সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে জলবাহী স্তরের শ্রেণিবিভাগ করাে।

সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে জলবাহী স্তরের শ্রেণিবিভাগ

ভৌমজল বা উপপৃষ্ঠীয় জল অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপরে প্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে অবস্থান করে। ভূপৃষ্ঠে প্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপর থেকে নীচ পর্যন্ত সমগ্র অংশ জলবাহী স্তর বা অ্যাকুইফার নামে পরিচিত। সমস্ত শিলাস্তরই জলবাহী স্তর হিসেবে গণ্য হয় না। যে ভূতাত্ত্বিক স্তরের মধ্যে দিয়ে জল প্রবাহিত, ক্ষরিত ও পরিপূরিত হয় এবং ভৌমজলের ভাণ্ডাররূপে অবস্থান করে তাকে জলবাহী স্তর বা অ্যাকুইফার বলে। অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের ওপরে প্রবেশ্য শিলাস্তরে অ্যাকুইফার সৃষ্টি হলে তাকে উন্মুক্ত অ্যাকুইফার বলে। দুটি অপ্রবেশ্য শিলাস্তরের মধ্যে প্রবেশ্য শিলাস্তরে অ্যাকুইফার সৃষ্টি হলে তাকে আবদ্ধ অ্যাকুইফার বলে।


সম্পৃক্ততার ভিত্তিতে জলবাহী স্তরকে— [1] ফ্রিয়েটিক জলস্তর এবং [2] ভাদোস জলস্তর—এই দুটি প্রধান জলবাহী স্তরে ভাগ করা যায়।


ফ্রিয়েটিক জলস্তর


ভূ-অভ্যন্তরে মৃত্তিকা ও প্রবেশ্য শিলাস্তরের যে-অংশ জলে সম্পৃক্ত থাকে তাকে ফ্রিয়েটিক স্তর বলে। এই জলস্তর নীচের দিকে অপ্রবেশ্য শিলাস্তর পর্যন্ত বিস্তৃত। সম্পৃক্ত জলস্তরের পৃষ্ঠদেশকে ভৌমজলপীঠ বা ভৌমজলতল বলে। এই জলস্তর থেকে জল মানুষের তৈরি কূপে সঞ্চারিত হয় বলে এই জলবাহী স্তরকে ফ্রিয়েটিক স্তর বলে। জলপীঠের স্থায়িত্ব অনুযায়ী ফ্রিয়েটিক জলস্তরকে- (১) স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর এবং (২) সাময়িক সম্পৃক্ত স্তরে ভাগ করা হয়।


(১) স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর : যে জলপীঠের নীচে জলবাহী স্তর সারাবছর সম্পৃক্ত অবস্থায় থাকে এমনকি শুষ্ক ঋতুতেও জলস্তর জলপীঠের নীচে নামে না তাকে স্থায়ী সম্পৃক্ত স্তর বলে। এই স্তরের জলপীঠ অবনমিত ভূভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত হলে ভূপৃষ্ঠে হ্রদ ও জলাশয় সৃষ্টি হয়। নলকূপ সম্পৃক্ত স্তর পর্যন্ত বিস্তৃত হলে নলকূপে সারাবছর জল থাকে।


(২) সাময়িক সম্পৃক্ত স্তর : বর্ষাকালে বৃষ্টির ফলে ভৌমজলস্তরে জলের সরবরাহ বৃদ্ধি পেলে জলপীঠ ওপরের দিকে উঠে আসে। কিন্তু শুষ্ক ঋতুতে জলপীঠ নীচে নেমে যায়। জলপীঠের এইভাবে ওঠানামা সীমার মধ্যবর্তী অংশকে সাময়িক বা পরিবর্তনশীল সম্পৃক্ত স্তর বলে। নলকূপের গভীরতা সাময়িক সম্পৃক্ত স্তর পর্যন্ত প্রসারিত হলে শুষ্ক ঋতুতে নলকূপে জল পাওয়া যায় না।


ভাদোস জলস্তর


ভূপৃষ্ঠ থেকে জলপীঠ পর্যন্ত বিস্তৃত উপপৃষ্ঠীয় স্তরের যে-অংশ কখনাে সম্পৃক্ত হয় না, কেবল জল এই স্তরের মধ্য দিয়ে অভিকর্ষজ টানে নীচে সম্পৃক্ত স্তরে পৌঁছােয়, তাকে ভাদোস স্তর বলে। ভাদোস স্তর কখনও সম্পৃক্ত হয় না বলে এই স্তরকে অসম্পৃক্ত স্তর বলে। এই স্তরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত জলকে ভাদোস জল বলে। প্রকৃতিগত পার্থক্য অনুযায়ী ভাদোস স্তরকে তিনটি উপবিভাগে ভাগ করা যায়—(১) মৃত্তিকা জলস্তর, (২) কৈশিক স্তর এবং (৩) মধ্যবর্তী মৃত্তিকা বায়ুস্তর।


(১) মৃত্তিকা স্তর : এটি ভাদোস স্তরের একেবারে ওপরের অংশ। গাছের শিকড় মাটির নীচে যতদূর পর্যন্ত প্রবেশ করতে পারে। সেই গভীরতা পর্যন্ত বিস্তৃত ভাদোস স্তরকে মৃত্তিকা জলস্তর বলে। এর গভীরতা মাটির ধরন ও উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্যের ওপর নির্ভরশীল।


(২) কৈশিক স্তর : মৃত্তিকা রন্প্রগুলি চুলের মতাে সরু সরু নল দ্বারা পরস্পর যুক্ত থাকে। এদের কৈশিক নল বলে। পৃষ্ঠটান বাড়লে ভৌমজলপীঠ থেকে জল ওই নল বেয়ে ওপরের দিকে উঠে আসে এবং মাটির প্রতিটি কণাকে বেষ্টন করে তাদের গায়ে লেগে থাকে। একে কৈশিক জল বলে। এই স্তরে জল মাটির কণাকে বলয়রূপে ঘিরে রাখে বলে মৃত্তিকার এই স্তরকে কৈশিক স্তর বলে। এই স্তর ভাদোস স্তরের সর্বনিম্ন অংশ।


(৩) মধ্যবর্তী মৃত্তিকা বায়ুস্তর : মৃত্তিকা জলস্তর ও কৈশিক স্তরের মধ্যবর্তী অংশে এই স্তর বিস্তৃত। ভাদোস স্তরের এই অংশে মাটি ও জলের মধ্যে বায়ু আবদ্ধ অবস্থায় থাকে।