মুক্তিকার ক্ষয় ও মৃত্তিকার অবনমনের মধ্যে পার্থক্য লেখাে। মৃত্তিকার অবনমনের প্রক্রিয়াসমূহ উল্লেখ করাে | আবহবিকারের সঙ্গে মাটির উৎপত্তির সম্পর্ক আলােচনা করাে।
মৃত্তিকার ক্ষয় ও মৃত্তিকা অবনমনের মধ্যে পার্থক্য
মৃত্তিকার ক্ষয় :
প্রাকৃতিক ও মনুষ্যসৃষ্ট কারণে মৃত্তিকার কণাসমূহের স্থানান্তরণকে মৃত্তিকা ক্ষয় বলে।
মৃত্তিকা ক্ষয় মৃত্তিকার অবনমনের ওপর নির্ভর করে না।
অপেক্ষাকৃত দ্রুত ঘটে।
রিল, গালি, শিট ক্ষয় ইত্যাদি মৃত্তিকা ক্ষয়ের প্রক্রিয়া।
চোখে দেখে সহজে বােঝা যায়।
নিয়ন্ত্রণ করা অপেক্ষাকৃত সহজ।
মৃত্তিকার অবনমন :
প্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণে মৃত্তিকার গুণগত মানের হ্রাস ঘটলে তাকে মৃত্তিকার অবনমন বলে।
মৃত্তিকার অবনমন মৃত্তিকা ক্ষয়ের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করে।
অপেক্ষাকৃত ধীর গতিতে ঘটে।
অম্লত্ব, ক্ষরকীয়তা, লবণতা ও খনিজ পদার্থের হ্রাসবৃদ্ধি মৃত্তিকা অবনমনের প্রক্রিয়া।
কেবলমাত্র পরীক্ষানিরীক্ষার মাধ্যমে বােঝা যায়।
নিয়ন্ত্রণ করা অপেক্ষাকৃত কঠিন।
মৃত্তিকার অবনমনের প্রক্রিয়াসমূহ
[1] উর্বরতা হ্রাস : রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের অতিরিক্ত ব্যবহারের ফলে বা ভূমি দীর্ঘদিন অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে থাকলে জমির উর্বরতা হ্রাস পায়।
[2] ক্ষারত্ব বৃদ্ধি : বিভিন্ন কারণ যেমন—খনি বা শিল্প কারখানার নিষ্কাশিত সােডিয়ামযুক্ত বর্জ্য পদার্থ মিশ্রিত হওয়ার ফলে মৃত্তিকায় অন্যান্য লবণের তুলনায় সােডিয়াম আয়নের পরিমাণ বেশি হয়ে গেলে মৃত্তিকার ক্ষারকীয়তা বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্তিকার অবনমন ঘটে।
[3] অম্লত্ব বৃদ্ধি : অম্লবৃষ্টি ও অন্যান্য কারণে মৃত্তিকা অন্নধর্মী হয়ে পড়ে।
[4] লবণতা বৃদ্ধি : ভৌমজলের অতিরিক্ত উত্তোলন ও কৃষিক্ষেত্রে লবণাক্ত জলের অনুপ্রবেশ ঘটলে মৃত্তিকায় লবণতা বৃদ্ধি পেয়ে মৃত্তিকার অবনমন ঘটে।
আবহবিকারের সঙ্গে মাটির উৎপত্তির সম্পর্ক
মাটির উৎপত্তিতে আবহবিকারের অবদান সর্বাধিক। কারণ যান্ত্রিক, রাসায়নিক ও জৈবিক আবহবিকারের ফলে আদি শিলা চূর্ণবিচূর্ণ ও বিয়ােজিত হয়ে মৃত্তিকা গঠন করে। আবহবিকারের ফলে প্রথম পর্বে রেগােলিথ সৃষ্টি হয়। মাটি গঠন প্রক্রিয়া পরবর্তী পর্যায়ে অর্থাৎ দ্বিতীয় পর্বে শুরু হয়। এই পর্বে হিউমিফিকেশন প্রক্রিয়ায় জীবাণুকুল মৃত উদ্ভিদ ও প্রাণীর দেহাবশেষকে পচন ক্রিয়ার মাধ্যমে হিউমাসে পরিণত করে। হিউমাস গঠনের সঙ্গে সঙ্গে খনিজকরণ প্রক্রিয়ায় জৈব-রাসায়নিক পদ্ধতিতে হিউমাস ও আবহবিকারজাত পদার্থ একত্রে নতুন খনিজের সৃষ্টি করে। এই দুটি প্রক্রিয়া চলাকালীন মাটির উপরিস্তর থেকে এলুভিয়েশন (Eluviation) পদ্ধতিতে দ্রবীভূত খনিজ ও অদ্রবীভূত মুক্ত মৌল মাটির নীচের স্তরে স্থানান্তরিত হয় এবং নিম্ন স্তরে ইলুভিয়েশন (Iluviation) প্রক্রিয়ায় ওইসব পদার্থ আবদ্ধ হয়। এভাবে আবহবিকার ও মাটির গঠন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মাটি গঠিত হয়।