বিকাশের প্রক্রিয়া হিসেবে শিখন ও পরিণমনের সম্পর্ক আলােচনা করাে।

বিকাশের প্রক্রিয়া হিসেবে শিখন ও পরিণমন

বিকাশের প্রক্রিয়া হিসেবে শিক্ষা ও পরিপমনের সম্পর্ক শিক্ষামনােবিজ্ঞানীদের মহলে একটি বিতর্কিত বিষয়। এর দুটি দিক一


  • যে আচরণগুলি প্রধানত নির্দিষ্ট বয়সে পরিণমনের ফলে ঘটে তা প্রশিক্ষণের দ্বারা ত্বরান্বিত করা যায় কি না।

  • পরিণমন কীভাবে শিক্ষার ওপর প্রভাব বিস্তার করে।


(১) পরিণমনজনিত অচিরণগুলির ওপর প্রশিক্ষণের প্রভাব: লােভেল (Lovell), ম্যাকগিয়ক (McGeoch), হিলগার্ড (Hilgard) প্রমুখ মনােবিজ্ঞানী প্রথম প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে গিয়ে অনেক গবেষণা করেছেন। তাদের সিদ্ধান্ত হল, পরিণমনের ফলে যে আচরণগুলি সম্পন্ন হয়, প্রশিক্ষণের দ্বারা তা ত্বরান্বিত করা যায়। যেমন, পনেরাে মাস বয়সে শিশু কোনােরকম সাহায্য না নিয়ে নিজে হাঁটতে পারে। প্রশিক্ষণের দ্বারা শিশুকে বারাে মাসে হটানাে সম্ভব। কিন্তু এই কৌশল ব্যবহার করা উচিত কি না সে সম্পর্কে মনােবিজ্ঞানীরা দ্বিমত। কারণ দেখা গেছে, কোনােরকম প্রশিক্ষণ ছাড়াই পনেরাে মাস বয়সে শিশু যে উৎকর্ষের সঙ্গে হাঁটতে পারে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শিশুও সেই একই উৎকর্ষের সঙ্গে হাঁটে। তাই বাস্তবে প্রশিক্ষণের বিশেষ কোনাে মূল্য নেই। তা ছাড়া পরিণত বয়সের আগে শিশুকে দিয়ে কোনাে কাজ করালে তার ওপর মানসিক চাপ পড়ে। তার স্বাভাবিক সক্রিয়তা বাধা পায়। এর ফলে তার ব্যক্তিত্বের বিকাশ ব্যাহত হয়।


কোনাে কোনাে শিক্ষামনস্তত্ত্ববিদ মনে করেন, পরিণমনের জন্য অপেক্ষা করলে মানুষের এই স্বল্পজীবনে গুরুত্বপূর্ণ অনেক কিছুই না-শেখা থেকে যাবে এবং মানব সম্পদের অপচয় হবে। নতুন শিক্ষাপ্রযুক্তি, শিক্ষাকৌশল অব্যবহৃত থেকে যাবে।


(২) শিক্ষার ওপর পরিণমনের প্রভাব: দ্বিতীয় প্রশ্নের ক্ষেত্রে অর্থাৎ শিক্ষার ওপর পরিণমনের প্রভাব সম্পর্কে সকলেই একমত যে, পরিণমন শিক্ষার ক্ষেত্রে বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। শিক্ষাদানের আগে নিশ্চিত হওয়া উচিত, শিক্ষাগ্রহণের জন্য শিক্ষার্থীদের মধ্যে উপযুক্ত পরিণমন ঘটেছে কি না। প্রাচীন ভারতীয় শিক্ষায় এই বিষয়টির বিশেষ গুরুত্ব ছিল।


প্রাচীনকালের শিক্ষাব্যবস্থায় একটি নির্দিষ্ট বয়সে উপনয়ন বা প্রব্রজ্যার মাধ্যমে শিক্ষারম্ভ হত।আধুনিককালে বিশ্বের প্রায় সব দেশেই প্রথাগত শিক্ষা শুরু হওয়ার একটি নির্দিষ্ট বয়স আছে। প্রতিটি গ্রেড বা শ্রেণির জন্যও বয়সের মাপকাঠি আছে।


আধুনিককালে চাহিদানির্ভর শিক্ষার উদ্দেশ্য নির্ধারণ এবং পাঠক্রম রচনায় শিক্ষার্থীদের বয়স তথা পরিণমনের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়।বয়স বৃদ্ধির ফলে বিভিন্ন দিকে পরিণমন ঘটে, সেই পরিণমন শিক্ষার্থীর মধ্যে চাহিদার সৃষ্টি করে। শিক্ষার অন্যতম উদ্দেশ্য হল চাহিদাপূরণের মধ্যে দিয়ে শিক্ষার্থীর বিকাশে সাহায্য করা।


থর্নডাইক (Thorndike) তার শিখনের নীতিতে দৈহিক প্রস্তুতি বা পরিণমনের গুরুত্ব উল্লেখ করেছেন।


উপরিউক্ত আলােচনা থেকে বলা যায়, শিক্ষার সঙ্গে। পরিপমনের সম্পর্ক খুবই গভীর। কোনাে বিষয়ে শিক্ষাদানের আগে শিক্ষার্থীর পরিণমনের স্তর সম্পর্কে সঠিক তথ্য জেনে নেওয়া প্রয়ােজন। পরিণমনের আগে জোর করে কিছু শেখালে ভালাে থেকে মন্দ হওয়ার সম্ভাবনা বেশি।


শিখনের সংজ্ঞা দাও। শিখনের বৈশিষ্ট্য লেখাে।


শিক্ষার সঙ্গে শিখনের সম্পর্ক কী? শিখনের স্বরূপ বা প্রকৃতি বিস্তারিতভাবে আলােচনা করাে।


শিখনের গুরুত্বপূর্ণ তিনটি স্তরের নাম উল্লেখ করে প্রত্যেকটির সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও। প্রত্যভিজ্ঞ বলতে কী বােঝ?


শিখন প্রক্রিয়ার স্তর সম্পর্কে সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দাও।


শিখন ও পরিণমনের মধ্যে সম্পর্ক কী তা সংক্ষেপে আলােচনা করাে। শিক্ষার ক্ষেত্রে পরিণমনের গুরুত্ব কী?


শিখন ও পরিণমনের সাদৃশ্য ও বৈসাদৃশ্য উল্লেখ করাে।


শিখনের বিভিন্ন উপাদানগুলি কী কী? যে-কোনাে একটি উপাদানের শিক্ষামূলক তাৎপর্য আলােচনা করাে।