বাংলাদেশের পাট শিল্পের বিভিন্ন সমস্যা ও সম্ভাবনা আলােচনা করাে।

বাংলাদেশের পাট শিল্পের সমস্যা

বিশ্ববাজারে বাংলাদেশের পাট ও পাটজাত পণ্যের চাহিদা ক্রমবর্ধমান হলেও বাংলাদেশের পাট শিল্প বেশ কিছু সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে। এই সমস্যাগুলি হল一


[1] পাটের গুণগত মান হ্রাস : বাংলাদেশ বর্তমানে উৎপাদন বাড়াতে ভারত থেকে যে পাটের বীজ আমদানি করে, সেগুলি নিম্নমানের হওয়ায় পাট থেকে উৎপন্ন তন্তুর উজ্জ্বলতা ও স্থায়িত্ব কম হয়।


[2] রাজনৈতিক অস্থিরতা : বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে এই দেশের শিল্পোৎপাদন মাঝেমাঝেই ব্যাহত হয়। শুধু তাই নয় বেশ কয়েকটি মুসলিম প্রধান দেশ বর্তমানে বাংলাদেশের সঙ্গে রপ্তানি বাণিজ্যে অনিচ্ছুক হওয়ায় বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।


[3] রপ্তানি হ্রাস : বিশ্ব বাজারে পাটের উচ্চ মূল্য, বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন কম হওয়া, আন্তর্জাতিক বাজারে উচ্চ রপ্তানি শুল্ক, সরকারের উদ্যোগের অভাব প্রভৃতি কারণে গত তিন বছর বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে।


[4] বিকল্প দ্রব্যের সাথে প্রতিযোগিতা : পাটজাত দ্রব্য পরিবেশ বান্ধব হলেও বাংলাদেশীয় এই পণ্যগুলির যথাযথ প্যাকেজিং, ব্র্যান্ডিং-এর অভাব বিশ্বের বাজারে আজও এগুলিকে সিন্থেটিক তন্তুজাত পণ্যগুলির সঙ্গে প্রতিযােগিতার সম্মুখীন করে তুলেছে।


[5] সরকারি অসহযোগিতা : 1980-এর পরে বহু সরকারি পাট শিল্প সংস্থা বন্ধ হয়ে গেছে এবং কিছু সরকারি বিধিনিষেধের জন্য পাট শিল্পের উৎপাদনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে।


[6] উপযুক্ত জ্ঞান ও অর্থের অভাব : বাংলাদেশে পাট শিল্পের বৈচিত্র্যপূর্ণ উপাদানের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা হল যথাযথ জ্ঞান, অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ও দক্ষ শ্রমিকের অভাব। বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশ হওয়ায় এখানে ক্ষুদ্র ও মাঝারি পাট শিল্প কেন্দ্র গড়ে তুলতে ও বিভিন্ন ধরনের পাটজাত পণ্যের উৎপাদনের জন্য প্রয়ােজনীয় অর্থের অভাব দেখা যায়।


বাংলাদেশে পাট শিল্পের সম্ভাবনা


বাংলাদেশের পাট শিল্প আন্তর্জাতিক বাজারে পাটের দাম বৃদ্ধি এবং পাটজাত পণ্যের রপ্তানি হ্রাস ইত্যাদি নানা সমস্যার সম্মুখীন হলেও, বিশেষ কিছু কারণের জন্য বাংলাদেশের পাট শিল্পের ভবিষ্যত সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল


  • বর্তমান বিশ্বে পরিবেশ দূষণ ও পরিবেশের অবনমন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সেই দিক থেকে পাট ও পাটজাত পণ্য যেহেতু পরিবেশ বান্ধব, তাই আন্তর্জাতিক বাজারে বিশেষত উন্নত দেশগুলিতে পাটজাত পণ্যের চাহিদা ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে সেখানে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের বাজারও ক্রমে বিস্তৃত হচ্ছে।


  • বর্তমানে বাংলাদেশের পাট শিল্প বা উৎপাদন শুধুমাত্র চিরাচরিত ব্যাগ, বস্তা ও থলে তৈরিতেই সীমাবদ্ধ নয়। পাটকে বিভিন্ন শৌখিন দ্রব্য, সাজসজ্জার সরঞ্জাম, ঘর সাজানাে দ্রব্য, ফ্যাশন দ্রব্য তৈরিতেও ব্যবহার করা হয়েছে। পাটকে জিওটেক্সটাইল (JGT) হিসেবেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে। এটি মাটির ক্ষয় রােধ, নদী বাঁধ ও নদী পাড়ের ক্ষয় রােধ, রাস্তায় ফুটপাত তৈরি প্রভৃতি নানা কাজে ব্যবহার করা হয়।


  • বিভিন্ন পশ্চিমী দেশের চাহিদা বৃদ্ধির পাশাপাশি থাইল্যান্ড, জাপান, ভিয়েতনামের মতাে বেশ কিছু এশীয় দেশেও বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের চাহিদা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ 2011-12-এ থাইল্যান্ড ও ভিয়েতনাম যৌথভাবে বাংলাদেশের পাটজাত বস্তার জন্য এক নতুন বাজার তৈরি করে।


  • বাংলাদেশে অন্যান্য পাটজাত পণ্য উৎপাদক দেশের তুলনায় পাটের দাম ও মজুরি অনেক কম। ফলে পাটজাত পণ্য প্রস্তুতকারক অন্যান্য দেশের (যেমন-ভারত) তুলনায় বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্যের উৎপাদন ব্যয় ও দ্রব্যের মূল্যও অনেক কম।


  • আগে বাংলাদেশ উন্নতমানের বীজ না থাকায় প্রতিবেশী দেশ থেকে পাটের বীজ আমদানি করা হত যেগুলির গুণগত মান ছিল অত্যন্ত খারাপ। কিন্তু বিগত কয়েক দশকে বাংলাদেশে উন্নতমানের কিছু নতুন পাট বীজের প্রচলন ঘটানাে হয়েছে, ফলে বর্তমানে বাংলাদেশে পাটের উৎপাদন পুনরায় বহুগুণ হারে বৃদ্ধি পেয়েছে।