ভূপ্রকৃতি ও নদনদীর মধ্যে সম্পর্ক উপযুক্ত চিত্রসহযােগে আলােচনা করাে।

সূচনা

  • টপােশিট রেফারেন্স নং 73 J/8।

  • ভৌগােলিক অবস্থান(i) 22°0' উত্তর-22°15' উত্তর ও ৪6°15' পূর্ব-৪6°30' পূর্ব। (ii) জেলা-ময়ূরভঞ্জ (ওডিশা)।

  • মানচিত্রের স্কেল-1: 50,000।

  • মানচিত্রের ক্ষেত্রমান-প্রায় 708 বর্গকিমি।

  • সমােন্নতি রেখার ব্যবধান—20 মিটার।

  • চৌম্বক নতি—প্রায় 45 পশ্চিম (1975) ।

  • জরিপ কাজের বছর—1979-80।

  • মানচিত্রের প্রকাশনা—প্রথম সংস্করণ, 2003।

  • তত্ত্বাবধায়ক সার্ভেয়র জেনারেল অব ইন্ডিয়া।


ভূপ্রকৃতি ও নদনদীর সম্পর্ক

প্রদত্ত ভূবৈচিত্র্যসূচক মানচিত্রে ভূপ্রকৃতির সঙ্গে নদনদীর এক নিবিড় সম্পর্ক লক্ষ করা যায়। মানচিত্রে প্রদর্শিত অঞ্চলকে প্রধান ভূপ্রকৃতি হিসেবে- (1) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ও (2) নদীগঠিত সমভূমি এই দু-ভাগে ভাগ করা যায়। এই অঞ্চলের প্রধান নদীগুলি হল- (i) দক্ষিণে প্রবাহিত বুড়াবালঙ্গা নদী এবং (ii) উত্তরে প্রবাহিত বাঁকবল নদী এবং এদের বহু উপনদী। উল্লিখিত ভূপ্রকৃতির সঙ্গে নদনদীর সম্পর্ক আলােচনা করা হল।


(১) ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি ও নদনদীর সম্পর্ক : ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমি অঞ্চলে নদীগুলির যে যে বৈশিষ্ট্য দেখা যায়, তা হল-

  • জলবিভাজিকা ও

  • নদীর মস্তকক্ষয়।


ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমিটি নদী দ্বারা ক্ষয়প্রাপ্ত একটি আঁকাবাঁকা শৈলশিরা-সমন্বিত সুউচ্চ পাহাড়ি অঞ্চল। পর্বতশিখর থেকে দু-দিকে এটি খুবই খাড়া ঢালে সমভূমিতে মিশেছে। ফলে এই পার্বত্যভূমি জলবিভাজিকা রূপে অঞ্চলটিতে অবস্থিত। এর শিখরদেশ নদী দ্বারা অত্যধিক ক্ষয়প্রাপ্ত হওয়ায় জলবিভাজিকাগুলি তত স্পষ্ট নয় এবং জলবিভাজিকাগুলি ক্রমশ নিশ্চিহ্ন হয়ে আসছে। জলবিভাজিকার দু-পাশের নদীগােষ্ঠীগুলি তাদের উচ্চপ্রবাহে মস্তকক্ষয়ের মাধ্যমে খুব কাছাকাছি চলে এসেছে এবং নদীগ্রাসের সম্ভাবনা তৈরি করেছে। এখানে ব্যবচ্ছিন্ন মালভূমির বিভিন্ন অংশের সাথে নদীর সম্পর্ক আলােচিত হল।


  • ভৃগুঢ়াল ও নদী : দক্ষিণের এই মালভূমিতে খাড়া ঢালের অসংখ্য ভূগু সৃষ্টি হয়েছে। সম্ভবত এগুলি আগ্নেয় উদভেদূপে ডাইকের অবস্থানকে সূচিত করে। এই অঞ্চলের নদীগুলি সম্পূর্ণরূপে ভৃগুঢ়াল দ্বারা নিয়ন্ত্রিত এবং প্রতিটি নদী T আকৃতির ছােটো ছােটো গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। নদীবাকগুলি শিলার দ্বারা নিয়ন্ত্রিত।


  • গিরিখাত ও নদী : দক্ষিণের মালভূমিতে সানাকাছা নদী প্রায় 5 কিমি লম্বা ও 60 মিটার গভীর খাড়া গিরিখাতের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত। গিরিখাতের মধ্য দিয়ে নদী একেবারে সরলরৈখিক প্রবাহ বজায় রাখতে বাধ্যে হয়েছে। নদীর এরূপ প্রবাহ নির্দেশ করে যে গিরিখাতটি সম্ভবত চ্যুতির ফলে সৃষ্টি হয়েছে।


এই অংশে বুড়াবালঙ্গা নদী দক্ষিণ প্রান্ত থেকে উত্তর দিকে প্রায় 4 কিমি প্রবাহিত হওয়ার পর সিমলিপাল উচ্চভূমির একটি শৈলশিরাকে কেটে প্রায় 1.5 কিমির খাড়া গভীর একটি গিরিখাত তৈরি করেছে। গিরিখাতের মধ্য দিয়ে শৈলশিরাকে অতিক্রম করার পর একটি বড়াে নদীবাঁক তৈরি করে ডানদিকে বেঁকে পশ্চিম দিকে প্রবাহিত হয়েছে। এই অংশে নদী দ্রুত নিম্নক্ষয়ের মাধ্যমে গিরিখ ত তৈরি করেছে।


(২) সমভূমি ও নদনদীর সম্পর্ক : মানচিত্রে প্রদর্শিত অঞ্চলটিতে যে দুটি সমভূমি রয়েছে। এগুলি প্রধানত নদীর ক্ষয় ও সঞ্চয়ের ফলে গঠিত হয়েছে। তবে দুটি সমভূমি গঠনে কিছু পার্থক্য লক্ষ করা যায়। যথা-


  • দক্ষিণের শৈলশিরার মধ্যবর্তী সমভূমি : দক্ষিণভাগের সমভূমিটি লম্বা সরু ফালির আকারে সিমলিপাল উচ্চভূমির অন্তর্বর্তী অংশে অবস্থিত। এটি বুড়াবালঙ্গা নদী ও এর প্রধান উপনদী সানাকাছা ও কুয়াম নদী দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। সমভূমির ঢাল দক্ষিণ-পশ্চিম থেকে উত্তর-পূর্ব দিকে। এই সমভূমি 1,200 মিটার থেকে 200 মিটার উচ্চতায় অবস্থিত। বুড়াবালঙ্গা ও এর উপনদীর ক্ষয় কাজের ফলে এই সমভূমির সৃষ্টি হয়েছে।


  • উত্তরের সমভূমি : দ্বিতীয় সমভূমিটি দক্ষিণে সিমলিপাল উচ্চভূমির উত্তরে অবস্থিত। এটি বাঁকবল নদী ও এর অসংখ্য উপনদী দ্বারা সৃষ্টি হয়েছে। এই সমভূমি 300 মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এর প্রধান ঢাল দক্ষিণ থেকে উত্তরে। তবে পূর্বাংশে এটি পশ্চিম দিকে ও উত্তরাংশে এটি দক্ষিণ দিকে ঢালু। সমস্ত ঢাল নদী-উপত্যকায় এসে মিশেছে। এই অংশে ভূমিরূপের যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ করা যায় তা ভূমিভাগ পুনর্যৌবন লাভের ঘটনাকে নির্দেশ করে। এই বৈশিষ্ট্যগুলি হল—(i) 300 মিটার উচ্চতায় বিস্তৃত পুরাতন উপত্যকার মধ্যে বাঁকবল নদীর নিম্নপ্রবাহ সংকীর্ণ সরু নদী-উপত্যকা গড়ে উঠেছে। (ii) উপনদীগুলির মস্তক্ষয় অতি স্পষ্ট। জল বিভাজিকাগুলির শীর্ষদেশ অত্যন্ত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়েছে। দু-পাশের নদীগােষ্ঠীর মধ্যে নদীগ্রাসের সম্ভাবনা রয়েছে। শীর্ষদেশে দুপাশের নদীগুলি পরস্পরের খুব কাছে অবস্থান করছে। (iii) মস্তকক্ষয়ের ফলে কিছু কিছু নদী সরু ফালির আকারে তার উপত্যকাকে মালভূমির অভ্যন্তরভাগ পর্যন্ত বিস্তৃত করেছে। (iv) মানচিত্রের উত্তর-পশ্চিমাংশে পুরাতন উপত্যকায় সর্বাধিক 600 মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট কতকগুলি অবশিষ্ট পাহাড় প্রথম ক্ষয়চক্রের সাক্ষ্য বহন করে চলেছে।


জলনির্গম প্রণালী : এই অঞ্চলে বিভিন্ন ধরনের জলনির্গম ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে। এগুলি এই অঞ্চলে বিভিন্ন ভূতাত্ত্বিক গঠনকে প্রতিফলিত করে। অর্থাৎ নদী ব্যবস্থাগুলি নিম্নশায়িত শিলার গঠন, কাঠিন্য ইত্যাদি দ্বারা বহুলাংশে নিয়ন্ত্রিত। বিভিন্ন প্রকার জলনির্গম প্রণালীগুলি হল-


  • বৃক্ষরূপী জলনির্গম প্রণালী : সমভূমি অংশে একই প্রকার সমনতিসম্পন্ন শিলার ওপর জলনির্গম ব্যবস্থা লক্ষ করা যায়।


  • কেন্দ্রবিমুখ জলনির্ণম প্রণালী : সিমলিপাল উচ্চভূমির বিভিন্ন শঙ্কু আকৃতির পাহাড়কে (নেকপুর পাহাড় A3, বাঁকিওড়া পর্বত C3) কেন্দ্র করে বহু কেন্দ্রবিমুখ জলনির্গম ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।


অঙ্গুরীয় জলনিৰ্গম প্রণালী : মালভূমির উত্তর-পূর্ব কোণে (C1) 428 মিটার উচ্চ একটি পাহাড়কে বেড় দিয়ে শুখিলা কাত্রা নদী অঙ্গুরীয় জলনির্গম প্রণালী গড়ে উঠেছে।