শুঙ্কবিন্দু বসতি ও জলবিন্দু বসতি কাকে বলে? রৈখিক বসতি বা দণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে ওঠার কারণ কী?

শুষ্কবিন্দু বসতি

বন্যা প্লাবিত অঞ্চলের অধিবাসীরা বন্যার প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সেই অঞ্চলের অপেক্ষাকৃত উঁচু এবং শুষ্ক অঞ্চলগুলিতে বসতি স্থাপন করেন। যেহেতু একটিমাত্র উঁচু স্থানে সকলে একসাথে বসবাস করতে পারবে না তাই তারা বিক্ষিপ্তভাবে বসতি স্থাপন করে। এর ফলে সেই অঞ্চলে বিক্ষিপ্ত জনবসতি সৃষ্টি হয়। শুষ্ক স্থানের ওপর নির্ভর করে এই বসতি স্থাপিত হয় বলে একে শুষ্ক বিন্দু বসতি বলে। গঙ্গা ও ঘর্ঘরা নদীর প্লাবন সমভূমিতে এই ধরনের বসতি দেখা যায়।


জলবিন্দু বসতি


শুষ্ক অঞ্চলে, মরুভূমি বা মরূদ্যানে কিংবা কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে জলের অভাব জনিত কারণে সাধারণত মরূদ্যানে প্লায়াকে ঘিরে কিংবা ভৌমজলের উৎসকে ঘিরে গােষ্ঠীবদ্ধ জনবসতি বিকাশ লাভ করে। শুষ্ক অঞ্চলে জলকে কেন্দ্র করে এই ধরনের বসতি গড়ে ওঠায় একে জলবিন্দু বসতি বলে।


রৈখিক বসতি বা দণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে ওঠার কারণ


বিভিন্ন প্রকার প্রাকৃতিক ও আর্থসামাজিক কারণে দণ্ডাকৃতি জনবসতি গড়ে ওঠে। এই কারণগুলি হল一


(১) বন্যা ও জলোচ্ছ্বাস : কোনাে স্থানে নিয়মিত বন্যা বা জলােচ্ছ্বাস হলে সেখানে নদীর উঁচু পাড়ে বা স্বাভাবিক বাঁধের ধারে সারিবদ্ধভাবে দণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে ওঠে। আবার, বন্যাকবলিত অঞ্চলের উঁচু রাস্তার ধারেও সারিবদ্ধভাবে বাড়িঘর তৈরি করা হয়। যেমন মুরশিদাবাদ ও নদিয়া জেলার বন্যা কবলিত স্থানসমূহে উভয় প্রকার বসতিই লক্ষ করা যায়।


(২) ঝড় : অনেক সময় ঝড়ের প্রকোপ থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দুই বালিয়াড়ির মধ্যবর্তী অঞ্চলে বালিয়াড়ির সমান্তরালে দণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে ওঠে। যেমন—দিঘা ও ওডিশার সীমান্তবর্তী বঙ্গোপসাগরের উপকূলে এই ধরনের বসতি আছে।


(৩) মৎস্য শিকার : মৎস্য শিকারে সুবিধা হয় বলে অনেক মৎস্যজীবী পরিবার নদী বা খালের ধারে সারিবদ্ধভাবে বসবাস করে। যেমন সুন্দরবনের কোনাে কোনাে অংশে এই ধরনের বসতি দেখা যায়।


(৪) সুবিধাজনক অবস্থান : পণ্যসামগ্রীর ক্রয়বিক্রয় এবং পরিবহণ ব্যবস্থার সুবিধার জন্য বহু অঞ্চলে রাস্তার সমান্তরালে সারিবদ্ধ বসতি গড়ে ওঠে। যেমন—পশ্চিমবঙ্গের ওপর দিয়ে প্রসারিত জাতীয় ও রাজ্য সড়কপথগুলির অনেক স্থানেই এই ধরনের বসতি গড়ে উঠেছে।


(৫) সরকারি বা খাস জমির উপস্থিতি : রেলপথের দুই ধারে যেসব সরকারি জমি বা খাস জমি (vested land) থাকে, সেখানে জবরদখল করেও দণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে উঠতে দেখা যায়। যেমন উত্তর চব্বিশ পরগনা, নদিয়া প্রভৃতি জেলার বহু জায়গায় রেলপথের ধারে এই ধরনের একটানা লম্বা বসতি লক্ষ করা যায়।


(৬) অন্যান্য :

  • অনেকসময় সামাজিক কারণেও দণ্ডকৃতি বসতি সৃষ্টি হয়। যেমন—ছছাটোনাগপুর মালভূমি অঞ্চলের কিছু কিছু স্থানে সাঁওতাল উপজাতি জনগােষ্ঠীর রাস্তা বরাবর সারিবদ্ধভাবে বসতি নির্মাণ করেছে।

  • কোনাে কোনাে অঞ্চলে সমুদ্রোপকূলের সমান্তরালে বা তটরেখা বরাবরও দণ্ডাকৃতি বসতি গড়ে ওঠে।