বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।

বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার মুখ্য বৈশিষ্ট্য

প্রাচীন ভারতে ব্রাঘণ্য শিক্ষার প্রতিবাদস্বরূপ বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থা গড়ে ওঠে। এই শিক্ষাব্যবস্থা সর্বজনীন হওয়ায় শুধু ভারতে নয়, ভারতের বাইরের বহু দেশের মানুষের কাছেও তা গ্রহণযােগ্য হয়ে উঠেছিল। এই শিক্ষার গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলি নীচে আলােচনা করা হল一


(১) শিক্ষার লক্ষ্য: পরিনির্বাণ ছিল বৌদ্ধ শিক্ষার চরম লক্ষ্য। দুঃখজর্জরিত সমাজজীবনের বন্ধন থেকে চিরকালের জন্য মুক্তিলাভই হল পরিনির্বাণ।


(২) সংঘভিত্তিক শিক্ষা: বৌদ্ধ শিক্ষা গড়ে উঠেছিল বৌদ্ধমঠ বা সংঘকে কেন্দ্র করে সংঘ ছিল বৌদ্ধ শিক্ষার আবাসিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বৌদ্ধ ভিক্ষুরাই শিক্ষার্থীদের পঠনপাঠনে সহায়তা করতেন।


(৩) শিক্ষা শুরুর অনুষ্ঠান: বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থায় প্রব্রজ্যা নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের শিক্ষা শুরু হত। এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে যে শিক্ষার্থীরা সংঘে প্রবেশ করত, তাদের বলা হত শ্রমণ।


(৪) সর্বজনীন শিক্ষা: বৌদ্ধ শিক্ষা ছিল সর্বজনীন। মেধার ভিত্তিতে ধর্ম-বর্ণ-জাতি নির্বিশেষে সব ধরনের মানুষকেই পঠনপাঠনের সুযােগ দেওয়া হত। তবে রােগগ্রস্ত এবং অপরাধী ব্যক্তিদের সংঘে প্রবেশ করতে দেওয়া হত না।


(৫) গুরু শিখ্য সম্পর্ক: বৌদ্ধ শিক্ষায় গুরু-শিষ্যের সম্পর্ক ছিল মধুর। উভয়ই পরস্পরের প্রতি কর্তব্য পালন করত। বৌদ্ধ শিক্ষায় গুরুর কথাই শেষ কথা ছিল না, সংঘের কথাই অগ্রাধিকার পেত। অনেকক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কথাও শােনা হত।


(৬) শিক্ষার পাঠক্রম: বৌদ্ধ শিক্ষার পাঠক্রম ছিল খুবই উন্নত মানের। বৌদ্ধ ধর্মগ্রন্থ পাঠ ছাড়াও বেদ, পুরাণ, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা, গণিত, চিকিৎসাশাস্ত্র, সংগীত, ছন্দ-ধ্বনি- কাব্য, ইতিহাস প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদানের ব্যবস্থা ছিল। এই শিক্ষাব্যবস্থায় বৌদ্ধ ভিক্ষুদের জন্য বিশেষ শিক্ষা, গৃহীদের জন্য শিক্ষা এবং লােকশিক্ষা বা গণশিক্ষার ব্যবস্থা ছিল।


(৭) শিক্ষাদান পদ্ধতি: মূলত আবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হত। বিতর্ক, চিন্তাপূর্ণ আলােচনার মাধ্যমেও শিক্ষার্থীদের জ্ঞানদান করা হত। পাঠদানের মাধ্যম ছিল প্রাকৃত ভাষা।


(৮) নিয়মানুবর্তিতা: হিন্দু শিক্ষাব্যবস্থার মতাে বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থাতেও শিক্ষা ও নিয়মানুবর্তিতা ছিল সমার্থক। প্রতিটি শ্রমণকে ১০টি শীল পালন করতে হত। মিথ্যাকথন, সুরাপান, দানবহির্ভূত দ্রব্য গ্রহণ, অপবিত্র আচরণ, অসময়ে ভােজন, নৃত্যগীতে অংশগ্রহণ, মাল্য, পাদুকা, সুগন্ধি, অলংকার ও গন্ধদ্রব্য ব্যবহার, উচ্চাসনে উপবেশন ও স্বর্ণরৌপ্য গ্রহণ নিষিদ্ধ ছিল।


(৯) শিক্ষা শেষের অনুষ্ঠান: উপসম্পদা নামক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে বৌদ্ধ শিক্ষার সমাপ্তি ঘটত। এটি আসলে চিরকালীন গৃহত্যাগের অনুষ্ঠান।


ধারণা গঠনের তত্ত্ব তিনটি লেখাে। সংবেদন, প্রত্যক্ষণ ও ধারণা কীভাবে সম্পর্কযুক্ত?


প্রত্যক্ষণ ও ধারণার মধ্যে পার্থক্যগুলি লেখাে।


বৈদিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে

অথবা, গুরুকুল প্রথায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করাে।


ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে বৈশিষ্ট্যগুলি আধুনিক শিক্ষায় গ্রহণযােগ্য সেগুলি আলােচনা করাে।


মহাকাব্যের যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থার যে-কোনাে দুটি অনুষ্ঠান ও তার গুরুত্ব উল্লেখ করাে।


বৈদিক যুগের শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে তােমার পরিচিতি দাও। বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।