পৃথিবীর অসম জনবণ্টনের আর্থসামাজিক কারণগুলি আলােচনা করাে।

পৃথিবীর অসম জনবণ্টনের আর্থসামাজিক কারণসমূহ

পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জনবণ্টনে প্রাকৃতিক পরিবেশের ন্যায় আর্থসামাজিক পরিবেশও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আর্থসামাজিক পরিবেশেগুলিকে- [1] অর্থনৈতিক [2] সামাজিক ও [3] রাজনৈতিক পরিবেশে ভাগ করে আলােচনা করা হল।


[1] অর্থনৈতিক : কোনাে দেশ বা অঞ্চলের জনঘনত্ব সেই দেশ বা অঞ্চলের অর্থনৈতিক পরিকাঠামাের ওপর নির্ভরশীল। অর্থনীতির উন্নতির মূলে আছে কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যের উন্নতি। ইউরােপের উত্তর-পশ্চিম অংশ ও আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের উত্তর-পূর্ব অংশ কৃষি, শিল্প ও বাণিজ্যে উন্নত হওয়ায় এই অঞ্চলে জনঘনত্ব বেশি। অর্থনৈতিক দিক থেকে স্বচ্ছল অঞ্চলগুলি যেমন কলকাতা, মুম্বাই, নিউ ইয়র্ক, টোকিও প্রভৃতি বন্দর ও বাণিজ্যকেন্দ্রিক শহরগুলিতে তাই জনবসতি বেশি। অন্যদিকে অনুন্নত দেশগুলিতে অর্থনৈতিক পরিবেশের সুবিধা না থাকায় জনঘনত্ব কম।


[2] সামাজিক : জনবসতির বিন্যাস ও ঘনত্ব নির্ধারণে সামাজিক প্রভাব যেমন-ধর্মীয় প্রভাব ও সাংস্কৃতিক প্রভাব যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা গ্রহণ করে।


  • ধর্মীয় প্রভাব : পৃথিবীর নানা স্থানে ধর্মীয় কারণে অনেক ছােটো বড়াে জনবসতি গড়ে ওঠে। এইসব স্থানে বহিরাগতদের আগমনের জন্য জনঘনত্ব বাড়ে। ভারতের বারাণসী, পুরী, হরিদ্বার, দেওঘর প্রভৃতি স্থানে ধর্মীয় কারণেই জনসংখ্যা বেড়েছে।


  • সাংস্কৃতিক প্রভাব : সাংস্কৃতিক পরিবেশের উন্নতি পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলের জনবণ্টনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। মানুষের শিক্ষাদীক্ষা ও জ্ঞানবিজ্ঞানের উন্নতি হলে কারিগরিবিদ্যা ও প্রযুক্তির উন্নতি ঘটে। ফলে, জনসংখ্যা বৃদ্ধি পায়। পৃথিবীর বহু অঞ্চলে প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্য থাকা সত্ত্বেও উন্নত সংস্কৃতির অভাবে প্রাকৃতিক দ্রব্যকে সম্পদে উন্নীত করা সম্ভব হয়নি। তাই এইসব অঞ্চলে জনঘনত্ব খুবই কম। আবার, উন্নত সংস্কৃতির জন্যই উষর মরুভূমিতে জলসেচের মাধ্যমে কৃষিজ ফসল উৎপাদন করা সম্ভব হয়েছে। হিমশীতল তুন্দ্রা অঞ্চলে প্রচণ্ড ঠান্ডার কারণে যেখানে অঙ্কুরােদ্গম সম্ভব নয়, সেইসব অঞ্চলে গবেষণাগারে বীজের অঙ্কুরােদগম ঘটিয়ে অল্প সময়ের মধ্যে ফসল উৎপাদন করা হচ্ছে। ফলে, এইসব অঞ্চলে জনবসতির বিস্তার ঘটছে।


[3] রাজনৈতিক : জনসংখ্যার বণ্টন ও পুনর্বন্টন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির সঙ্গে সম্পর্কিত। 1947 সালের 15 আগস্ট দেশভাগের সময় ও তার পরবর্তীকালে তৎকালীন পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তান থেকে দলে দলে শরণার্থী ভারতে আসায় ভারতের জনসংখ্যা বহুগুণ বেড়েছে। আবার কোনাে কোনাে দেশের সরকার সেই দেশের অর্থনৈতিক পরিকাঠামাে মজবুত করার জন্য পরিবার- পরিকল্পনা গ্রহণ করায় জনসংখ্যার বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হয়েছে।


সুতরাং দেখা যাচ্ছে, পৃথিবীর জনসংখ্যা বৃদ্ধি ও বণ্টন কেবল একটিমাত্র নিয়ন্ত্রক দ্বারা নির্ধারিত না হয়ে নিয়ন্ত্রকগুলির যৌথ মিথস্ক্রিয়ায় নির্ধারিত হয়।