জাদুঘর কাকে বলে? জাদুঘরের উদ্দেশ্যগুলি লেখাে।

জাদুঘরের সংজ্ঞা

আন্তর্জাতিক জাদুঘর পর্ষদের অভিমত: আন্তর্জাতিক জাদুঘর পর্ষদ অর্থাৎ আইকম (International Council of Museums বা ICOM) জাদুঘরের সংজ্ঞা প্রসঙ্গে বলেছে, জাদুঘর হল অলাভজনক, জনসাধারণের কাছে উন্মুক্ত এবং স্থায়ী সমাজসেবামূলক প্রতিষ্ঠান যা শিক্ষালাভ, জ্ঞানচর্চা ও আনন্দলাভের উদ্দেশ্যে মানব ঐতিহ্যের স্পর্শযােগ্য ও স্পর্শ-অযােগ্য জিনিসপত্র সংগ্রহ করে, সংরক্ষণ করে, প্রদর্শন করে এবং সেগুলি নিয়ে গবেষণা করে।


বাংলা আকাদেমির অভিমত: পশ্চিমবঙ্গ বাংলা আকাদেমির আকাদেমি বিদ্যার্থী বাংলা অভিধান অনুসারে, যে-ঘরে নানা অত্যাশ্চর্য জিনিস বা প্রাচীন জিনিস সংরক্ষিত থাকে তাই হল জাদুঘর।


সাধারণ সংজ্ঞা: সাধারণভাবে বলা যায় জাদুঘর হল বিভিন্ন ঐতিহাসিক উপাদানের সংগ্রহশালা, যেখানে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক, বৈজ্ঞানিক, শিল্প-বিষয়ক প্রভৃতি বিভিন্ন ধরনের গুরুত্বপূর্ণ নিদর্শন সংরক্ষণ করে তা জনসাধারণের উদ্দেশ্যে স্থায়ী বা অস্থায়ীভাবে প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়। এক কথায়, বিভিন্ন পুরাতাত্ত্বিক নিদর্শন সংগ্রহ করে সেগুলি যেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনে সংরক্ষণ করে রাখা হয় সেসব প্রতিষ্ঠান বা ভবনকে জাদুঘর বলে।


জাদুঘরের উদ্দেশ্যসমূহ


বিশ্বের বিভিন্ন দেশে জাদুঘরগুলির সাধারণ উদ্দেশ্য বা কার্যাবলির মধ্যে মিল খুঁজে পাওয়া যায়। জাদুঘরের এরকমই কয়েকটি সাধারণ উদ্দেশ্য হল一


[1] প্রত্ননিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ: জাদুঘরের একটি প্রধান উদ্দেশ্য হল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের, বিভিন্ন যুগের নানা নিদর্শন সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা। জাদুঘরে প্রাচীন মুদ্রা, লিপি, নানা শিল্পকর্ম (ভাস্কর্য, স্থাপত্য, চিত্রকলা), দুষ্প্রাপ্য পুরাবস্তুসমূহ এবং নানা মডেল ও চার্ট সংরক্ষিত রাখা হয়।


[2] প্রতিকৃতি নির্মাণ: জাদুঘরগুলি বিভিন্ন প্রাচীন, আধুনিক গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক নিদর্শনের বা ক্রিয়াকলাপের বা বস্তুসমূহের বা ব্যক্তিসমূহের মডেল (Replica) নির্মাণ করে। এই মডেলগুলি দর্শকদের দেখানাের লক্ষ্যে সাজিয়ে রাখা হয়।


[3] অতীত সমাজ-সভ্যতার ধারণা দান: জাদুঘরে যে সমস্ত জিনিস সাজিয়ে রাখা হয় সেগুলি থেকে আমরা অতীত সমাজসভ্যতা সম্পর্কে এক সাধারণ ধারণা পেয়ে থাকি। বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে মানবসমাজ ও সভ্যতার যে অগ্রগতি ঘটেছে তার বিভিন্ন নিদর্শন ও স্মৃতিচিহ্নের আভাস মেলে জাদুঘরে সংরক্ষিত বিভিন্ন প্রত্নিদর্শনগুলি থেকে।


[4] স্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের সংগ্রহশালা নির্মাণ: বিশ্বের বেশ কয়েকটি জাদুঘরকে সম্পূর্ণরূপে বা আংশিকভাবে বিশ্বের জনপ্রিয় ও স্মরণীয় ব্যক্তিত্বদের মূর্তির সংগ্রহশালা হিসেবে গড়ে তােলা হয়েছে। এ প্রসঙ্গে মাদাম তুসাের জাদুঘরটির কথা উল্লেখ করা যায়। এই জাদুঘরটিতে ঐতিহাসিকভাবে স্বীকৃত রাজকীয় ব্যক্তিত্ব, ক্রীড়াতারকা, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রাজনৈতিক নেতৃবর্গ, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব এমনকি চলচ্চিত্রের জনপ্রিয় নায়ক-নায়িকাদের মােমের মূর্তি সংরক্ষিত রয়েছে।


[5] জনসচেনতা ও জ্ঞানের প্রসার: জাদুঘরে সংরক্ষিত প্রত্ননিদর্শনগুলি দর্শকের মনে এক সচেতনতা জাগায়। এগুলি আবার গবেষণার কাজেও ব্যবহৃত হয়। প্রত্নিদর্শনগুলি দর্শনের ফলে দর্শকের জ্ঞানেরও প্রসার ঘটে।


[6] অতীত ইতিহাসের পুনরাবির্ভাবের সাহায্য: জাদুঘরে যে সমস্ত ঐতিহাসিক নিদর্শন বা উপাদান সংগ্রহ করা হয় সেগুলি অতীত ইতিহাসের পুনরাবির্ভাবে সাহায্য করে বলা চলে। বইয়ের পাতা থেকে উঠে আসা নানা প্রত্নিদর্শনগুলি আমাদের পাঠ্যকাহিনি বা ইতিহাসকে প্রাণবন্ত বা সজীব করে তােলে। অর্থাৎ বলা যায় জাদুঘর অতীত ইতিহাসের পুনরাবির্ভাবে সাহায্য করে থাকে।