ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান নির্দেশ করাে। এই জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুঙ্ক ও শীতকাল আর্দ্র হয় কেন?

ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান

পৃথিবীর উভয় গােলার্ধে নাতিশীতােয়মণ্ডলে অবস্থিত মহাদেশগুলির পশ্চিমাংশে একপ্রকার শুষ্ক গ্রীষ্ম ও আর্দ্র শীতসম্পন্ন জলবায়ু দেখা যায়। পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে এই প্রকার জলবায়ু দেখা গেলেও ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলিতে এই জলবায়ুর প্রভাব ও বিস্তার সর্বাধিক বলে একে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বলে। এই জলবায়ুর অবস্থান হল-


অক্ষাংশগত অবস্থান : ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চল পৃথিবীর উভয় গােলার্ধে মহাদেশগুলির পশ্চিম প্রান্তে 30° থেকে 45° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশের মধ্যে বিস্তৃত।


মহাদেশীয় অবস্থান : ভূমধ্যসাগরের পার্শ্ববর্তী ইউরােপ, আফ্রিকা ও এশিয়া মহাদেশে এই জলবায়ুর বিস্তার ও প্রাধান্য বেশি হলেও উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা এবং ওশিয়ানিয়া মহাদেশেও এই জলবায়ু লক্ষ করা যায়।


  • ইউরােপ মহাদেশ : ভূমধ্যসাগরের উত্তর উপকূলে ইউরােপের পাের্তুগাল, স্পেন, ফ্রান্স, ইতালি, বসনিয়া-হার্জেগােভিনা, যুগােস্লাভিয়া, গ্রিস, আলবানিয়া প্রভৃতি দেশে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু বিরাজ করে।


  • আফ্রিকা মহাদেশ : ভূমধ্যসাগরের দক্ষিণ উপকূলে আফ্রিকা মহাদেশের মিশর, লিবিয়া, টিউনিশিয়া, আলজিরিয়া, মরক্কো প্রভৃতি দেশে এবং দক্ষিণ আফ্রিকার কেপটাউন অঞ্চলে এই জলবায়ু বিরাজ করে।


  • এশিয়া মহাদেশ : ভূমধ্যসাগরের পূর্ব উপকূলে অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের তুরস্ক, লেবানন, ইজরাইল ও সাইপ্রাসে এই জলবায়ুর প্রাধান্য লক্ষ করা যায়।


  • উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকা মহাদেশ : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিম উপকূলে ক্যালিফোর্নিয়ার মধ্য ও দক্ষিণ অংশে এবং দক্ষিণ আমেরিকার চিলির মধ্য অংশ এই জলবায়ুর অন্তর্গত।


  • ওশিয়ানিয়া মহাদেশ : এই মহাদেশের অন্তর্গত অস্ট্রেলিয়ার দক্ষিণ উপকূল বরাবর এই দেশের দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিম অংশে এই জলবায়ু বিরাজ করে।


ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞলে গ্রীষ্মকাল শুষ্ক এবং শীতকাল আর্দ্র হওয়ার কারণ


গ্রীষ্মকাল শুষ্ক হওয়ার কারণ : ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুঙ্ক থাকে। এর কারণ হল-সূর্যের উত্তরায়ণের সঙ্গে সঙ্গে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয় কয়েক ডিগ্রি উত্তরে সরে গিয়ে ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের ওপর অবস্থান করে। এই সময় নিরক্ষীয় অঞ্চলের উধ্বমুখী বায়ু ওই অঞ্চলেই পরিচলন পদ্ধতিতে প্রচুর পরিমাণে বৃষ্টিপাত ঘটিয়ে উত্তর ও দক্ষিণ দিকে বিক্ষিপ্ত হয়। এইরূপ শুষ্ক বায়ু উপক্রান্তীয় অঞ্চলে পৌঁছে শীতল ও ভারী হয়ে ওই অঞ্চলে নামতে থাকে। ওই সময়ের মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের বিক্ষিপ্ত বায়ুও উপক্ৰান্তীয় অঞ্চলে নামতে থাকে। ফলে ওই অঞ্চলের বায়ুর চাপ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে অ্যাডিয়াবেটিক পদ্ধতিতে বায়ু উয় হয়ে ওঠে এবং এর জলীয় বাষ্প ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যায়। তাই বৃষ্টিপাত হয় না, গ্রীষ্মকাল শুষ্ক থাকে। উত্তর গােলার্ধের অনুরূপ অবস্থা দক্ষিণ গােলার্ধেও হয়ে থাকে।


শীতকাল আর্দ্র হওয়ার কারণ : ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলে শীতকাল আর্দ্র হয়। এর কারণ হল—উত্তর গােলার্ধে শীতকালে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়গুলি কয়েক ডিগ্রি দক্ষিণে সরে যায়। ফলে ভূমধ্যসাগর ও তার পার্শ্ববর্তী দেশসমূহ পশ্চিমা বায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। ওই সময় মেরুপ্রদেশ থেকে আগত শীতল বায়ুপুঞ্জের সঙ্গে উয়-আর্দ্র পশ্চিমা বায়ুর সংঘর্ষে নাতিশীতােয় ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয়। ঘূর্ণবাতের ফলে শীতকালে ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলে প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে। ফলে আবহাওয়া আদ্র থাকে। উত্তর গােলার্ধের অনুরূপ অবস্থা দক্ষিণ গােলার্ধেও হয়ে থাকে।


জলবায়ু অঞ্চল বলতে কী বােঝ? জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্যগুলি উল্লেখ করাে।


নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান নির্দেশ করাে। নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলে নিয়মিত পরিচলন বৃষ্টিপাত ঘটে- কারণ ব্যাখ্যা করাে।


ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান নির্দেশ করাে। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র এবং শীতকাল শুষ্ক ব্যাখ্যা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)