বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার যে-কোনাে একটি প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে আলােচনা করাে।

নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়

প্রাচীন ভারতে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়ার শ্রেষ্ঠ উচ্চশিক্ষার কেন্দ্র হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছিল। সর্বাধিক খ্যাতিঅর্জনকারী এই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানটি প্রকৃতপক্ষে ছিল একটি বৌদ্ধবিহার। নীচে এই উচ্চশিক্ষাকেন্দ্রটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেওয়া হল一


(১) অবস্থান: নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান ছিল বর্তমান বিহার রাজ্যের পাটনা শহরের রাজগিরের কাছে।


(২) প্রতিষ্ঠাকাল: খ্রিস্টীয় পঞ্চম শতকে গুপ্ত রাজাদের রাজত্বকালে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত হয়।


(৩) পরিকাঠামাে: প্রায় সাড়ে তিন বর্গমাইল জুড়ে অবস্থিত নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়টি চারদিকে সুউচ্চ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা ছিল। সেখানে কেন্দ্রীয় ভবনের লাগোয়া আটটি বৃহৎ অট্টালিকা এবং বারােটি ছাত্রাবাসের সন্ধানও পাওয়া গিয়েছে। সেখানে প্রায় দশ হাজার শিক্ষার্থী এবং এক হাজার শিক্ষক থাকার ব্যবস্থা ছিল।


(৪) আর্থিক সংস্থান: যতদূর জানা গেছে একশােটি গ্রামের রােজগার থেকে, দেশের বিত্তশালী ব্যক্তিদের দান থেকে এবং বিভিন্ন রাজার আর্থিক আনুকূল্যে নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যয়ভার নির্বাহ হত।


(৫) শিক্ষার্থীর ব্যয়: শিক্ষার্থীর কাছ থেকে কোনাে প্রকার বেতন নেওয়া হত না। থাকা, খাওয়া এবং পােশাক-পরিচ্ছদ সবই বিনামূল্যে সরবরাহ করা হত।


(৬) গণতান্ত্রিকতা: কঠিন প্রবেশিকা পরীক্ষার মাধ্যমে মেধার ভিত্তিতে ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব ধরনের ছাত্রকেই ভরতি করা হত। এটি ছিল মূলত স্নাতকোত্তর শিক্ষা।


(৭) পাঠক্রম: নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন, ন্যায়শাস্ত্র, শল্যবিদ্যা, চিকিৎসাবিদ্যা, আইন, ভাষাতত্ত্ব, যােগশাস্ত্র, চতুর্বেদ, বৌদ্ধশাস্ত্র, ব্যাকরণ, জ্যোতির্বিদ্যা প্রভৃতি বিষয়ে পাঠদান করা হত। তত্ত্বগত ও ব্যাবহারিক উভয় প্রকার শিক্ষার ব্যবস্থা ছিল।


(৮) শিক্ষাদান পদ্ধতি: নালন্দাতে আবৃত্তির মাধ্যমে শিক্ষাদান করা হত। এ ছাড়া আলােচনাচক্র, বিতর্ক প্রভৃতি মৌখিক উপায়ও অবলম্বন করা হত। শিক্ষাশেষে শিক্ষার্থীদের উপাধি দেওয়া হত।


(৯) গ্রন্থাগার: নালন্দাতে তিনটি বিশাল গ্রন্থাগার ছিল। তাদের নাম ছিল রত্নসাগর, রত্নদর্ধি এবং রত্নরজ্ঞক।


(১০) অধ্যাপকমণ্ডলী: বহু খ্যাতনামা অধ্যাপক সেখানে পাঠদান করতেন। তাঁদের মধ্যে শীলভদ্র, নাগার্জুন, ধর্মপাল, চন্দ্রপাল, গুণমতী প্রমুখ উল্লেখযােগ্য।


(১১) খ্যাতির বিস্তৃতি: নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয়ের খ্যাতি চিন, তিব্বত, কোরিয়া, জাভা, সুমাত্রা, সিংহল, যবদ্বীপ প্রভৃতি দেশে ছড়িয়ে পড়েছিল।


(১২) ধ্বংসকাল: মুসলিম সেনাপতি বখতিয়ার খলজির আক্রমণে ১১৯৩ খ্রিস্টাব্দ নাগাদ নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় ধ্বংস হয়।


নালন্দা বিশ্ববিদ্যালয় আন্তর্জাতিক দিক থেকেও গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্র হয়ে উঠেছিল। কেন্দ্রটির সুনাম দেশের বাইরে ছড়িয়ে পড়েছিল। মধ্য এশিয়া, তিব্বত, চিন, সিংহল-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে শিক্ষক ও ছাত্ররা এখানে আসতেন।


বৈদিক শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে

অথবা, গুরুকুল প্রথায় শিক্ষক-শিক্ষার্থী সম্পর্ক এবং পাঠদান পদ্ধতি সম্পর্কে আলোচনা করাে।


ব্রাহ্মণ্য যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার যে বৈশিষ্ট্যগুলি আধুনিক শিক্ষায় গ্রহণযােগ্য সেগুলি আলােচনা করাে।


মহাকাব্যের যুগের শিক্ষার বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে। ব্রাহ্মণ্য শিক্ষাব্যবস্থার যে-কোনাে দুটি অনুষ্ঠান ও তার গুরুত্ব উল্লেখ করাে।


বৈদিক যুগের শিক্ষাদান পদ্ধতির সঙ্গে তােমার পরিচিতি দাও। বৈদিক-ব্রাহ্মণ্য ও বৌদ্ধ শিক্ষার সাদৃশ্যগুলি উল্লেখ করাে।


বৌদ্ধ শিক্ষাব্যবস্থার মুখ্য বৈশিষ্ট্যগুলি লেখাে।


প্রাচীন ভারতের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষাকেন্দ্র হিসেবে তক্ষশিলা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।

অথবা, প্রাচীন ভারতের যে-কোনাে একটি শিক্ষাকেন্দ্রের শিক্ষাব্যবস্থার সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও