লর্ড কার্জনের প্রাথমিক, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা- সম্পর্কিত নীতিগুলি লেখাে।

লর্ড কার্জনের শিক্ষা বিষয়ক নীতি

লর্ড কার্জন 1904 খ্রিস্টাব্দের 11 মার্চ একটি সরকারি সিদ্ধান্তের আকারে তাঁর শিক্ষানীতি প্রকাশ করেন। এটি 'Government of India's Resolution of Education Policy, 1904' নামে পরিচিত। লর্ড কার্জন যে নীতিগুলি গ্রহণ করার কথা বলেন, তা নীচে উল্লেখ করা হল一


প্রাথমিক শিক্ষা বিষয়ে কার্জনের নীতি

প্রাথমিক শিক্ষার মানােন্নয়নের জন্য কার্জনের প্রস্তাবনায় যে নীতিগুলি উল্লেখ করা হয়, সেগুলি হল


(1) ব্যয়বরাদ্দ বৃদ্ধি: দেশের শিক্ষার জন্য সরকার যে পরিমাণ অর্থ বরাদ্দ করবে, তার বেশিরভাগ অংশই প্রাথমিক শিক্ষার জন্য ব্যয় করা হবে।


(2) সরকারি নিয়ন্ত্রণ: বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান কর্তৃক প্রাথমিক শিক্ষা বিকাশের জন্য গৃহীত পরিকল্পনাকে কার্যকারী করার পূর্বে নিজ নিজ প্রদেশের শিক্ষা অধিকর্তার (DPI) অনুমােদন নিতে হবে।


(3) ফলাফলের ভিত্তিতে অনুমোদনের নীতি বর্জন: আগে পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে বেসরকারি বিদ্যালয়গুলি অনুদান পাওয়ার যােগ্য কি না তা বিবেচিত হত। কার্জনের প্রস্তাবে ফলাফলের ভিত্তিতে অনুদান প্রদানের নীতি বর্জন করার কথা বলা হয়।


(4) পাঠক্রম প্রণয়ন: গ্রামাঞ্চল এবং শহরাঞ্চলের প্রাথমিক পক্ষার পাঠক্রমকে পৃথকভাবে রচনা করার কথা বলা হয়। বলা হয়, গ্রামাঞ্চলের বিদ্যালয়গুলির পাঠক্রমকে হতে হবে সহজ, সরল এবং গ্রাম্যজীবনের প্রয়ােজন মেটানাের পক্ষে বিশেষ উপযােগী।


(5) শিক্ষার মাধ্যম: প্রাথমিক স্তরের শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা, অন্য কোনাে ভাষার প্রয়ােগ চলবে না।


(6) অর্থব্যয় বিষয়ে তদারকি: প্রাথমিক শিক্ষা সম্প্রসারণের জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠানকে সরকার অনুদান হিসেবে যে অর্থ প্রদান করবে, তা যাতে অন্য খাতে ব্যয় না হয়, সেদিকে সরকারকে বিশেষ ভাবে নজর দিতে হবে।


(7) শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা: প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পাঠদানে নিযুক্ত শিক্ষকদের পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। এর জন্য সরকারিভাবে উপযুক্ত সংখ্যক শিক্ষক-শিখন প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলতে হবে।


(8) সংখ্যাগত ও গুণগত মানােন্নয়ন: প্রাথমিক শিক্ষার সংখ্যাগত (অর্থাৎ সম্প্রসারণগত এবং গুণগত) মানােন্নয়নের বিষয়ে সরকারকে আরও বেশি সচেষ্ট হতে হবে।


মাধ্যমিক শিক্ষা বিষয়ে কার্জনের নীতি


কার্জনের শিক্ষানীতি-সংক্রান্ত দলিলে মাধ্যমিক শিক্ষার গুণগত মানােন্নয়নের ওপর অধিক গুরুত্ব দানের কথা বলা হয়। সরকারি শিক্ষানীতিতে মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য যেসব ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়, তা নীচে উল্লেখ করা হল


(1) সরকারি অনুমােদন: শিক্ষা-সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত প্রকাশের পর ইতিমধ্যে দেওয়া সরকারি অনুমােদন ব্যতীত নতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করা যাবে না। যে-কোনাে মাধ্যমিক বিদ্যালয়কে সরকার এবং বিশ্ববিদ্যালয় উভয়ের কাছেই অনুমােদন নিতে হবে। অনুমােদনের জন্য সরকারি বিধিনিষেধগুলি সঠিকভাবে মেনে চলতে হবে।


(2) আর্থিক অনুদান: অনুমােদিত মাধ্যমিক বিদ্যালয়-গুলিকে সরকারি তহবিল থেকে প্রয়ােজনীয় আর্থিক অনুদান মঞ্জুর করা হবে।


(3) শিক্ষক-শিক্ষণের ব্যবস্থা: মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রতিটি শিক্ষক যাতে নতুন নতুন শিক্ষাপদ্ধতির সঙ্গে পরিচিত হতে পারেন এবং তাদের পেশাগত দক্ষতা বাড়িয়ে নেওয়ার সুযােগ পান, তার জন্য শিক্ষক-শিক্ষা ব্যবস্থার পুনর্বিন্যাস ঘটাতে হবে। প্রয়ােজন অনুসারে যথেষ্ট সংখ্যক শিক্ষক-শিক্ষণ মহাবিদ্যালয় স্থাপন করতে হবে।


(4) পাঠক্রমের সংস্কার: মাধ্যমিক স্তরের গতানুগতিক বিষয়গুলির সঙ্গে অতিরিক্ত কিছু প্রয়ােজনীয় বিষয় অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে পাঠক্রমকে বাস্তবধর্মী এবং সময়ােপযােগী করে তুলতে হবে।


(5) শিক্ষার ব্যবস্থা: প্রাথমিক স্তরের মতাে মাধ্যমিক স্তরেও শিক্ষার মাধ্যম হবে মাতৃভাষা। তবে ইংরেজি বিষয়ও চর্চার ব্যবস্থা থাকবে।


(6) সরকারি নিয়ন্ত্রণ পরিবর্তন: মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলির মানােন্নয়ন ও সার্বিক অগ্রগতির জন্য সেগুলিকে সরকারি নিয়ন্ত্রণে আনা হবে। এ ছাড়া ওই বিদ্যালয়গুলিতে পরিদর্শনের জন্য উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।


(7) আদর্শ বিদ্যালয় স্থাপন: মাধ্যমিক শিক্ষার গুণকত উৎকর্ষ সাধনের জন্য সম্পূর্ণভাবে সরকারি পরিচালনায় এমন কিছু বিদ্যালয় স্থাপন করা হবে, যা বেসরকারি বিদ্যালয়গুলির কাছে আদর্শ হিসেবে কাজ করবে।


উচ্চশিক্ষা প্রসঙ্গে কার্জনের নীতি


লর্ড কার্জন উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে কেবল ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন (1902) গঠন করেই তার দায়িত্ব শেষ করেননি। বরং 1904 খ্রিস্টাব্দে 21 মার্চ 'ইশ্পিরিয়াল লেজিসলেটিভ কাউন্সিল’-এ প্রথম ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় বিল উপস্থাপন করেন। নীচে ভারতের উচ্চশিক্ষা বিষয়ে কার্জন গৃহীত ব্যবস্থাগুলি উল্লেখ করা হল


(1) পঠনপাঠনের ব্যবস্থা: বিশ্ববিদ্যালয়গুলি শুধুমাত্র পরীক্ষাগ্রহণ ও ডিগ্রিপ্রদানের যন্ত্র নয়। এগুলিতে স্নাতকোত্তর স্তরের পঠনপাঠন এবং গবেষণার ব্যবস্থা করা প্রয়ােজন।


(2) সিনেট ও সিন্ডিকেট গঠনের নিয়ম: বিশ্ববিদ্যালয়ের সিনেটে অধিক সংখ্যক সদস্য থাকায় অনেক ক্ষেত্রে সদস্যদের মধ্যে মতের পার্থক্য দেখা দেয়। ফলে প্রশাসনিক ক্ষেত্রে অচলাবস্থা দেখা দেয়। তাই সিনেট ও সিন্ডিকেটের সদস্যসংখ্যা যথাক্রমে 50 থেকে 100 এবং 9 থেকে 15-র মধ্যে রাখা দরকার।


(3) কলেজগুলির মানোন্নয়ন: কলেজগুলির শিক্ষাগত মান ক্রমশ নিম্নগামী হচ্ছে। এই অবস্থার জন্য কলেজগুলিতে যথাযথ পরিদর্শন ব্যবস্থা চালু করা প্রয়ােজন।


(4) বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভৌগােলিক সীমা নির্ধারণ: প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌগােলিক সীমা নির্ধারণের দায়িত্ব স-পরিষদ গভর্নর-জেনারেলের ওপর অর্পণ করা হয়। এক্ষেত্রে বলা হয় যে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ভৌগােলিক সীমানা নির্দিষ্ট করা হলে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলির ক্ষেত্রে কাজের সুবিধা হবে।


উচ্চশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে এবং ওই সুপারিশগুলি মূল্যায়ন করাে।


হান্টার কমিশনের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য লেখাে। হান্টার কমিশনের সাধারণ সুপারিশগুলি লেখাে।


হান্টার কমিশনের কর্মধারা লেখাে। ওই কমিশনের প্রাথমিক শিক্ষা-সম্পর্কিত সুপারিশের মূল্যায়ন করাে।


সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের শিক্ষা ও ধর্মশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে। হান্টার কমিশনের মাধ্যমিক শিক্ষা সম্পর্কিত সুপারিশের মূল্যায়ন করাে।


নারীশিক্ষা বিষয়ে হান্টার কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে। হান্টার কমিশনের সুপারিশের সীমাবদ্ধতা উল্লেখ করাে।


কত খ্রিস্টাব্দে এবং কার নেতৃত্বে হান্টার কমিশন গঠিত হয়? হান্টার কমিশনের ইতিবাচক সুপারিশগুলি লেখাে।


ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয় কমিশন কে, কার নেতৃত্বে, কবে নিয়ােগ করেন? ওই কমিশনের সুপারিশগুলি লেখাে।