পৃথিবীর প্রায় জনবসতিহীন অঞ্চলগুলির নাম ও তাদের বৈশিষ্ট্য লেখাে | জনঘনত্বের বণ্টনের ওপর দুটি প্রধান প্রাকৃতিক উপাদানের প্রভাব আলােচনা করাে।
পৃথিবীর প্রায় জনবসতিহীন অঞ্চলসমূহ ও তাদের বৈশিষ্ট্য
পৃথিবীর প্রায় জনবসতিহীন অঞ্চলগুলিকে বিরল ও অতি-বিরল জনবসতিতে ভাগ করা যায়।
বিরল জনবসতি অঞ্চল : পৃথিবীর যেসব অঞ্চলের জনসংখ্যার ঘনত্ব খুবই কম অর্থাৎ প্রতি বর্গকিমিতে 1 থেকে 10 জন, সেগুলিকে বিরল জনবসতি অঞ্চল বলে। উস্লেখযোগ্য। অঞ্চলগুলি হল一
সাইবেরিয়াসহ এশিয়ার মধ্য অংশ, মরু অঞ্চল বাদে ইরাক ও ইরানের অংশ, মস্কো বাদে এশিয়ার উত্তর-মধ্য অংশ, নেপাল ও আফগানিস্তান।
আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পশ্চিমের পার্বত্য অঞ্চল।
ব্রাজিল, আর্জেন্টিনা, ভেনেজুয়েলা ও কলম্বিয়ার কিয়দংশ বাদে সমগ্র দক্ষিণ আমেরিকা।
আফ্রিকার প্রায় সমগ্র অংশ।
অস্ট্রেলিয়ার ডাউন্স তৃণভূমি অঞ্চল ও দক্ষিণের সংকীর্ণ উপকূলভাগ।
মধ্য আমেরিকা (মেক্সিকো, গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস, কোস্টারিকা প্রভৃতি দেশ)।
নরওয়ে, সুইডেন ও ডেনমার্ক।
বৈশিষ্ট্য : ভূপ্রকৃতি, জলবায়ু, মৃত্তিকা প্রভৃতি বসবাসের উপযােগী নয় এবং কৃষি ও শিল্পে তেমন উন্নত নয়।
অতি-বিরল জনবসতি অঞ্চল : পৃথিবীর যেসব অঞ্চলে প্রতি বর্গকিমিতে 1 জনের কম লােক বাস করে, সেগুলিকে অতি-বিরল জনবসতি অঞ্চল বলে। উল্লেখযোগ্য অঞ্চলগুলি হল一
সাহারা, গােবি, কালাহারি, থর প্রভৃতি মরু অঞ্চল।
হিমালয়, রকি, আন্দিজ প্রভৃতি সুউচ্চ পার্বত্য অঞ্চল ও শীতল তুন্দ্রা অঞ্চল।
চির তুষারাবৃত ও হিমশীতল মেরু অঞ্চল।
বৈশিষ্ট্য : (i) প্রতিকূল জলবায়ুর জন্য এই অঞ্চলে মনুষ্য বসতি তেমন গড়ে ওঠেনি, (ii) কৃষি উপযােগী পরিবেশের অভাবে এই অঞ্চলে কৃষিকাজের তেমন প্রসার ঘটেনি এবং (iii) খনিজ সম্পদের অভাবে এই অঞ্চলে আজও শিল্পের তেমন বিকাশ ঘটেনি।
জনঘনত্বের বণ্টনের ওপর দুটি প্রধান প্রাকৃতিক উপাদানের প্রভাব
জনঘনত্ব বণ্টনে পরিবেশের উপাদানগুলির প্রভাব সর্বাধিক। জনঘনত্ব বণ্টনে প্রভাব বিস্তারকারী দুটি প্রধান প্রাকৃতিক উপাদান হল一
[1] ভূপ্রকৃতি : জনঘনত্ব বণ্টনের চরিত্র ভূপ্রাকৃতিক বৈশিষ্ট্যের দ্বারাই প্রধানত নির্ধারিত হয়।
উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল ও বন্ধুর মালভূমি অঞ্চলে মানুষের জীবনধারণের সুযােগসুবিধা কম। উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে কৃষিকাজের উপযােগী উর্বর সমভূমির অভাব, রাস্তাঘাট নির্মাণ ও ভারী শিল্প গড়ে তােলার পক্ষে প্রতিকূল ভূমিরূপ, ভূমিধস এখানকার চিরকালীন সমস্যা। তাই এই অঞ্চলে জীবনধারণের উপযুক্ত পরিবেশ গড়ে না ওঠায়, জনবসতির ঘনত্ব খুবই কম।
মালভূমি অঞ্চলে পার্বত্য অঞ্চল অপেক্ষা জীবনধারণের সামান্য বেশি সুযােগসুবিধা থাকায় জনবসতির ঘনত্ব কিছুটা বেশি।
সমভূমি অঞ্চলের বিস্তীর্ণ উর্বর সমতলক্ষেত্র উন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা, শিল্প স্থাপন ও কৃষিকাজের পক্ষে অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করে। তাই, এই অঞ্চলের জনবসতির ঘনত্ব বেশি হয়। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, ভারতে হিমালয়ের পার্বত্য অঞ্চল ও দাক্ষিণাত্যের মালভূমি অঞ্চল অপেক্ষা গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলের জনঘনত্ব অনেক বেশি।