কৃষিকাজ কাকে বলে? কৃষিকাজের ওপর পরিবেশের প্রভাব আলােচনা করাে।

কৃষিকাজ

কৃষিকাজ হল— মানুষের একটি অন্যতম প্রাথমিক অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপ। 'কৃষি' শব্দটি সংস্কৃত 'কৃষ' (কর্ষণ করা) ধাতু থেকে এসেছে। অন্যদিকে লাতিন শব্দ 'Ager' (Field বা ক্ষেত্র) থেকে Agriculture শব্দটির উদ্ভব হয়েছে। অধ্যাপক জিমারম্যান বলেছেন, জমিতে স্থায়ীভাবে বসবাস করে মানুষ যখন উদ্ভিদ ও প্রাণী জগতের স্বাভাবিক জন্ম ও বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে নিজের প্রয়ােজন মেটানাের জন্য উদ্ভিজ্জ ও প্রাণীজ দ্রব্যাদি উৎপাদন করে, তখন সেই উৎপাদন প্রক্রিয়াকে কৃষিকাজ বলে। শস্য উৎপাদন, পশুপালন, বনসৃজন, মৎস্যচাষ, পশম উৎপাদন প্রভৃতি কৃষিকাজের অন্তর্গত।


কৃষিকাজের ওপর পরিবেশের প্রভাব


কৃষিকাজের মূল উপকরণ উর্বর জমি হলেও কতকগুলি ভৌগােলিক উপাদান বা পরিবেশ বিভিন্ন কৃষি প্রণালী বা জমির কৃষিযােগ্যতাকে প্রবাবিত করে। যেমন一


(১) কৃষিকাজে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব


  • ভূপ্রকৃতি : ভূপ্রকৃতির তারতম্যের জন্য কৃষিকাজের ধরন পরিবর্তিত হয়। পার্বত্য অঞ্চলের ঢালু জমিতে কৃষিকাজ সহজে করা যায় না। তবে চা, কফির জন্য পাহাড়ের ঢালু জমিই উপযুক্ত। অন্যদিকে, সমভূমির উর্বর পলিমাটি কৃষিকাজের পক্ষে বিশেষ উপযােগী।


  • মৃত্তিকা : মাটির উর্বরা শক্তির ওপর ফসল উৎপাদন নির্ভর করে। মাটির নানারকম বৈশিষ্ট্যের ওপর ফসলের প্রকৃতি নির্ধারিত হয়। যেমন, কৃয় মৃত্তিকায় তুলাে, লােহা-মিশ্রিত মাটিতে চা ও কফির ফলন ভালাে হয়।


  • তাপমাত্রা : গাছপালার স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য কমপক্ষে 6°সে. উয়তা প্রয়ােজন। এ ছাড়া সব শস্য একই উয়তায় জন্মায় না। তাই বিভিন্ন ফসলের জন্য বিভিন্ন রকম তাপমাত্রার প্রয়ােজন হয়। যেমন—গম চাষের জন্য বার্ষিক 14°সে. থেকে 16°সে. তাপমাত্রা আদর্শ অথবা চা চাষের ক্ষেত্রে 27°সে. উত্তাপ আদর্শ।


  • অধঃক্ষেপণ : বৃষ্টিপাতের বণ্টন ও পরিমাণ কৃষিকাজকে প্রভাবিত করে। পর্যাপ্ত পরিমাণে বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে আর্দ্র কৃষি, কম বৃষ্টিপাত অঞ্চলে সেচ কৃষি কিংবা শুষ্ক অঞ্চলে শুষ্ক কৃষি প্রচলিত। বাতাসের আদ্রর্তাকে কাজে লাগিয়ে শুষ্ক অঞ্চলে নানা রকমের ফসল ফলানাে হয়। 100 সেমি থেকে 200 সেমি বৃষ্টিপাত ধান ও পাট চাষের অনুকূল, যা আর্দ্র কৃষিতে হয়ে থাকে।


  • বায়ুপ্রবাহ : স্বাভাবিক বায়ুপ্রবাহ ফসল উৎপাদনের সহায়ক হয়। সমুদ্রের নােনা হাওয়ায় নারকেল, কফি, কাজুবাদাম প্রভৃতি বাগিচা ফসলের চাষ ভালাে হয়।


  • জীবজন্তু : কেঁচো, ইঁদুর প্রভৃতি প্রাণী নীচের মাটিকে ওপরে তুলে দেয়। ফলে জমি উর্বর হয়, যা ফসল উৎপাদনে সাহায্য করে। বর্তমানে রাসায়নিক বা অজৈব সার প্রয়ােগ না করে এধরনের উপকারী প্রাণীর সাহায্যে মাটির উর্বরতা বাড়ানাে হচ্ছে।


(২) কৃষিকাজে অর্থনৈতিক পরিবেশের প্রভাব


  • শ্রমিক ও কৃষি যন্ত্রপাতি : শ্রমিকের পর্যাপ্ত সরবরাহের ওপর কৃষি পদ্ধতি গড়ে ওঠে। যেমন, ক্রান্তীয় মৌসুমি অঞ্চল ঘন জনবসতিপূর্ণ হওয়ায় শ্রমিকের পর্যাপ্ত জোগান থাকায় বাগিচা কৃষি, নিবিড় কৃষি প্রচলিত। অন্যদিকে, নাতিশীতােয় অঞ্চলে শ্রমিকের অভাব থাকায় কৃষিকাজ সম্পূর্ণ যন্ত্রনির্ভর। এই অঞ্চলের দেশগুলিতে ব্যাপক ও বাণিজ্যিক কৃষি পদ্ধতি প্রচলিত।


  • জলসেচ ও সার : বর্তমানে ব্যাপক জলসেচ ও রাসায়নিক সার প্রয়ােগে নিবিড় ও বাণিজ্যিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ হয়ে থাকে। প্রধানত খাদ্যশস্যের চাহিদা মেটাতে উচ্চফলনশীল বীজ ব্যবহার করে নিবিড় প্রথায় ধান, গম ও বিভিন্ন খাদ্যশস্য উৎপাদন করা হয়। বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে শহরতলি অংশে বাগান বাগিচায় শাকসবজি, ফলমূল ইত্যাদি উৎপাদন করা হয়।


  • চাহিদা : মানুষের চাহিদার ওপর কৃষিজ ফসল উৎপাদনের ধারা নির্ভর করে। এ ছাড়া বাজারে কৃষিপণ্যের দাম ওঠা-নামার ওপর ফসল উৎপাদন নির্ভর করে। এই দুয়ের প্রভাব উদ্যান কৃষি ও দোহ কৃষিতে লক্ষ করা যায়।


প্রাথমিক ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক কার্যাবলি ও দ্বিতীয় ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক কার্যাবলির মধ্যে পার্থক্য নির্দেশ করাে।


পঞ্চম ক্ষেত্রের অর্থনৈতিক কার্যাবলি বলতে কী বােঝ? তৃতীয় বা সেবাক্ষেত্রের বিভিন্ন কাজের উপাদান বা স্তরগুলি আলােচনা করাে।


কোয়াটারনারি (চতুর্থ ক্ষেত্রের কার্যাবলি) ও কুইনারি (পঞ্চম ক্ষেত্রের কার্যাবলি) অর্থনৈতিক ক্রিয়াকলাপের মধ্যে পার্থক্য লেখাে। আউটসাের্সিং কী?


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)