ঘূর্ণবাতের চক্ষু কাকে বলে? ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােয় ঘূর্ণবাতের পার্থক্য নিরূপণ করাে।
ঘূর্ণবাতের চক্ষু
শক্তিশালী ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে এক গতিহীন, শান্ত প্রায় মেঘশূন্য অবস্থা বিরাজ করে। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বা ঝড়ের চক্ষু বলে। এর ব্যাস প্রায় 10 কিমি থেকে 20 কিমি বিস্তৃত। ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের চক্ষুর চারদিকে নিথােস্ট্রাটাস মেঘের আস্তরণ থাকে। একে ঝড়ের চক্ষু প্রাচীর (Eye Wall) বলে।
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত ও নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের তুলনা
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত
ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সাধারণত উভয় গােলার্ধে 5° -20° অক্ষরেখার মধ্যে সংঘটিত হয়।
অপেক্ষাকৃত ছােটো। অনেক ধরনের ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। যাদের ব্যাস 100 মি (টর্নেডাে) থেকে সর্বাধিক 700 কিমি পর্যন্ত হয়। উল্লম্ব গভীরতা বেশি হয়।
সমচাপ রেখাগুলি এককেন্দ্রিক, বৃত্তকার, ঘনসন্নিবিষ্ট। সমপ্রেষ রেখাগুলি সমদূরত্বে অবস্থান করে। ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে শান্ত অবস্থা বিরাজ করে। একে ঘূর্ণবাতের চক্ষু বলে।
সমুদ্রের ওপর সৃষ্টি হয়।
উৎপত্তিস্থল গ্রীষ্মকাল ও শরৎকাল।
ঘনীভবনের ফলে উৎপন্ন লীনতাপ থেকে ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত শক্তি সঞ্চয় করে।
বাতাসের গতিবেগ ঘণ্টায় 40 কিমি থেকে 400 কিমি।
বায়ুর চাপটাল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। সাধারণত ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত জলভাগ থেকে স্থলভাগের দিকে অগ্রসর হয়।
স্বল্পক্ষণ স্থায়ী।
বিধ্বংসী প্রকৃতির।
আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়। ঘূর্ণবাত চলাকালীন বায়ুর উয়তা কম থাকে।
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত
নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত উভয় গােলার্ধে 35° -65° অক্ষরেখার মধ্যে সংঘটিত হয়।
অপেক্ষাকৃত বড়াে। ব্যাস 200 কিমি থেকে সর্বাধিক 3,000 কিমি পর্যন্ত হয়। উল্লম্ব গভীরতা ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত অপেক্ষা কম।
সমচাপ রেখাগুলি ‘v আকৃতির, সমদূরত্বে অবস্থান করে না। উয় ও শীতল সীমান্ত অবস্থান করে। এই ঘূর্ণবাতে ঝড়ের কোনাে চক্ষু থাকে না।
অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থলভাগের ওপর সৃষ্টি হয়।
উৎপত্তিকাল প্রধানত শীতকাল।
উষ্ণ বায়ুপুঞ্জ থেকে লন্ধ তাপই নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের শক্তির উৎস।
বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় মাত্র 30 কিমি থেকে 35 কিমি।
এই ঘূর্ণবাত পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে ভ্রমণ করে। চলার পথ নির্দিষ্ট ও দীর্ঘ।
দীর্ঘ সময় স্থায়ী হয়।
বিধ্বংসী প্রকৃতির নয়।
কয়েকদিন ধরে আকাশ মেঘে ঢাকা থাকে। অনেকদিন ধরে হালকা বৃষ্টি হয়। কোনাে কোনাে। স্থানে বৃষ্টিপাতের সঙ্গে তুষারপাত হয়।