কাম্য জনসংখ্যা, জনস্বল্পতা ও অতি-জনাকীর্ণতার ধারণাগুলি ব্যাখ্যা করাে।

কাম্য জনসংখ্যা

কোনাে দেশের যে পরিমাণ জনসংখ্যা সেই দেশের প্রাপ্ত সম্পদের উপযুক্ত ও পূর্ণ ব্যবহার করে উচ্চমানের জীবনযাত্রা সুনিশ্চিত করে, সেই পরিমাণ জনসংখ্যাকে সেই দেশের কাম্য জনসংখ্যা (Optimum Population) বলে। অন্যভাবে বলা যায়, কোনাে দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সর্বাপেক্ষা অনুকূল জনসংখ্যাই হল কাম্য জনসংখ্যা বা আদর্শ জনসংখ্যা। অধ্যাপক জিমারম্যানের মতে, মানুষ-জমি অনুপাতের আদর্শ অবস্থাকেই সাধারণভাবে কাম্য জনসংখ্যা বলে। সম্পদ অপেক্ষা জনসংখ্যা বেড়ে গেলে ঘটে জনাকীর্ণতা (Over Population) এবং জনসংখ্যা কমে গেলে সৃষ্টি হয় জনস্বল্পতা (Under Population)।


কোনাে দেশের কাম্য জনসংখ্যা নির্ভর করে— [1] সম্পদ উৎপাদনের পরিমাণ, [2] দেশের জনসংখ্যার পরিমাণ, [3] জামর কার্যকারিতা, [4] সাংস্কৃতিক উন্নতির মাত্রা, [5] উপনিবেশগুলি থেকে প্রাপ্ত সম্পদের পরিমাণ প্রভৃতি বিষয়ের ওপর।


বৈশিষ্ট্য : কোনাে দেশের সম্পদের পরিপ্রেক্ষিতে অথবা কার্যকরী জমির অনুপাতের সাথে সুসামঞ্জস্যপূর্ণভাবে যে জনসংখ্যা গড়ে ওঠে, সেই জনসংখ্যাই হল কাম্য জনসংখ্যা। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল一


  • জনসংখ্যা ও উৎপাদিত সম্পদের মধ্যে ভারসাম্য সূচিত হয়।

  • জনাকীর্ণতা (Over Population) বা জনস্বল্পতার (Under Population) নির্দেশক বা পরিমাপক রূপে কাজ করে।

  • দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নকে সুদৃঢ় করে।

  • মানব সম্পদ বা শ্রমশক্তির পূর্ণ বিকাশ ঘটায়।

  • মানুষ-জমি অনুপাত সবচেয়ে কম হয়।

  • কাম্য জনসংখ্যা একটি সাময়িক অবস্থা, এর স্থায়িত্ব কম। তাই এটি একটি গতিশীল ধারণা।


উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, পৃথিবীর উন্নত দেশ—ফ্রান্স, জার্মানি, স্পেন, নেদারল্যান্ড ইত্যাদি দেশে কাম্য জনসংখ্যা দেখা যায়।


জনস্বল্পতা


কোনাে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম হলে তাকে জনস্বল্পতা (Under Population) বলে। এই অবস্থায় মানুষের শ্রম ও শক্তির অভাব ঘটে, ফলে উৎপাদন ব্যাহত হয়। জনপ্রতি সম্পদ উৎপাদনও কম হয় এবং জীবনযাত্রার মানেরও আশানুরূপ উন্নতি ঘটে না। উদাহরণ হিসেবে বলা যায় যে, হিমালয়ের দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে, আমাজনের গভীর অরণ্যক্ষেত্রে, কালাহারি মরভূমি অঞ্চলে ও চিরতুষারাবৃত ভূখণ্ডে জনবসতির অভাবে অল্প পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ উত্তোলিত হয়।


বৈশিষ্ট্য :

  • শ্রমশক্তির অভাবে সম্পদ উৎপাদন ব্যাহত হয়।

  • কৃষি ও শিল্পে তেমন উন্নতি লাভ হয় না। ফলে মাথাপিছু আয় কম।

  • প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় জনসংখ্যা কম।

  • সম্পদ উৎপাদন ও জনসংখ্যার বৃদ্ধি খুবই মন্থর।


অতি-জনাকীর্ণতা


কোনাে দেশের জনসংখ্যা সেই দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের তুলনায় অত্যধিক বেশি হলে তাকে জনাধিক্য বা অতি-জনাকীর্ণতা (Over Population) বলে। কাম্য জনসংখ্যার অতিরিক্ত জনসংখ্যাই জনাধিক্যের অন্যতম কারণ।


বৈশিষ্ট্য :

  • কাম্য জনসংখ্যা অপেক্ষা মানুষ-জমির অনুপাত বেশি হয়।

  • ছদ্ম বেকারত্ব সৃষ্টি হয়।

  • কার্যকরী জমির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে ভূমির বা মৃত্তিকার অবক্ষয়ের সম্ভাবনা থেকে যায়।

  • শিক্ষার সুযোেগ কমে। ফলে, প্রাকৃতিক পরিবেশ দূষণের কবলে পড়ে।

  • মাথপিছু আয় কমে, ফলে জীবনযাত্রার মান নিম্নমুখী হয়।

  • দারিদ্র্য, অপুষ্টি, অশিক্ষা ও অপরাধপ্রবণতা জনাধিক্যের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।


চিন, ভারত, পাকিস্তান ইত্যাদি উন্নয়নশীল দেশে অতি জনাকীর্ণতা দেখা যায়।


জনবিস্ফোরণ কাকে বলে? ভারতে দ্রুতহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি আলােচনা করাে।


শূন্য জনসংখ্যা বৃদ্ধি বা স্থিতিশীল জনসংখ্যার ধারণা দাও। উন্নত দেশগুলিতে অতি স্বল্পহারে জনসংখ্যা বৃদ্ধির কারণগুলি উল্লেখ করাে।


জনসংখ্যার বৃদ্ধি কাকে বলে? জনসংখ্যা বৃদ্ধির ফলে উদ্ভূত সমস্যাগুলি আলােচনা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)