নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ও গঠন বর্ণনা করাে | মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ও গঠন বর্ণনা করাে।

নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি

নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 35° থেকে 65° অক্ষরেখার মধ্যে দুই বিপরীতধর্মী বায়ুর মিলনের ফলে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। এই ঘূর্ণবাতের জন্ম-সংক্রান্ত যে দুটি তত্ত্ব প্রচলিত আছে তা হল- [1] মেরু বাতাগ্র বা মেরু সীমান্ত মতবাদ এবং [2] ব্যারােক্লিনিক তরঙ্গ মতবাদ।


নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের ব্যাখ্যায় ভি. বার্কনেস ও জে, বার্কনেসের প্রবর্তিত মেরু বাতাগ্র মতবাদ অধিক গ্রহণযােগ্য। এই তত্ত্বের মূল বক্তব্য হল— উপক্ৰান্তীয় বলয় থেকে উয় আর্দ্র পশ্চিমা বায়ু ও মেরু অঞ্চলের শুঙ্কশীতল মেরু বায়ুর মিলনের ফলে মধ্য অক্ষাংশীয় অঞ্চলে নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয় আবহাওয়াবিদগণ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তিকে এটি পর্যায়ে ব্যাখ্যা করেছেন। ক্রমিক শৃঙ্খলে আবদ্ধ এই এটি পর্যায়কে ঘূর্ণবাতের জীবনচক্র বলে। পর্যায়গুলি হল一


(1) প্রারম্ভিক পর্যায় : এই পর্যায়ে মেরু অঞ্চলের ভারী শুষ্ক ও শীতল বায়ুপুঞ্জ এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে আগত হালকা, উয় ও আর্দ্র বায়ুপুঞ্জ নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে এসে মিলিত হয়। ফলে এই অঞ্চলে একটি সীমান্ত বা বায়ুপ্রচৗীর সৃষ্টি হয়। মেরু বায়ু পূর্ব থেকে পশ্চিমে এবং উপক্রান্তীয় অঞ্চলের পশ্চিমা বায়ু পশ্চিম থেকে পূর্বদিকে প্রবাহিত হয়। এই পর্যায়ে সীমান্ত প্রায় স্থির থাকে। বাতাসের কোনাে স্থানান্তর ঘটে না।


(2) জন্মলাভ পর্যায়ে : এই পর্যায়ে সীমান্ত বরাবর তরঙ্গের সৃষ্টি হয়। বায়ুর চাপ ঢালের পার্থক্যের কারণে শীতল বায়ুপুঞ্জ উয় বায়ুপুঞ্জের মধ্যে প্রবেশ করে শীতল সীমান্ত সৃষ্টি করে। ফলে উয় বায়ুপুঞ্জ সংকুচিত হয় এবং শীতল বায়ুপুঞ্জকে সরিয়ে উয় সীমান্ত সৃষ্টি হয়। এই অবস্থায় দুই সীমান্তের মিলন বিন্দুতে একটি তরঙ্গশীর্ষ সৃষ্টি হয়। এইভাবে ঘূর্ণবাত জন্মলাভ করে।


(3) পরিণত পর্যায় : এই পর্যায়ে সীমান্ত বরাবর তীব্র আলােড়ন শুরু হয়। এই সময়ে শীতল বায়ু মাটি ঘেঁসে উয় বায়ুকে দ্রুত হারে সরাতে থাকে এবং উয় বায়ু সংকুচিত হয়ে শীতল বায়ুপুঞ্জের দিকে অগ্রসর হয়। উয় বাতাস শীতল ও ভারী বাতাসকে সরিয়ে এগােতে পারে না। তাই উয় বাতাস শীতল বাতাসের সঙ্গে একটি তির্যক তল সৃষ্টি করে শীতল বাতাসের ওপর দ্রুত উঠতে থাকে এবং ধীরে ধীরে শীতল বায়ুপুঞ্জকে সরাতে থাকে। এই পর্যায়ে তরঙ্গের বিস্তার ও বক্রতা বৃদ্ধি পায় এবং ঘূর্ণবাত পরিণতি লাভ করে। উয় বায়ু শীতল বায়ুপুঞ্জের ওপরে উঠে শীতল ও ঘনীভূত হয়। ফলে ওই অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। এই পর্যায়ের শেষে শীতল সীমান্ত উয় সীমান্তকে এদের শীর্ষবিন্দুর কাছে ধরে ফেলে। ফলে এই সময় থেকেই বন্ধ সীমান্ত বা অন্তর্লীন পর্যায় শুরু হয়।


(4) অন্তলীন পর্যায় : এই পর্যায়ে শীতল সীমান্ত উয় সীমান্তকে অতিক্রম করে। ফলে শীতল বায়ুপুঞ্জ উয় ক্ষেত্রের বায়ুপুঞ্জকে ঠেলে শীতল বায়ুপুঞ্জের ওপরে তুলে দেয়। উয় বায়ুপুঞ্জের সঙ্গে ভূপৃষ্ঠের আর কোনাে সংযােগ থাকে না। সমগ্র অঞ্চল শীতল বায়ুর দখলে আসে। ওই সময়ে কেবলমাত্র শীতল বায়ুর মৃদু আবর্তন লক্ষ করা যায়। ভূপৃষ্ঠ থেকে তাপ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় ঘূর্ণবাতের পরিসমাপ্তি ঘটে।


নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাতের পঠন


(১) গড় ব্যাস 200 কিমি থেকে 3,000 কিমি। উল্লম্ব গভীরতা ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাত অপেক্ষা কম।

(২) বাতাসের গড় গতিবেগ ঘণ্টায় 30 কিমি - 50 কিমি।

(৩) নাতিশীতোষ্ণ ঘুর্ণবাতগুলি উপবৃত্তকার, ডিম্বাকার ও ‘v' আকৃতিবিশিষ্ট।

(৪) নাতিশীতোষ্ণ ঘূর্ণবাত উয় ও শীতল সীমান্ত বরাবর সৃষ্টি হয়।

(৫) এইরূপ ঘূর্ণবাতে শীতল বায়ু-সমৃদ্ধ শীতল ক্ষেত্র এবং উয় বায়ু-সমৃদ্ধ উয় ক্ষেত্র বর্তমান।

মুক্তিকার ক্ষয় ও মৃত্তিকার অবনমনের মধ্যে পার্থক্য লেখাে। মৃত্তিকার অবনমনের প্রক্রিয়াসমূহ উল্লেখ করাে। আবহবিকারের সঙ্গে মাটির উৎপত্তির সম্পর্ক আলােচনা করাে।


ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাগ করাে এবং তাদের বৈশিষ্ট্য লেখাে।


ক্রান্তীয় ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ও গঠন ব্যাখ্যা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)