ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।

ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্য

ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ছিল বৈদিক শিক্ষার একটু উন্নত রূপ| এই শিক্ষার সঙ্গে জীবনের যােগ ছিল ঘনিষ্ঠ। নীচে ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষার কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হল一


(১) ধর্মভিত্তিক শিক্ষা: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষা ধর্মকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থায় ধর্মের মাধ্যমে সামাজিক রীতিনীতি, ন্যায়-অন্যায় প্রভৃতি বিষয় শিক্ষার্থীদের শেখানাে হত।


(২) চরিত্রগঠন: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের চরিত্র গঠনের ওপর বিশেষ জোর দেওয়া হত। শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান, ন্যায়নীতি, সততা, ধৈর্য, কর্মদক্ষতা প্রভৃতি বিষয়কে গুরুত্ব দেওয়া হত।


(৩) ব্যক্তিত্বের বিকাশ: ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের‌ ব্যক্তিত্ববিকাশের দিকে বিশেষ নজর দেওয়া হত। প্রতিটি শিক্ষার্থীকে সুব্যক্তিত্বের অধিকারী করে গড়ে তােলাই ছিল এই শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য।


(৪) আত্মনিয়ন্ত্রণ: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় শিক্ষার্থীদের গুরুগৃহে দীনদরিদ্রের জীবন কাটাতে হত, বিভিন্ন ধরনের ভােগদ্রব্য বর্জন করতে হত। আত্মনিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে গুরুর কাছে তারা প্রকৃত জীবনের অর্থ উপলব্ধি করত।


(৫) সূচনাকাল: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় ব্রাহ্মণরা গুরুগৃহে শিক্ষা শুরু করত আট বছর বয়সে, ক্ষত্রিয়রা এগারো বছর বয়সে এবং বৈশ্যরা বারাে বছর বয়সে। প্রত্যেকের ক্ষেত্রে উপনয়নের মাধ্যমে শিক্ষার সূচনা হত। শূদ্রদের শিক্ষাধিকার ছিল না।


(৬) সামাজিক বিকাশ: শিক্ষা শেষে সমাজজীবনে ফিরে শিক্ষার্থী যাতে গৃহ ও সমাজজীবনের বিভিন্ন সমস্যার সঠিকভাবে সমাধান করতে পারে, সেজন্য গুরুগৃহে সামাজিক শিক্ষা দেওয়ার ব্যবস্থা ছিল।


(৭) নৈতিক বিকাশ: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষায় নৈতিকতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব আরােপ করা হত। সততা, ন্যায়, ধৈর্য প্রভৃতি বৈশিষ্ট্যের প্রতি বিশেষ নজর দেওয়া হত।


(৮) বিশ্লেষণ ক্ষমতার বিকাশ: ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থায় আলােচনা, বিতর্ক প্রভৃতির মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের বিশ্লেষণ ক্ষমতার বিকাশ ঘটানাে হত।


(৯) উদ্দেশ্য বা লক্ষ্য: আত্মােপলদ্ধি এবং পুনর্জন্ম থেকে মুক্তিই ছিল ব্রাম্মণ্য যুগের শিক্ষার মূল লক্ষ্য।


(১০) শিক্ষারম্ভ ও শিক্ষাশেষের অনুষ্ঠান: ব্রাহ্মণ্য যুগে শিক্ষা শুরু হত উপনয়ন অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে আর শেষ হত সমাবর্তনের মধ্য দিয়ে।


(১১) পাঠক্রম: ব্রাহ্মণ্য যুগে পরাবিদ্যা ও অপরাবিদ্যা উভয়ই ছিল পাঠক্রমের অন্তর্ভুক্ত।


(১২) শিখন মাধ্যম: বৈদিক শিক্ষাদানে প্রধান পদ্ধতি হিসেবে বিবেচিত হত শ্রবণ, মনন ও নিদিধ্যাসন।


(১৩) গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক: ব্রাহ্মণ্য যুগে গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল পিতা-পুত্রের সম্পর্কের মতাে।


(১৪) শিক্ষাপদ্ধতি: শিক্ষাপদ্ধতি হিসেবে প্রধানত ব্যবহৃত হত আবৃত্তি, তর্ক, আলােচনা ইত্যাদি।


(১৫) শৃঙ্খলাপরায়ণতা: শিক্ষার আলােচিত আদর্শ ও পদ্ধতির পরিপ্রেক্ষিতে নিয়মানুবর্তিতার কোনাে সমস্যাই ছিল না। ব্রহ্মচর্যের সাহায্যে অন্তর ও বাইরে জীবনবিধি আয়ত্ত করাই ছিল এই শিক্ষার লক্ষ্য। সুতরাং, বৈবদিক ব্রাহ্মণ্য যুগে শিক্ষা ও নিয়মানুবর্তিতা ছিল সমার্থক।


সঠিক ধারণা গঠনের প্রয়ােজনীয়তা কী?

অথবা, শিক্ষাক্ষেত্রে ধারণার প্রয়ােজনীয়তা বা উপযােগিতা লেখাে।


ধারণা গঠনে শিক্ষক-শিক্ষিকার ভূমিকা আলােচনা করাে।


স্থান বা দূরত্ব ও গভীরতার প্রত্যক্ষণের শারীরবৃত্তীয় কারণ লেখাে। বিভিন্ন ধরনের ধারণা গঠনে সহায়ক বিষয়গুলি উল্লেখ করাে।


ধারণা-শিখনের পদ্ধতিগুলির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। শ্রেণিশিক্ষণের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর ধারণা গঠনের গুরুত্বপূর্ণ উপায় লেখাে।


ধারণা গঠনের তত্ত্ব তিনটি লেখাে। সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?


প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।


বৈদিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে

অথবা, গুরুকুল প্রথায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করাে।