জাদুঘরের প্রকারভেদ উল্লেখ করাে।

সূচনা: বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন ধরনের জাদুঘর দেখা যায়। সাধারণ জাদুঘর ছাড়াও কলা, ঐতিহাসিক ও বিজ্ঞান বিষয়ক জাদুঘরের অস্তিত্ব লক্ষ্য করা যায়।


জাদুঘরের প্রকারভেদ


[1] সাধারণ জাদুঘর


  • বহুমুখী জাদুঘর: যে জাদুঘরে একটি স্থানে নানা ধরনের সংগ্রহ গড়ে তােলা হয়, তাকে বহুমুখী জাদুঘর বলা হয়। অষ্টাদশ শতকে মূলত ব্যক্তিগত উদ্যোগে এই ধরনের জাদুঘর গড়ে তােলা হয়। সংগ্রহ করা বিভিন্ন শিল্প-স্থাপত্যকীর্তির নমুনা, চিত্র, পাণ্ডুলিপি, অস্ত্রশস্ত্র, বস্ত্র ও অন্যান্য নিদর্শন এই জাদুঘরে সাজিয়ে রাখা হয়। উদাহরণ: সালারজং জাদুঘর (হায়দ্রাবাদ), ভারতীয় জাদুঘর (কলকাতা)।


  • শিশু জাদুঘর: ১২ বছর বয়স পর্যন্ত শিশুদের জন্য গড়ে তােলা হয় শিশু জাদুঘর। এই ধরনের জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় এমন জিনিসপত্র, যেগুলি এই বয়সের শিশুদের জ্ঞানের পরিধি বাড়াতে সাহায্য করে। এই ধরনের জাদুঘর প্রতিষ্ঠার অন্তরালে অনুপ্রেরণা রয়েছে, জার্মান শিক্ষাবিদ ফ্রয়েবেল এবং ইতালীয় শিক্ষাবিদ মন্তেস্বরীর। এদের তত্ত্বানুসারে এই ধরনের জাদুঘরে শিশুদের উপযােগী বসে আঁকা নানা মডেল তৈরি, কুইজ প্রতিযােগিতা, লুকোচুরি খেলা, সৃজনশীল রচনা প্রভৃতির ব্যবস্থা করা হয়। বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজ জাদুঘরও এই পর্যায়ভুক্ত।


[2] কলা জাদুঘর


  • শিল্পসংরক্ষণ জাদুঘর: শিল্পসংরক্ষণ জাদুঘরে বিভিন্ন মৃৎশিল্প, ধাতুর ফলকে খােদিত ভাস্কর্য এবং কারুকার্যময় নানাধরনের শিল্পকীর্তি স্থান পায়। এই সমস্ত শিল্পনমুনাগুলি বিশেষভাবে এক একটি ঘরে সাজানাে থাকে। উদাহরণ: আশুতােষ মিউজিয়াম অব ইন্ডিয়ান আর্ট (কলকাতা)।


  • আধুনিক কলা জাদুঘর: সমসাময়িক শিল্পনমুনাগুলি যে জাদুঘরে পরীক্ষণীয় স্তরে থাকে এবং প্রদর্শিত হয়, তাকে আধুনিক কলা জাদুঘর বলে। উদাহরণ: হংকং-এর কলা জাদুঘর (জাপান)।


  • লােককলা ও কারুশিল্প জাদুঘর: বিভিন্ন দেশের লােকশিল্প ও কারুশিল্পজাত নমুনাগুলি যে জাদুঘরে সাজিয়ে রাখা হয়, তাকে লােককলা ও কারুশিল্প জাদুঘর বলে। এই জাদুঘরে সংরক্ষিত লােক ও কারুশিল্পের নিদর্শনগুলি মাটি, কাঠ, বাঁশ, চামড়া, শিং, হাড়, দাঁত প্রভৃতি উপকরণ দিয়ে তৈরি হয়। এই জাদুঘরে সংরক্ষিত থাকে পুতুল, সূচীশিল্প নমুনা, বাসনপত্র, বাদ্যযন্ত্র, অলংকার প্রভৃতি। এক্ষেত্রে শিল্পদ্রব্য ও প্রতিকৃতি প্রদর্শন উল্লেখযােগ্য। উদাহরণ: ন্যাশনাল ফোক অ্যান্ড ক্রাফট মিউজিয়াম, নিউদিল্লি (ভারত)।


[3] ঐতিহাসিক জাদুঘর


  • প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর: যে জাদুঘরে প্রাগৈতিহাসিক ও ঐতিহাসিক যুগের নানা নিদর্শন সংরক্ষিত হয়, তাকে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর বলে। উদাহরণ: ন্যাশনাল আর্কিওলজিক্যাল মিউজিয়াম (গ্রিস)।


  • ব্যক্তি বিষয়ক জাদুঘর: বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তির ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রী স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা হয় যে জাদুঘরে তা হল ব্যক্তি বিষয়ক জাদুঘর। এখানে সংরক্ষিত থাকে বিখ্যাত ব্যক্তিদের চিঠিপত্র, দিনলিপি, ছবি, সমসাময়িক নথিপত্র প্রভৃতি। উদাহরণ: জোড়াসাঁকো ঠাকুরবাড়ি (কলকাতা)।


  • স্মৃতি জাদুঘর: মহান ঐতিহাসিক ব্যক্তিদের ও তাদের সমসাময়িক ঘটনাবলিকে স্মরণ করার জন্য যে জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়, তাকে স্মৃতি জাদুঘর বলে। রাজপ্রাসাদের জাদুঘরগুলিও এই পর্যায়ে পড়ে। উদাহরণ: ভিক্টোরিয়া মেমােরিয়াল হল (কলকাতা)।


[4] বিজ্ঞান বিষয়ক জাদুঘর


  • ভূতাত্ত্বিক জাদুঘর: ভূতাত্ত্বিক ধারণাদানে সাহায্য করে এমন কিছু নিদর্শনের দ্বারা এই মিউজিয়াম গড়ে তােলা হয়। খনিজ, পাথরের টুকরাে, জীবাশ্মগুলি ছাড়াও এখানে ভূতাত্ত্বিক নীতি ও পদ্ধতিগুলি প্রদর্শিত হয়। উদাহরণ: শিবপুরের বােটানিক্যাল গার্ডেন (পশ্চিমবঙ্গ, ভারত)।


  • প্রাণীবিদ্যা জাদুঘর: বনভূমি থেকে সংগ্রহ করা জীবন্ত প্রাণীদের স্থায়ীভাবে প্রদর্শিত করা হয় যে সুবিশাল অঞ্চলজুড়ে তা হল প্রাণীবিদ্যা জাদুঘর। বন্য ও গৃহপালিত প্রাণীদের শিক্ষামূলক ও বিজ্ঞানধর্মী অনুসন্ধানের সুযােগ করে দেয় এই ধরনের জাদুঘর। উদাহরণ: দ্য জুলজিক্যাল গার্ডেন (কলকাতা)।


  • বিজ্ঞান জাদুঘর: যে জাদুঘর সাধারণ বিজ্ঞান, ভৌতবিজ্ঞানের বিবর্তন, বিজ্ঞানধর্মী ধারণা ও উপকরণ, বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত বিবর্তনের নিদর্শন সংগ্রহ, সংরক্ষণ ও প্রদর্শন করে থাকে তা হল বিজ্ঞান জাদুঘর। বিজ্ঞান জাদুঘরের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরও উল্লেখযােগ্য। উদাহরণ: মিউজিয়াম অব সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (শিকাগাে)।


উপসংহার: এই বিভিন্ন ধরনের জাদুঘর ছাড়াও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে আরও বহুবিধ জাদুঘরের অস্তিত্ব রয়েছে।