অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা/কার্যাবলি | ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব

অতীত পুনর্গঠনে জাদুঘরের ভূমিকা/কার্যাবলি

অতীতকালের সময়কে তুলে ধরার ক্ষেত্রে জাদুঘরগুলির গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। যেমন一


[1] ঐতিহাসিক সামগ্রী: জাদুঘরগুলিতে অতীতের বিভিন্ন সামগ্রী সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা হয়। এসব ঐতিহাসিক নিদর্শনগুলি বর্তমানকালের মানুষের সামনে অতীতের সেই মুহূর্তের জীবনধারা তুলে ধরার চেষ্টা করে।


[2] প্রতিকৃতি: অতীতের বিভিন্ন নিদর্শনের প্রতিকৃতি বা মডেল তৈরি করে তা সাধারণ মানুষের সামনে তুলে ধরার বিষয়ে জাদুঘরগুলি উদ্যোগ নেয়। অতীতের আসল নিদর্শন না দেখেও জাদুঘরের এই মডেলগুলির মাধ্যমে আমরা অতীতকে অনেকটা বুঝতে পারি।


[3] ইতিহাস-চেতনা: জাদুঘর ইতিহাস-বিষয়ক বিভিন্ন উদ্যোগের দ্বারা জনগণের মধ্যে ইতিহাস-চেতনা বৃদ্ধি করে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়—স্বাধীন বাংলাদেশে বিভিন্ন জাদুঘর দেখে দেশবাসীর মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস-চেতনা বৃদ্ধি পায়।


[4] গবেষণা: জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন নিদর্শনগুলি নিয়ে গবেষণার ফলে অতীতের বহু অজানা দিকের উন্মােচন ঘটতে পারে।


ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার গুরুত্ব


স্মৃতিকথা (Memories) হল ইতিহাস রচনার একটি অন্যতম মৌখিক উপাদান। কোনাে মানুষ অতীতের কোনাে ব্যক্তি, পরিবার বা কোনাে গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষ সাক্ষী হতে পারেন এবং সেই বিষয়ে তার কাছে অনেক তথ্য থাকতে পারে। সেই ব্যক্তি এই ঘটনাগুলি পরবর্তীকালে স্মরণে এনে তা লিখিত আকারে প্রকাশ করতে পারেন। এই লিখিত তথ্য স্মৃতিকথা নামে পরিচিত। ইতিহাস রচনায় স্মৃতিকথার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। যেমন—


[1] গুণীজনদের লেখা তথ্য: স্মৃতিকথাগুলি অধিকাংশ ক্ষেত্রেই বিভিন্ন শাখার গুণী ব্যক্তিরা রচনা করেন। ফলে তাতে অবান্তর, পক্ষপাতমূলক ও অতিরঞ্জিত ঘটনার প্রবেশ খুবই হ্রাস পায় বলে কেউ কেউ মনে করেন। অবশ্য এবিষয়ে বিতর্ক আছে।


[2] বাস্তবতা: স্মৃতিকথাগুলি কাল্পনিক বিষয় নয়। এগুলি থেকে অতীতের বিভিন্ন বাস্তব ঘটনার তথ্য ও বিবরণ পাওয়া যায়। ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার দাঙ্গার ঘটনাবলি বিভিন্ন ব্যক্তির স্মৃতিকথায় পাওয়া যায়।


[3] প্রত্যক্ষ সাক্ষী: বিভিন্ন ব্যক্তি বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বা প্রত্যক্ষ সাক্ষী হিসেবে ঘটনার বিবরণ তাদের স্মৃতিকথাগুলিতে আলােচনা করেন। ফলে উক্ত বিবরণে ঐতিহাসিক তথ্যের সত্যতা অনেক বেশি থাকে।


[4] ঐতিহাসিক উপাদান: বিভিন্ন স্মৃতিকথা বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনার মূল্যবান উপাদান হিসেবে কাজ করতে পারে। ১৯৭১ খ্রিস্টাব্দে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকবাহিনী পূর্ববঙ্গের সাধারণ মানুষের ওপর যে বর্বর ও নৃশংস অত্যাচার ও হত্যালীলা চালিয়েছিল তার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক উপাদান হল বিভিন্ন স্মৃতিকথাগুলি। কেননা, পাক সামরিক বাহিনী তখন পূর্ববাংলার সমস্ত সংবাদ গােটা বিশ্ব থেকে আড়াল করেছিল।