প্রস্রবণ কাকে বলে? আর্টেজীয় কূপ কীভাবে সৃষ্টি হয় তা চিত্রসহযােগে বর্ণনা করাে।

প্রস্রবণ

ভূপৃষ্ঠের কোনাে অংশ দিয়ে ভূগর্ভস্থ জলের স্বাভাবিক নির্গমনকে প্রস্রবণ বলে। প্রস্রবণ প্রবহমান জলের স্রোতরূপে ভূপৃষ্ঠে আবির্ভূত হয়। ভূ-অভ্যন্তরে শিলার গঠন, সচ্ছিদ্রতা, প্রবেশ্যতা, পরিবাহিতা, জলের চাপ, ভূমির ঢাল, বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রভৃতি প্রস্রবণ সৃষ্টিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পশ্চিমবঙ্গের বক্রেশ্বর ও হিমাচল প্রদেশের মণিকরণ উয় প্রস্রবণের এবং দেরাদুনের সহস্রধারা ও অমরকণ্টকের সােনামুড়া শীতল প্রস্রবণের উদহারণ।


আর্টেজীয় কূপের সৃষ্টি

পাম্পের সাহায্য ছাড়াই যে কূপ থেকে ভৌমজল স্বতঃস্ফূর্তভাবে ফোয়ারার মতাে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে তাকে আর্টেজীয় বা আর্তেজীয় কূপ বলে। উত্তর-পূর্ব ফ্রান্সের আ্তোয়েস (Artois) অঞ্চলে 1126 খ্রিস্টাব্দে এই প্রকার কূপ প্রথম খনন করা হয় বলে, এই ধরনের কূপকে আর্তেজীয় কূপ বলে।


গঠন : আর্তেজীয় কূপ মূলত ভাজপ্রাপ্ত শিলার অধােভঙ্গে গঠিত হয়। ভাজের অধােভঙ্গ অংশে দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মাঝে একটি প্রবেশ্য শিলাস্তর অবস্থান করলে এবং প্রবেশ্য শিলাস্তরের মুখ ভূপৃষ্ঠে উন্মুক্ত হলে বৃষ্টির জল প্রবেশ্য শিলাস্তরে সঞ্চিত হয়ে আবদ্ধ জলবাহী স্তরে (অ্যাকুইফার) ভৌমজল ভাণ্ডার গড়ে ওঠে। এই জলবাহী স্তরের উন্মুক্ত জলতল অর্থাৎ জলচাপ তল অনেক উঁচুতে অবস্থান করলে এই জলস্তরের নীচের দিকে জলের উর্ধ্বমুখী চাপ অনেক বেশি থাকে। জলবাহী স্তরের এইরুপ অবস্থাকে আর্তেজীয় অবস্থা এবং ওই স্তরকে আর্তেজীয় স্তর বলে। জলের এই উর্ধ্বমুখী চাপের জন্য আর্তেজীয় স্তরের ওপরের অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের কোনাে দুর্বল অংশ দিয়ে কিংবা অপ্রবেশ্য স্তরের মধ্য দিয়ে কূপ খনন করলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভৌমজল ফোয়ারার মতাে ভূপৃষ্ঠে বেরিয়ে আসে। এভাবে আর্তেজীয় প্রস্রবণ গঠিত হয়। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার বীরসিংহ গ্রামে, ওডিশার বালেশ্বর জেলায় অনেক আর্তেজীয় কূপ আছে। রাজস্থানের উদয়পুর, আজমীর ও জয়পুর প্রভৃতি শহরের নীচে আর্তেজীয় স্তরের অস্তিত্ব থাকায় এখানে চিরস্থায়ী হ্রদের সৃষ্টি হয়েছে।


গঠনের শর্ত : অধােভঙ্গের আকারে দুই অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে প্রবেশ্য শিলাস্তরের অবস্থান আর্তেজীয় কূপ খননের প্রথম শর্ত। জলচাপ তল অবশ্যই কূপের উর্ধ্বে অবস্থান করবে। আবদ্ধ জলবাহী স্তরের প্রবেশ্য শিলাস্তরের প্রান্তভাগ অধিক বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে উন্মুক্ত থাকা প্রয়ােজন।