কলম্বাে সম্মেলন (১৯৭৬ খ্রি.), হাভানা সম্মেলন (১৯৭৯ খ্রি.), নতুন দিল্লি সম্মেলন (১৯৮৩ খ্রি.) এবং হারারে সম্মেলনের (১৯৮৯ খ্রি.) ওপর সংক্ষিপ্ত আলােচনা করাে।

সূচনা: দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধোত্তর বিশ্বে পরস্পরবিরােধী দুই জোটকেন্দ্রিক (সােভিয়েত নেতৃত্বাধীন সাম্যবাদী জোট এবং মার্কিন নেতৃত্বাধীন পুঁজিবাদী জোট) রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ হিসেবে গড়ে ওঠে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলন। কয়েক বছর অন্তর একাধিক জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।


পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন


[1] কলম্বো সম্মেলন


  • আয়ােজন: ১৯৭৬ খ্রিস্টাব্দে শ্রীলঙ্কার রাজধানী কলম্বোয় অনুষ্ঠিত হয় জোটনিরপেক্ষ কলম্বো সম্মেলন। এই পঞ্চম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনটি শুরু হয় ১৬ আগস্ট এবং শেষ হয় ১৯ আগস্ট।


  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবৃন্দ: এই সম্মেলনে মােট ৮৬টি দেশ যােগ দিয়েছিল। এই সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন শ্রীলঙ্কার উইলিয়াম গােপাল্লাওয়া এবং জুনিয়াস রিচার্ড জয়াবর্ধনে।


  • গৃহীত সিদ্ধান্ত

    • দক্ষিণ আফ্রিকা এবং নামিবিয়ার মুক্তিসংগ্রামের সাহায্যার্থে একটি তহবিল গঠন।

    • জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের প্রসারে সুষ্ঠুভাবে গণমাধ্যমকে ব্যবহারের লক্ষ্যে একটি Press Agency Pool গঠনের সিদ্ধান্ত গ্রহণ।


  • গুরুত্ব: কলম্বাে সম্মেলনে নির্জোট সদস্যভুক্ত দেশগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার জন্য তাদের বিদেশনীতির মধ্যে সমন্বয়সাধনের ওপরে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়।


[2] হাভানা সম্মেলন


  • আয়ােজন: কিউবার রাজধানী হাভানা শহরে যন্ঠ জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনটি অনুষ্ঠিত হয় (৩ সেপ্টেম্বর ৯ সেপ্টেম্বর, ১৯৭৯ খ্রি.)।


  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃবৃন্দ: এই সম্মেলনে অংশগ্রহণ করে ৯৪টি দেশ। সম্মেলনে বিশেষ ভূমিকা পালন করেন কিউবার রাষ্ট্রপ্রধান ফিদেল কাস্ত্রো এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি নিলাম সঞ্জীবা রেড্ডি।


  • গৃহীত সিদ্ধান্ত

    • সম্মেলনে সদস্যভুক্ত দেশগুলির মধ্যে আর্থিক ও প্রযুক্তিগত সহযােগিতার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

    • সম্মেলনের চূড়ান্ত ঘােষণাপত্র দ্বারা জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের উদ্দেশ্য, নীতি ও সদস্যপদ লাভের শর্তাবলি ঘােষিত হয়।


  • গুরুত্ব: এই সম্মেলনে নির্জোট আন্দোলনভুক্ত দেশগুলির নিরাপত্তা রক্ষা ও অন্তর্বর্তী সমস্যাসমূহ শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।


[3] নতুন দিল্লি সম্মেলন


  • আয়ােজন: ভারতের রাজধানী নতুন দিল্লিতে সপ্তম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলনটি আয়ােজিত হয়। এই সম্মেলনটি প্রথমে বাগদাদে আয়ােজিত হওয়ার সিদ্ধান্ত হলেও ইরাক-ইরান যুদ্ধের কারণে তা দিল্লিতে আয়ােজিত হয় (৭ মার্চ- ১২ মার্চ, ১৯৮৩ খ্রি.)।


  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃত্ব: এই সম্মেলনে ৯৯টি দেশ যােগ দেয়। সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন ভারতের রাষ্ট্রপতি জৈল সিং। সম্মেলনে উপস্থিত নেতৃবর্গের মধ্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী শ্রীমতী ইন্দিরা গান্ধি নির্জোট আন্দোলনের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন। শ্রীমতী গান্ধি বলেন যে, নির্জোট আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য হল বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠা করা এবং উপনিবেশবাদের বিরােধিতা করা।


  • গৃহীত সিদ্ধান্ত: এই সম্মেলনে গৃহীত সিদ্ধান্তগুলি ছিল-

    • সার্বিক নিরস্ত্রীকরণ,

    • উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে সংগ্রাম,

    • বিশ্ব মানচিত্রে দক্ষিণের দেশগুলির মধ্যে সহযােগিতা স্থাপন,

    • পাশ্চাত্য দুনিয়ার ক্রমবর্ধমান অর্থনৈতিক আগ্রাসন রােধ প্রভৃতি।


  • গুরুত্ব: নতুন দিল্লি সম্মেলনে আণবিক অস্ত্র উৎপাদন ও তা মজুত করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণের ওপর গুরুত্ব আরােপ করা হয়।


[4] হারারে সম্মেলন


  • আয়ােজন: ১৯৮৬ খ্রিস্টাব্দের ১ সেপ্টেম্বর জিম্বাবােয়ের রাজধানী হারারেতে আয়ােজিত হয় অষ্টম জোটনিরপেক্ষ সম্মেলন। এই সম্মেলন চলে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত।


  • অংশগ্রহণকারী দেশ ও নেতৃত্ব: হারারে সম্মেলনে প্যালেস্টাইন সহ বিশ্বের ১০১ টি দেশ যােগ দেয়। হারারে সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন জিম্বাবােয়ের রাষ্ট্রপ্রধান রবার্ট মুগাবে।


  • গৃহীত সিদ্ধান্ত

    • ইরান-ইরাক যুদ্ধ, কাম্পুচিয়া এবং আফগানিস্তান সংকট প্রভৃতির সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ।

    • গ্যাট চুক্তির প্রশ্নে মুক্ত বাণিজ্যকে স্বাগত জানানাের সিদ্ধান্ত নেওয়া হলেও এক্ষেত্রে পক্ষপাতমূলক ভূমিকার দিকটি সম্পর্কেও সচেতন থাকতে বলা হয়।


  • গুরুত্ব: হারারে সম্মেলনে মহাকাশ যুদ্ধ বিষয়ক মার্কিন প্রশাসনের ক্রমবর্ধমান ভীতি প্রদর্শন বিষয়টির ওপর অধিক গুরুত্ব সহকারে আলােচনা করা হয়।