্রমিক জীবনের সঙ্গে বৌদ্ধ শিক্ষার সংঘজীবনের যথেষ্ট সদৃশতা লক্ষ করা যায়।


  • ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ও বৌদ্ধ শিক্ষা উভয় ক্ষেত্রেই ত্যাগের আদর্শ পরিলক্ষিত হয়।


  • ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ উভয় শিক্ষাতেই শিক্ষার্থীদের কঠোর নিয়মনীতি ও সংযম পালন করতে হত।


  • ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা এবং বৌদ্ধ শিক্ষা উভয়ই ছিল অবৈতনিক।


  • উভয় ব্যবস্থাই সমাজ ও রাষ্ট্রের আনুকূল্যের ওপর নির্ভরশীল ছিল।


  • উভয় শিক্ষাতেই শিক্ষার্থীর শিক্ষাজীবন শুরু এবং শেষ করার সময়ে বিশেষ অনুষ্ঠান পালন করা হত। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা শুরু হত উপনয়ন দিয়ে এবং শেষ হত সমাবর্তন দিয়ে। অন্যদিকে, বৌদ্ধ শিক্ষা শুরু হত প্রব্রজ্যা দিয়ে এবং শেষ হত উপসম্পদা অনুষ্ঠানের মাধ্যমে।


  • এই দুই শিক্ষাব্যবস্থাতেই গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক বেশ মধুর ছিল।


ধারণা-শিখনের পদ্ধতিগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। শ্রেণিশিক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ধারণা গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপায় লেখাে।


ধারণা গঠনের তত্ত্ব তিনটি লেখাে। সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?


প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।


বৈদিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে

অথবা, গুরুকুল প্রথায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করাে।


ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে বৈশিষ্ট্যগুলি আধুনিক শিক্ষায় গ্রহণযােগ্য সেগুলি আলােচনা করাে।


মহাকাব্যের যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থার যে-কোনাে দুটি অনুষ্ঠান ও তার গুরুত্ব উল্লেখ করাে।