হান্টার কমিশনের কর্মধারা লেখাে। ওই কমিশনের প্রাথমিক শিক্ষা-সম্পর্কিত সুপারিশের মূল্যায়ন করাে।

কমিশনের কর্মধারা


হান্টার কমিশন গঠনের পর কমিশনের সদস্যরা কলকাতায় অনুষ্ঠিত তাদের প্রথম অধিবেশনে নিজস্ব কর্মপদ্ধতি স্থির করে, কতকগুলি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। কমিশন যে বিষয়গুলির ওপর গুরুত্ব দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়, সেগুলি হল一


(1) দেশের প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে সুপারিশ: দেশের প্রাথমিক শিক্ষা পর্যবেক্ষণ করে কমিশন প্রয়ােজনীয় সুপারিশ দান করবে।


(2) শিক্ষাব্যবস্থায় সরকারি বিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে সুপারিশ: দেশের সরকারি বিদ্যালয়ের অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে, আগামী দিনে ভারতের সামগ্রিক শিক্ষাব্যবস্থায় বিদ্যালয়গুলির ভূমিকা সম্পর্কে কমিশন মতামত দেবে৷


(3) শিক্ষাব্যবস্থায় মিশনারি বিদ্যালয়ের ভূমিকা সম্পর্কে সুপারিশ: মিশনারি প্রতিষ্ঠিত ও পরিচালিত বিদ্যালয়গুলির অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে, ভবিষ্যতে ভারতের সামগ্রিক শিক্ষাব্যথায় সেগুলির কী ভূমিকা হবে সে সম্পর্কে কমিশন সুপারিশ করবে।


(4) বেসরকারি বিদ্যালয়ের প্রতি সরকারের দৃষ্টিডঙ্গি সম্পর্কে সুপারিশ: দেশের বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির প্রতি সরকারের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন হওয়া উচিত, সে সম্পর্কে কমিশন প্রয়ােজনীয় অভিমত ব্যক্ত করবে।


(5) বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে সরকারি অনুদান প্রসঙ্গে পরামর্শ দান: দেশের বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিকে কীভাবে অনুদান দেওয়া হবে সে সম্পর্কে কমিশন নীতি নির্ধারণ করে, সরকারকে প্রয়ােজনীয় পরামর্শ দেবে।


(6) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সম্পর্কে সরকারকে পরামর্শ দান: অতিরিক্ত কাজ হিসেবে কমিশন মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা সম্পর্কেও সরকারকে কিছু পরামর্শ দান করবে।


হান্টার কমিশনের প্রাথমিক শিক্ষা-সম্পর্কিত সুপারিশের মূল্যায়ন

হান্টার কমিশনের রিপাের্টে প্রাথমিক শিক্ষা সম্পর্কে যে সমস্ত সুপারিশ করা হয়েছিল, তা পর্যালােচনা করলে দেখা যায়, ভারতীয় শিক্ষার পুনর্গঠনের ক্ষেত্রে সেগুলি খুবই তাৎপর্যপূর্ণ।


(1) ন্যূনতম শিক্ষা হিসেবে গুরুত্ব প্রদান: কমিশন তাঁর রিপাের্টে প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে জনসাধারণের জন্য প্রয়ােজনীয় ন্যূনতম শিক্ষা হিসেবে বিবেচনা করার সুপারিশ করেছিল। এটিকে বাধ্যতামূলক করার বিষয়ে স্পষ্ট ইঙ্গিত না দিলেও প্রাথমিক শিক্ষা যে জনকল্যাপের জন্য বিশেষ প্রয়ােজন, তা পরােক্ষভাবে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছিল।


(2) স্বয়সম্পূর্ণ স্তর হিসেবে বিবেচনা: কমিশন প্রাথমিক স্তরের শিক্ষাকে একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ স্তর হিসেবে সংগঠিত করার সুপারিশ করেছিল। আজ যে-কোনাে উন্নয়নশীল দেশে প্রাথমিক শিক্ষাকে স্বয়ংসম্পূর্ণ স্তর হিসেবেই বিবেচনা করা হয়।


(3) শিক্ষা পরিচালনায় স্বশাসনের প্রচলন: কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার পরিচালনার ভার স্থানীয় স্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের ওপর অর্পণ করার সুপারিশ করেছিলেন। এই নীতিটিও বর্তমানে বিভিন্ন দেশে অনুসৃত হচ্ছে।


(4) সামাজিক প্রয়োজন ভিত্তিক পাঠক্রম: কমিশন প্রাথমিক শিক্ষার পাঠক্রমকে সমাজের প্রয়ােজনের সঙ্গে যুক্ত করার পরামর্শ দিয়েছিলেন। এই নীতিটিও আধুনিককালের শিক্ষাবিদরা সমর্থন করেন।


(5) শিক্ষক-শিক্ষণ ও বিদ্যালয় পরিদর্শনের ওপর গুরুত্ব আরোপ: শিক্ষক-শিক্ষণ ও বিদ্যালয় পরিদর্শন বিষয়ে কমিশন যে মূল্যবান সুপারিশ করেছিলেন, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থায় সেগুলিও অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।


এককথায় বলা যায়, বর্তমানে আমাদের দেশের প্রাথমিক শিক্ষায় যেসব নীতি অনুসৃত হয়, তার মধ্যে অনেকগুলি নীতিই হান্টার কমিশনের সুপারিশে অন্তর্ভুক্ত ছিল।


উড-এর ডেসপ্যাচের পটভূমি আলােচনা করাে।


উড-এর ডেসপ্যাচের বৈশিষ্ট্য ও সুপারিশগুলি লেখাে।


উড-এর ডেসপ্যাচ বা উড-এর প্রতিবেদন কী? উড-এর ডেসপ্যাচের গুরুত্ব ও তাৎপর্য লেখাে।


প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে।


মাধ্যমিক শিক্ষা প্রসঙ্গে হান্টার কমিশনের সুপারিশসমূহ লেখাে।


উচ্চশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে এবং ওই সুপারিশগুলি মূল্যায়ন করাে।


হান্টার কমিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখাে। হান্টার কমিশনের সাধারণ সুপারিশগুলি লেখাে।