নেহরুর পঞ্চশীল নীতির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও | বান্দুং সম্মেলনের একটি সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

নেহরুর পঞ্চশীল নীতি

পরিচয়: ভারতের পররাষ্ট্রনীতির এক প্রধান অঙ্গ ছিল শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান। এই নীতি মেনেই ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে চিনের প্রধানমন্ত্রী চৌ- এন-লাই দ্বিতীয়বার ভারতে এলে ভারত ও চিনের মধ্যে পররাষ্ট্রনীতির ক্ষেত্রে যে পাঁচটি নীতি স্থির হয় (২৯ এপ্রিল) তা পঞ্চশীল নীতি নামে পরিচিত।


পঞ্চশীল নীতিসমূহ: প্রধানমন্ত্রী নেহরু বিশ্বশান্তি রক্ষার্থে সম্রাট অশােকের আদর্শ ও ঐতিহ্য অনুসারে যে পাঁচটি নীতি ঘােষণা করেছিলেন সেগুলিই পঞশীল নামে পরিচিত। এই নীতিগুলি ছিল


  • [i] দুইটি রাষ্ট্রের রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদাজ্ঞাপন। 

  • [ii] একে অপরকে আক্রমণ না করা। 

  • [iii] একে অপরের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। 

  • [iv] পরস্পরকে সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযােগিতা প্রদান। 

  • [v] গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান।


বান্দুং সম্মেলন


[1] পরিচয়: ১৯৫৫ সালের এপ্রিল মাসে এশিয়ার ১৪টি দেশ নিজেদের মধ্যে ঐক্য সুদৃঢ়করণে সাম্রাজ্যবাদ, উপনিবেশবাদ, বর্ণবৈষম্যের বিরুদ্ধে শপথ গ্রহণ করে। এরপর ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৯টি (৫টি পৃষ্ঠপােষক দেশ, যথা- বার্মা, সিংহল, ভারত, ইন্দোনেশিয়া ও পাকিস্তান এবং এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের ২৪ টি দেশ) দেশের প্রতিনিধিরা একজোট হয়ে এক জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনে মিলিত হন (১৯৫৫ খ্রি., ১৮-২৪ এপ্রিল) যা বান্দুং সম্মেলন নামে পরিচিত।


[2] উদ্দেশ্য: বান্দুং সম্মেলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল সােভিয়েত মার্কিন ঠান্ডা লড়াইয়ের প্রভাব থেকে মুক্ত থাকা।


[3] দশশীল নীতি: বান্দুং সম্মেলনে জওহরলাল নেহরুর পঞ্চশীল নীতি দশশীল নীতিতে পরিণত হয়। মনে করা হয় যে, এখানে গৃহীত ওই দশটি নীতিই বিশ্বে জোটনিরপেক্ষ আন্দোলনের সূত্রপাত করেছিল। ওই দশটি নীতি হলㅡ


  • [i] রাষ্ট্রীয় অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্বের প্রতি পারস্পরিক মর্যাদা জ্ঞাপন। 

  • [ii] কোনাে দেশের ভূখণ্ডগত অখণ্ডতা বা রাজনৈতিক স্বাধীনতার বিরুদ্ধে আগ্রাসনমূলক ক্রিয়াকলাপ বা আগ্রাসনের ভীতি প্রদর্শন বা বলপ্রয়ােগ না করা। 

  • [iii] কোনাে দেশের অভ্যন্তরীণ ব্যাপারে হস্তক্ষেপ না করা। 

  • [iv] সমমর্যাদা ও পারস্পরিক সহযােগিতা প্রদান করা। 

  • [v] গণতন্ত্র ও সাম্যবাদ নির্বিশেষে শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান আপস, আলাপ-আলােচনা বা মধ্যস্থতার মাধ্যমে সমস্ত বিরােধের মীমাংসা করা। 

  • [vi] মানবাধিকার ও জাতিপুঞ্জের সনদের উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যের প্রতি সম্মান প্রদর্শন। 

  • [vii] সমস্ত বর্ণ ও জাতির সমান অধিকারের স্বীকৃতি। 

  • [viii] সমস্ত জাতির আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকারের প্রতি মর্যাদা প্রদর্শন। 

  • [ix] কোনাে বৃহৎ শক্তির সামরিক স্বার্থরক্ষা করা থেকে বিরত হওয়া। 

  • [x] ন্যায়নীতি ও আন্তর্জাতিক দায়বদ্ধতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন।


[4] বান্দুং সম্মেলনের সাফল্য: 


  • [i] এই সম্মেলনে যােগদানকারী ২৯টি দেশ পরস্পরের সাথে পরিচিত হবার সুযােগ পায়। 

  • [ii] এই সম্মেলনে আফ্রো-এশীয় দেশগুলি নিজেদের মতগুলি একে অপরকে জানানাের, বােঝানাের সুযােগ পায়। 

  • [iii] এই সম্মেলনে জওহরলালের গৌরবজনক ভূমিকা, মিশরের গামাল আবদেল নাসেরের ভূমিকা এবং ইন্দোনেশিয় সুকর্ণর ইতিবাচক ভূমিকার ফলে জাতীয় নেতারূপে তাঁদের মর্যাদা বাড়ে। 

  • [iv] এই সম্মেলনে যােগদানকারী সদস্য রাষ্ট্রগুলি জাতিপুঞ্জের উদ্দেশ্যনীতির প্রতি পূর্ণ সমর্থন জানায়। 

  • [v] এশিয়া ও আফ্রিকা মহাদেশের সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া দেশগুলি একে অপরকে সহযােগিতা করার সুযােগ পায়।


[5] বান্দুং সম্মেলনের ব্যর্থতা:


  • [i] বিশ্বশান্তি নিয়ে এই সম্মেলনে আলােচনা হলেও এ ব্যাপারে কোনাে নতুন পথের সন্ধান মেলেনি। 

  • [ii] বিশ্বরাজনীতির সমস্যাগুলির কোনাে স্থায়ী সমাধান হয়নি। 

  • [iii] এই সম্মেলন থেকে কোনাে আন্তর্জাতিক স্থায়ী সংগঠন প্রতিষ্ঠার আভাস মেলেনি।