জনঘনত্ব অনুযায়ী ভারতের আঞ্চলিক বিভাগগুলি সম্বন্ধে আলােচনা করাে।

জনঘনত্ব অনুযায়ী ভারতের আঞ্চলিক বিভাগ


গড় জনঘনত্বের তারতম্য অনুসারে ভারতকে পাঁচটি অঞ্চলে ভাগ করা যায়— [1] অত্যধিক জনঘনত্ব অঞ্চল, [2] অধিক জনঘনত্ব অল, [3] মধ্যম জনঘনত্ব অঞ্চল, [4] স্বল্প জনঘনত্ব অঞ্চল এবং [5] অতি-স্বল্প জনঘনত্ব অঞ্চল।


[1] অত্যধিক জনঘনত্ব অঞ্চল


  • আঞ্চলিক বিস্তৃতি : পশ্চিমবঙ্গ, বিহার, কেরল উত্তরপ্রদেশ প্রভৃতি রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির মধ্যে দিল্লি, চণ্ডীগড়, পুদুচেরি, দমন-দিউ ও লাক্ষা দ্বীপপুঞ্জ এই জনঘনত্ব অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 800 জনের বেশি।


  • অত্যধিক জনঘনত্বের কারণ : (i) গাঙ্গেয় সমভূমি অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় পশ্চিমবঙ্গের মাটি খুব উর্বর। গঙ্গা নদীর উভয় তীরে ভারতের প্রাচীনতম ও গুরুত্বপূর্ণ শিল্পাঞ্চল অবস্থিত হওয়ায় শিল্পের প্রয়ােজনে পার্শ্ববর্তী অঞ্চল থেকে প্রচুর লােকের আগমন ঘটেছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ থেকে দলে দলে শরণার্থী এদেশে আসায় পশ্চিমবঙ্গের সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে জনঘনত্ব বহুগুণ বেড়েছে। (ii) কেরলের উপকূলবর্তী পলিমাটি অঞ্চল উর্বর হওয়ায় কৃষিকাজে বেশ উন্নত। এরই পার্বত্য অংশে প্রচুর বাগিচা ফসল উৎপন্ন হয় এবং সমুদ্র থেকে প্রচুর মাছ। ধরার সুবিধা থাকায় এই অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি। (iii) উত্তরপ্রদেশ ও বিহার উর্বর পলিসমৃদ্ধ মধ্যগাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত হওয়ায় কৃষিজ ফসল উৎপাদনে যথেষ্ট উন্নত এবং এই রাজ্যে জন্মহার খুব বেশি। তাই, এই রাজ্যের জনঘনত্বও বেশি। (iv) দিল্লি, চণ্ডীগড়, পুদুচেরি কেন্দ্রশাসিত অঞ্চল হওয়ায় শাসনতন্ত্র পরিচালনা, শিল্প ও বাণিজ্যের কারণে শহরে পরিণত হয়েছে। তাই, স্বাভাবিকভাবেই এই সমস্ত অঞ্চলের জনঘনত্ব বেশি।


[2] অধিক জনঘনত্ব অঞ্চল


  • আঞ্চলিক বিস্তৃতি : ঝাড়খণ্ড, পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও তামিলনাড়ু রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত দাদরা ও নগর হাভেলি অধিক জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 401 থেকে 800 জন।


  • অধিক জনঘনত্বের কারণ : (i) উত্তরপ্রদেশ, পাঞ্জাব ও হরিয়ানা উর্বর পলিসমৃদ্ধ গাঙ্গেয় সমভূমিতে অবস্থিত। জলসেচ ব্যবস্থাও বেশ উন্নত। তাই, এই অঞ্চল কৃষিতে বেশ উন্নত। কৃষিভিত্তিক শিল্পেও এই অঞ্চল বেশ উন্নত। এ ছাড়াও কৃষি জমিতে কজের জন্য ভারতরে অন্যান্য রাজ্য থেকে প্রচুর শ্রমিক এখানে আসে। (ii) তামিলনাড়ুর কাবেরী অববাহিকা ও উপকূলীয় সমভূমি কৃষিতে বেশ উন্নত। মালভূমি অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়ায় এই রাজ্যের জনঘনত্ব বেশ বেশি।


[3] মধ্যম জনঘনত্ব অঞ্চল


  • আঞ্চলিক বিস্তৃতি : অসম, ত্রিপুরা, ওডিশা, অবিভক্ত অপ্রদেশ, কর্ণাটক, গােয়া, মহারাষ্ট্র, মধ্যপ্রদেশ, গুজরাত ও রাজস্থান রাজ্যের জনঘনত্ব মধ্যম প্রকৃতির। এই অঞ্চলের জনঘনত্ব প্রতি বর্গকিমিতে 201 থেকে 400 জন।


  • মধ্যম জনঘনত্বের কারণ : (i) ওডিশা, অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ ও কর্ণাটক রাজ্য সমভূমি ও মালভূমির সমন্বয়ে গঠিত সমভূমি কৃষিতে উন্নত এবং মালভূমি অঞ্চল খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ। (ii) ঝাড়খণ্ড ভারতের খনিজ ভাণ্ডার হওয়ায় শিল্পে বেশ উন্নত। (iii) অসম ও ত্রিপুরা রাজ্য বাগিচা কৃষিতে উন্নত। (iv) মহারাষ্ট্র ও গুজরাত দুটি প্রথম সারির শিল্পোন্নত রাজ্য হলেও মহারাষ্ট্রের বিস্তীর্ণ অঞ্চল মালভূমির অন্তর্গত এবং গুজরাতের উত্তর ও পশ্চিম অংশ শুষ্ক মরুপ্রায় হওয়ায় জনঘনত্ব মধ্যম প্রকার। (v) গােয়া পর্যটন শিল্পে বেশ উন্নত এবং সমুদ্র থেকে মাছ ধরার সুবিধা থাকায় এই অঞ্চলের জনঘনত্ব মাঝারি ধরনের।


[4] স্বল্প জনঘনত্ব অঞ্চল


  • আঞ্চলিক বিস্তৃতি : মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্, হিমাচল প্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, ছত্তিশগড় ও জম্মু ও কাশ্মীর—এই আটটি রাজ্য স্বল্প জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলে প্রতি বর্গকিমিতে 101 থেকে 200 জন লােক বাস করে।


  • স্বল্প জনঘনত্বের কারণ : (i) মেঘালয়, মণিপুর, নাগাল্যান্ড, হিমাচল প্রদেশ ও উত্তরাখণ্ড দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। গভীর বনভূমি, প্রতিকূল জলবায়ু, অনুন্নত কৃষি ও শিল্পের কারণে এই অঞ্চলের জনঘনত্ব খুবই কম (ii) ছত্তিশগড় মালভূমিতে অবস্থিত হওয়ায় এই অঞ্চলের ভূপ্রকৃতি বন্ধুর, মৃত্তিকা অনুর্বর ল্যাটেরাইট জাতীয় বলে কৃষিতে অনুন্নত। (iii) রাজস্থান মরুভূমি অঞ্চলে অবস্থিত হওয়ায় স্বাভাবিকভাবেই জনঘনত্ব কম।


[5] অতি স্বল্প জনঘনত্ন অঞ্চল


  • আঞ্চলিক বিস্তৃতি : অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম এবং কেন্দ্রশাসিত আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ অতি-স্বল্প জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চলের অন্তর্গত। এই অঞ্চলে প্রতি বর্গকিমিতে 100 জনের কম লােক বাস করে।


  • অতি-স্বল্প জনঘনত্বের কারণ : (i) অরুণাচল প্রদেশ, মিজোরাম, সিকিম দুর্গম পার্বত্য অঞ্চলে অবস্থিত। এই অঞ্চলের পার্বত্য ভূভাগ, প্রতিকূল জলবায়ু, গভীর অরণ্য, অনুন্নত কৃষিপদ্ধতি প্রভৃতি কারণে জনঘনত্ব খুবই কম। অনুন্নত যােগাযােগ ব্যবস্থা এবং খনিজ সম্পদের অভাবে কুটির শিল্প ছাড়া এই অঞ্চলে তেমন কোনাে শিল্প গড়ে ওঠেনি। (ii) আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ মূল ভূভাগ থেকে সম্পূর্ণভাবে বিচ্ছিন্ন। গভীর বনভূমি ও অস্বাস্থ্যকর উয় আর্দ্র জলবায়ুর জন্য এই অঞ্চলের জনবসতির ঘনত্ব খুবই কম (প্রতি বর্গকিমিতে 50 জনেরও কম)। গ্যাংটক, ইটানগর প্রভৃতি স্থান পর্যটন শিল্পে উন্নত হওয়ায় জনঘনত্ব কিছুটা বেশি।


ভারতে অত্যধিক জনঘনত্বযুক্ত অঞ্চলগুলির বণ্টন আলােচনা করাে। পশ্চিমবঙ্গের জনঘনত্ব বেশি হওয়ার কারণ কী?


ভারতের জনসংখ্যা বণ্টন নির্ধারণের প্রাকৃতিক কারণগুলি সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে। ভারত কি অতি-জনাকীর্ণ দেশ ? ব্যাখ্যা দাও।


বিশ্বের জনসংখ্যা বৃদ্ধির গতিপ্রকৃতি আলােচনা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)