জনবসতি ও পরিবহণের মধ্যে সম্পর্ক | ভূপ্রকৃতি ও পরিবহণের সম্পর্ক

জনবসতি ও পরিবহণের মধ্যে সম্পর্ক

কোনাে অঞ্চলের জনবসতি, সেই অঞ্চলের প্রাকৃতিক ও সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সাংস্কৃতিক উপাদানগুলির মধ্যে পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে জনবসতির সম্পর্ক খুব নিবিড় হয়। প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে দেখা যায় যে কৃষিজমিকে কেন্দ্র করে গােষ্ঠীবদ্ধভাবে গ্রামীণ জনবসতিগুলি গড়ে উঠেছে। আর কৃষিজমির মধ্য দিয়ে মূলত কাঁচা পথ, পায়ে চলার পথ, গােযান পথ বিস্তৃত। তাই এই অঞ্চলের সমস্ত গ্রাম্যবসতি মূলত এইসব পরিবহণ পথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।


(১) সড়কপথ ও জনবসতি : মানচিত্রের পশ্চিম-মধ্য প্রান্ত থেকে উত্তর-পূর্ব সীমানা পর্যন্ত প্রায় 29 কিমি 6নং জাতীয় সড়ক বিস্তৃত এবং বিশল নামক স্থানে প্রায় 21 কিমি দীর্ঘ একটি রাজ্য সড়কপথ উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে এসে মিলিত হয়েছে। এইসব সড়কপথের স্থানে স্থানে বিক্ষিপ্তভাবে কিছু গােষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি গড়ে উঠেছে। জাতীয় সড়ককে কেন্দ্র করে পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে সাগােজালি, লুহাঘুটু, বিশল, দুধকুন্ডি হল একমাত্র জনবসতি। অন্যদিকে, রাজ্য সড়কপথের সঙ্গে কৃষিজমির সংযােগকারী বহু কাঁচা পথ, গােযান পথ ও পায়ে চলার পথের মিলন ঘটেছে। ফলে জাতীয় সড়কপথের তুলনার এই সড়কপথ বরাবর অনেক বেশি বসতি দেখা যায়, যেমন—পশ্চিম দিক থেকে জুডিয়া, ভালুজদি, বাকি, মধুপুর, ভুলবেদা, লুহাকানি, কুন্দুলিয়া ও পানপশি।


(২) কাঁচাপথ ও জনবসতি : কৃষিজমির মধ্যে দিয়ে বহু কাঁচাপথ বিস্তৃত হয়েছে। এই অঞ্চলের পশ্চিম-মধ্য ও উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলের মধ্য দিয়ে যেসব কাঁচাপথ গিয়েছে তাদের কেন্দ্র করে রৈখিকভাবে বিন্যস্ত বহু গােষ্ঠীবন্ধ জনবসতি গড়ে উঠেছে। এদের মধ্যে উল্লেখযােগ্য হল -দামুদিবেদা, বীজতলা, কাঘিয়া, একতলি, জোদাপাথারি, বানাকতি, আতনাবেদা, চরপানি, রাঙামাটিয়া, মশামারি, আশানা, ভাতছাতরা প্রভৃতি। দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্বের কাঁচাপথ বরাবর প্রধান জনপদগুলি হলকিটোবেদা, ব্রাহ্মণগাঁও, সরিষাপল, বেতাঝরণ, কুসুম প্রভৃতি।


(৩) অন্যান্য কাঁচাগথ ও জনবসতি : কৃষিজমির মধ্য দিয়ে অসংখ্য পায়ে চলার পথ ও গােযান পথের জালিকা তৈরি হয়েছে। এদেরকে কেন্দ্র করে অবিন্যস্ত বহু রৈখিক বসতি ও পিণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে উঠেছে। তবে মালভূমির বন্ধুর ও খাড়া ঢালের উঁচু অংশে পরিবহণ ব্যবস্থা না থাকায় ওইসব অঞ্চলে জনবসতি গড়ে ওঠেনি। ট্রানজেক্ট চার্টের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের পরিবহণ পথ ও জনবসতির একটি সম্পর্ক দেখানাে হল।


ভূপ্রকৃতি ও পরিবহণের সম্পর্ক


প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে দেখা যাচ্ছে যে, পরিবহণ ব্যবস্থা সর্বত্র সমান নয়। এই অঞ্চলে দুটি প্রধান সড়কপথ, কিছু কাঁচাপথ ও অসংখ্য পায়ে চলা পথ ও গাে-যান পথের বিন্যাস বা জালিকা তৈরি হয়েছে। বস্তুত, প্রদত্ত অঞ্চলের যােগাযােগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে সম্পূর্ণভাবে ভূপ্রকৃতি দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়ে। তাই ভূপ্রকৃতির সঙ্গে যােগাযােগ ব্যবস্থার এক নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। প্রদত্ত মানচিত্রে প্রদর্শিত অঞটিকে দুটি প্রধান ভূপ্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায়। যথা- (১) সমভূমি অঞ্চল ও (২) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি অঞ্চল। যােগাযােগ ও পরিবহণ ব্যবস্থার সঙ্গে এই দুই ভূপ্রাকৃতিক বিভাগের যে সম্পর্ক আছে তা নীচে উল্লেখ করা হল।


(১) নদীগঠিত সমভূমি ও পরিবহণ ব্যবস্থা : প্রদত্ত অঞ্চলে দুটি সমভূমি পৃথকভাবে অবস্থান করছে। সিমলিপাল উচ্চভূমির উত্তরে অবস্থিত সমভূমিটি সবচেয়ে বড়। এই অংশের ওপর দিয়ে প্রায় 29 কিমি দৈর্ঘ্যের 6 নং জাতীয় সড়ক পশ্চিম-মধ্য প্রান্ত থেকে উত্তর-পূর্ব প্রান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে। উত্তর-পশ্চিম প্রান্ত থেকে 21 কিমি দীর্ঘ একটি রাজ্য সড়ক দক্ষিণ-পূর্ব দিকে বিশল নামক স্থানে জাতীয় সড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। এই দুটি সড়কপথই এই অঞ্চলের প্রধান যােগাযােগ রক্ষাকারী পথ। এ ছাড়া, নাতিদীর্ঘ অনেক কাঁচাপথ এই দুই সড়কের সঙ্গে বিভিন্ন স্থানে মিলিত হয়েছে। অনেক পায়ে চলার পথ ও গােযান কাঁচাপথ সড়কপথের সঙ্গে মিলিত হয়ে প্রত্যন্ত গ্রামগুলির সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করেছে। এভাবে সমগ্র উত্তরে সমভূমির বিভিন্ন জনপদগুলির সঙ্গে পারস্পরিক যােগাযােগ সাধিত হয়। এই অংশে রাস্তার ঘনত্ব সব থেকে বেশি। শুঙ্ক ঋতুতে কোনাে কোনাে কাঁচাপথ ও পায়ে চলার পথ দিয়েও গাড়ি চলাচল করে।


দক্ষিণের সরু ফালির মতাে সমভূমিতে বুড়াবালঙ্গা নদীর দু-পাশ দিয়ে প্রায় সমান্তরালভাবে দুটি কাঁচাপথ দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিক পর্যন্ত প্রসারিত হয়েছে। শুষ্ক ঋতুতে এসব কাঁচাপথ দিয়ে গাড়ি চলাচল করে। সমভূমির এই অংশেও পায়ে চলা পথ ও গােযান পথ বিভিন্ন জনপদের সঙ্গে সংযােগ রক্ষা করছে।


(২) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ও পরিবহণ ব্যবস্থা : খাড়া ঢাল ও অত্যধিক বন্ধুরতার জন্য ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি অঞ্চলটিতে বিশেষ গড়ে ওঠেনি। বুড়াবালঙ্গা নদীগঠিত সমভূমির একটি কাঁচাপথ সিমলিপাল উচ্চভূমির দক্ষিণ-পশ্চিম অংশের পরিবহণ ব্যবস্থা ওপর দিয়ে অত্যন্ত এঁকে বেঁকে বন্ধুর মালভূমিকে অতিক্রম করে আরও দক্ষিণে 23 কিমি দূরে নােয়ানাে জনবসতির সঙ্গে সংযােগ রক্ষা করছে। এই পথটি দিয়ে শুষ্ক ঋতুতে যান চলাচল করে। এ ছাড়া, কয়েকটিমাত্র পায়ে চলার পথ সিমলিপাল উচ্চভূমির দক্ষিণের শাখাকে অতিক্রম করে দু-দিকের বসতিগুলির সঙ্গে যােগাযােগ রক্ষা করছে।


মানচিত্রের উত্তরাংশে মালভূমির মধ্যে বিক্ষিপ্তভাবে হ্যামলেট বসতিগুলি রয়েছে সেগুলি কেবলমাত্র পায়ে চলার পথের সঙ্গে যুক্ত। ট্রানজেক্ট চার্টের মাধ্যমে ভূপ্রকৃতির সঙ্গে পরিবহণের সম্পর্ক দেখানাে হল।


শ্রেণিসংখ্যা নির্ণয়ের পদ্ধতি | পরিসংখ্যা বিভাজনের গুরুত্ব | অন্তর্ভুক্তিকরণ পদ্ধতি | বর্জন পদ্ধতি | হিস্টোগ্রাম বা আয়তলেখের গুরুত্ব ও ব্যবহার


রাশিতথ্যের (Data) শ্রেণিবিভাগ আলােচনা করাে।


সারণি (Table)-র বিভিন্ন অংশগুলি উল্লেখ করাে। সারণি তৈরির গুরুত্বগুলি কী কী? কীভাবে একটি আদর্শ সারণি গঠন করা হয়?


রাশিতথ্যের (Data) সংজ্ঞা দাও এবং এর প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে প্রাথমিক (Prlmary) ও গৌণ (Secondary) রাশিতথ্যের প্রধান বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।


সমক্ষেত্রফলবিশিষ্ট বেলন অভিক্ষেপ (Cylindrical Equal-Area Projection) বলতে কী বােঝায় এবং এই অভিক্ষেপের নীতি আলােচনা করাে। এই অভিক্ষেপের গুণাগুণ বা ধর্ম এবং সীমাবদ্ধতাগুলি আলােচনা করাে।


মানচিত্র অভিক্ষেপ কাকে বলে? মানচিত্র অভিক্ষেপের বৈশিষ্ট্যগুলি আলােচনা করাে। মানচিত্র অভিক্ষেপ কেন অঙ্কন করা হয়?


ভূপ্রকৃতি ও জনবসতির সম্পর্ক।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)