দৌলত কাজির জীবন ও কবিপ্রতিভার পরিচয় | বাংলা সাহিত্যে আরাকান রাজসভার অবদান | বাংলার ইতিহাসে আরাকান রাজসভার পরিচয়

কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যজীবনী কাব্যের সাধারণ পরিচয় দিয়ে কাব্যটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব আলােচনা করাে

শুধু চৈতন্যজীবনী কাব্য হিসেবে নয়, সমগ্র মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে কৃষ্ণদাস কবিরাজের চৈতন্যচরিতামৃত একটি উল্লেখযােগ্য গ্রন্থ। শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনকে তিনটি পর্বে ভাগ করে দেখাবার জন্য এই কাব্যকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে আদিলীলা, মধ্যলীলা এবং অন্ত্যলীলা। সতেরােটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত আদিলীলায় চৈতন্যদেবের বাল্যকাল থেকে সন্ন্যাসগ্রহণ পর্যন্ত প্রথম চব্বিশ বছরের কথা বর্ণিত হয়েছে। গ্রন্থের দ্বিতীয় ভাগ মধ্যলীলার ২৫টি পরিচ্ছেদে বর্ণনা করা হয়েছে সন্ন্যাসগ্রহণ, রাঢ় দেশে ভ্রমণ, রায় রামানন্দের সঙ্গে রসতত্ত্বের আলােচনা, দাক্ষিণাত্য ভ্রমণ এবং পরিশেষে নীলাচলে ফিরে আসা পর্যন্ত ছবছরের কথা। কুড়িটি পরিচ্ছেদে বিভক্ত অন্ত্যলীলায় চৈতন্যদেবের জীবনের শেষ আঠারাে বছরের বৃত্তান্ত বর্ণিত হয়েছে। এই গ্রন্থে বৈয়ব দর্শন, ভক্তি এবং কবিত্বের এক আশ্চর্য মিলন ঘটেছে। রাধাতত্ত্ব, কৃষ্ণতত্ত্ব, সখীতত্ত্ব ইত্যাদি অনেক জটিল বিষয়ের সহজসরল ব্যাখ্যাও পাওয়া যায় এখানে।


তিনটি পর্বে বিভক্ত ও আয়তনে বৃহৎ এই কাব্যটিতে একটি আশ্চর্য সংহতিও লক্ষ করা যায়। এই গ্রন্থের পদ্যভাষাতে উচ্চস্তরের দার্শনিক চিন্তা প্রকাশিত হয়েছে। পয়ার ত্রিপদীর বন্ধনের মধ্যেও কৃষ্ণদাস অত্যন্ত কৌশলে তাঁর কাব্যের পদ্যভাষায় গদ্যগুণ মিশিয়ে দিয়েছেন। নানাদিক থেকেই তাই এই মহাগ্রন্থ বাংলা ও বাঙালির গৌরবের বস্তু।


বাংলার ইতিহাসে আরাকান রাজসভার পরিচয় দাও

১৭৮২ খ্রিস্টাব্দের আগে পর্যন্ত আরাকান অঞ্চল (বর্তমানের দক্ষিণ মায়ানমার) ভারতেরই অন্তর্গত ছিল। বর্তমান বাংলাদেশের চট্টগ্রাম-সহ আরাকানে চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যভাগ থেকে অষ্টাদশ শতাব্দী অবধি বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগ উপজাতির রাজারাই রাজত্ব করতেন। আরাকান রাজ্যের মানুষজনও ছিলেন জাতিতে মগ, ধর্মে বৌদ্ধ। তবে প্রচুর বাঙালিও সেখানে বসবাস করায় বাংলা ভাষাও সেখানে জনপ্রিয় ছিল। আরাকানের সংস্কৃতি বেশ প্রাচীন। অষ্টম শতাব্দীতেই আরাকানে বৌদ্ধ ও ব্রাত্মণ্য সংস্কৃতি প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। আরাকানের রাজধানীর নাম রােসাঙ্। বাংলা সাহিত্য সংস্কৃতির ইতিহাসে রােসাঙ রাজসভার বিপুল অবদান রয়েছে।


চতুর্দশ শতাব্দী থেকেই আরাকান রাজ্য এবং বাংলার মধ্যে সাংস্কৃতিক যােগসূত্র স্থাপিত হয়েছিল। পঞ্চদশ শতাব্দীর সূচনায় বাংলার নবাব হুসেন শাহ চট্টগ্রাম জয় করলে যােগাযােগ আরও গভীর হয়। পঞ্চদশ শতাব্দীর শেষদিকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম বঙ্গসংস্কৃতির অন্যতম কেন্দ্রে পরিণত হয়। এরপর গৌড়ের সুলতানদের পতন শুরু হলে অনেক মুসলমান উজির-ওমরাহরাও বাংলার মূল অংশ থেকে শ্রীহট্ট ও চট্টগ্রামের দিকে চলে আসেন স্থায়ীভাবে বসবাস করতে। তাদের একটা অংশ আরাকানেও ঘাঁটি গাড়েন। এইসব বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে সুফি পিরদের প্রভাবে কাব্য ও সংগীতচর্চার অনুশীলন চলতে থাকে।


বাংলা সাহিত্যে আরাকান রাজসভার অবদান লেখাে

রােসাঙের রাজসভায় উপস্থিত শিক্ষিত মুসলমানদের আগ্রহেই গৌড়দরবারের অনুকরণে রােসাঙ রাজসভাতেও সপ্তদশ শতাব্দীতে বাংলা সাহিত্যের চর্চা শুরু হয়। আরাকান রাজ্যের মগ রাজাদের বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ছিল ঐকান্তিক আকর্ষণ। একারণেই আরাকানের রাজধানী রােসাঙে সপ্তদশ শতাব্দীতে অবাঙালি রাজা-সেনাপতি-মন্ত্রীদের পৃষ্ঠপােষকতায় বহু বাংলা বই রচিত হয়। মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্য ছিল দেবতা ও ধর্মকেন্দ্রিক। ধর্ম বা দেবতা-নিরপেক্ষ কোনাে চরিত্র বা আদর্শ সেখানে কখনােই প্রাধান্য লাভ করেনি। বৈয়ব সাহিত্য, মঙ্গলকাব্য, অনুবাদ-সাহিত্য-মধ্যযুগের এই প্রধান তিনপ্রকার সাহিত্যই তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। কিন্তু সপ্তদশ শতাব্দীতে আরাকানের রােসাঙ্ রাজসভাকে কেন্দ্র করে যে কবিগােষ্ঠীর আবির্ভাব ঘটেছিল, সেইসব মুসলমান কবির কাব্যগুলি মধ্যযুগের বাংলা সাহিত্যকে নবরূপ দান করেছিল। দেবতা নয়, মানব-মানবীর রােমান্টিক প্রেমকাহিনিই ছিল সেই সমস্ত কাব্যের মূল বিষয়। হিন্দু মুসলিম সংস্কৃতির মেলবন্ধনে সৃষ্ট এইসব কাব্যে ধর্মীয় প্রভাবমুক্ত মানবতার জয়গান ধ্বনিত হয়েছিল। তাই আরাকান রাজসভার মুসলমান কবিদের কাব্যরচনা বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসে এক তাৎপর্যপূর্ণ ঐতিহাসিক ঘটনা।


দৌলত কাজির জীবন ও কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও

দৌলত কাজির জীবনকথা: সপ্তদশ শতাব্দীতে আরাকান রাজসভার আশ্রয়ে রােমান্টিক প্রেম কাব্যের একটি বিশেষ ধারা গড়ে ওঠে। এই ধারার শ্রেষ্ঠ কবি দৌলত কাজি। এই সুফি কবির ব্যক্তিপরিচয় সম্পর্কে যেটুকু জানা গেছে তার ভিত্তিতে বলা যায়, তিনি চট্টগ্রামের রাউজান থানার অন্তর্গত সুলতানপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার জন্মকাল সম্ভবত যােড়শ শতাব্দীর শেষাংশ। অল্প বয়সেই কবি নানা বিদ্যায় পারদর্শী হয়ে ওঠেন। তিনি আরাকানের রাজা শ্রী সুধর্মার অমাত্য ও সেনাপতি আশরফ খানের পৃষ্ঠপােষকতা লাভ করেন। আশরফ খানের নির্দেশে তিনি মিয়া সাধনের হিন্দি কাব্য মইনা কা সত' অবলম্বনে লােরচন্দ্রানী বা সতী ময়না রচনায় হাত দেন। আনুমানিক ১৬২২ থেকে ১৬৩৮ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে লােরচন্দ্রানী বা ‘সতী ময়না’ কাব্যটি রচিত হয়। এই কাব্যের দুই-তৃতীয়াংশ রচনার পরই কবি মারা যান।


দৌলত কাজির কবিপ্রতিভা: দৌলত কাজির অসমাপ্ত কাব্যে তার কবি-প্রতিভার পরিচয় পাওয়া যায়। এটি নিছক অনুবাদ নয়; এতে কবির নিজস্বতাও আছে। এই কাব্য থেকে সংস্কৃত সাহিত্য এবং হিন্দুপুরাণে তার দক্ষতার প্রমাণ মেলে। তার ভাষাবােধ ও ছন্দজ্ঞান প্রখর। তিনিই প্রথম বাংলা কাব্যে ধর্মীয় মহিমা প্রচার না করে নরনারীর প্রেমপ্রীতির কথাকে গুরুত্ব দিয়েছেন। দৌলত কাজির কাব্যই বাংলা সাহিত্যে মধ্যযুগীয় দৈবনির্ভরতা থেকে মুক্তির প্রথম সার্থক দৃষ্টান্ত।


বাংলা সাহিত্যে 'ভাগবত' অনুবাদের ধারা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

ভারতচন্দ্রের বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থটির নাম ও রচনাকাল উল্লেখ করে সংক্ষেপে কবির জীবনকথা উল্লেখ করাে।

সংক্ষেপে ভারতচন্দ্রের রচনা ও কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও

মঙ্গলকাব্যের এরূপ নামকরণের কারণ উল্লেখ করে মঙ্গলকাব্য রচনার সামাজিক কারণ বর্ণনা করাে।


মঙ্গলকাব্যের সাধারণ বৈশিষ্ট্যগুলি সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

মনসামঙ্গল কাব্যের কাহিনি সংক্ষেপে লেখাে।

কবি কেতকাদাস ক্ষেমানন্দের জীবন ও কাব্য সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

মনসামঙ্গল কাব্যের যে-কোনাে দুজন প্রতিনিধি-স্থানীয় কবির কবি-প্রতিভার পরিচয় দাও।


'চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যের বণিক খণ্ডের কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখাে।

'চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যের শ্রেষ্ঠ কবির আত্মকাহিনির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

‘চণ্ডীমঙ্গল' কাব্যের আখেটিক খণ্ডের কাহিনিটি সংক্ষেপে লেখাে।

মুকুন্দরামের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।


কবি ঘনরাম চক্রবর্তীর জীবন ও কবি-প্রতিভা সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

ধর্মমঙ্গল কাব্যের কাহিনি সংক্ষেপে বর্ণনা করাে।

বাংলা মঙ্গলকাব্যের ধারায় শিবায়ন কাব্যটির গুরুত্ব আলােচনা করাে।

বিদ্যাপতি বাংলা ভাষায় কিছু লেখেননি, তবু তাকে বাংলা সাহিত্যের অন্তর্ভুক্ত করা হয় কেন?


কবি বিদ্যাপতির জীবন-পরিচয় দাও।

বিদ্যাপতির কবিপ্রতিভার সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

গােবিন্দদাসকে 'বিদ্যাপতির ভাবশিষ্য' বলা হয় কেন?

বাংলার বৈষ্ণব পদসাহিত্যে চণ্ডীদাসের অবদান সম্পর্কে আলােচনা করাে।


জ্ঞানদাসকে ‘চণ্ডীদাসের ভাবশিষ্য' বলার যৌক্তিকতা বিচার করাে।

বৈষ্ণব পদাবলির যে-কোনাে একজনের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

বৈষ্ণব পদকর্তা গােবিন্দদাসের কবিপ্রতিভার পরিচয় দাও।

প্রাকচৈতন্য এবং চৈতন্য-পরবর্তী যুগের বৈষ্ণব পদাবলির মধ্যে তুলনামূলক আলােচনা করাে।


বাংলা সাহিত্যে চৈতন্যদেবের প্রভাব আলােচনা করাে।

বাঙালির সমাজজীবনে চৈতন্যদেবের আবির্ভাবের গুরুত্ব আলােচনা করাে।

শ্রীচৈতন্যদেবের জীবনকাহিনি সংক্ষেপে লেখাে।

বৃন্দাবনদাসের চৈতন্যভাগবত গ্রন্থের সাধারণ পরিচয় দিয়ে কাব্যটির ঐতিহাসিক গুরুত্ব লেখাে।