ভারতে পাট শিল্পের সমস্যাগুলি আলােচনা করাে। এই সমস্যা সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপগুলি সংক্ষেপে লেখাে।

ভারতে পাট শিল্পের সমস্যা

[1] কাঁচামালের সমস্যা : দেশভাগের পর পাটের প্রধান উৎপাদন কেন্দ্রগুলি বাংলাদেশের অন্তর্গত হয়ে যাওয়ায় ভারতের পাটশিল্পে কাঁচাপাটের বিশেষ অভাব দেখা যায়। বিভিন্ন পরিকল্পনায় কাঁচা পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে নজর দেওয়া হলেও সমস্যার সম্পূর্ণ সমাধান করা যায়নি।


[2] আধুনিকীকরণের স্বল্পতা : জাপান, ফিলিপিন, বাংলাদেশ, ব্রাজিল, দক্ষিণ আফ্রিকা প্রভৃতি পাটজাত দ্রব্য উৎপাদক দেশগুলির তুলনায় ভারতীয় পাটশিল্পে ব্যবহৃত অধিকাংশ যন্ত্রপাতি পুরােনাে ও অত্যধিক ব্যবহারের ফলে ক্ষয়প্রাপ্ত।


[3] মূল্যবৃদ্ধি ও পরিবর্ত দ্রব্যের ব্যবহার বৃদ্ধি : পাটের অস্থিতিশীল ও নিন্ম উৎপাদন ও সরকারের ভুল বাজার নীতির ফলে পাটের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে পাটজাত পণ্যের দামও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সুযােগে কেনাফ, রােজেলা, ম্যানিলা হেম্প, তিসির বাকল, সিন্থেটিক তন্তু ব্যবহারের প্রতি আকর্ষণ বাড়ছে। ফলে পাট চাষিদের স্বার্থ ক্ষুন্ন হচ্ছে। শুধু তাই নয়, কাগজ ও প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহারের ফলে পাটজাত পণ্যের সামগ্রিক চাহিদা কমছে।


[4] আন্তর্জাতিক বাজারে তীব্র প্রতিযােগিতা : বাংলাদেশ, ফিলিপিনস, জাপান, ব্রাজিল প্রভৃতি দেশের পাটজাত তন্তু ও পণ্যের দাম তুলনামূলক অনেক কম ও গুণগত মান বেশি হওয়ায় বিশ্বের বাজারে ভারতীয় পণ্যের চাহিদায় ঘাটতি দেখা দিচ্ছে।


[5] প্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ও মূলধনের অভাব : বিদ্যুতের ঘাটতির ফলে পাট শিল্পের উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। তার সঙ্গে সরকারি মূলধনের অভাব ও বেসরকারি সংস্থাগুলির অনীহার ফলে পাটশিল্পে মূলধনের অভাব দেখা দিচ্ছে।


[6] শ্রমিক-মালিক অসন্তোষ : পরিচালন ব্যবস্থার ত্রুটি ও শ্রমিকদের অসন্তোষের জন্য ভারতীয় পাট শিল্প প্রভূত সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।


ভারতে পাট শিল্পের সমস্যা সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপ


ভারতীয় পাট শিল্পের সমস্যাগুলি সমাধানের জন্য নিম্নলিখিত ব্যবস্থাগুলি গ্রহণ করা হয়েছেㅡ


  • CRIJAF, IJT প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের দ্বারা গবেষণার মাধ্যমে উচ্চফলনশীল বীজ আবিষ্কার করে কাঁচা পাটের গুণগত মান উন্নত করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ ছাড়াও পাটকলগুলিকে মিশ্র বা বৈচিত্র্যপূর্ণ দ্রব্য উৎপাদনের জন্য উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।


  • পাটজাত পণ্যের রপ্তানি শুল্ক বিলােপ করা হয়েছে। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে ভারতীয় পাটজাত দ্রব্যের মূল্য হ্রাস ও চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে।


  • পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ভারতীয় পাট শিল্প উন্নয়ন বাের্ড গঠন করা হয়েছে।


  • সরকারের আয়ত্তাধীন যে সকল পাটকলগুলি প্রায় বন্ধ হয়ে যাওয়ার অবস্থায় এসে দাঁড়িয়েছে, সেগুলিকে বেসরকারি সংস্থার হাতে তুলে দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করে তােলার চেষ্টা করা হচ্ছে।


  • কাঁচামালের সমস্যা মেটাতে বিদেশ থেকে কাঁচা পাট আমদানির বন্দোবস্ত করা হয়েছে।


  • পাটের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উন্নত বীজ, জলসেচ, প্রযুক্তি প্রভৃতি পরিকাঠামােগত ব্যবস্থার উন্নতি করা হয়েছে।


  • পাট শিল্পের আধুনিকীকরণের জন্য জাতীয় শিল্প উন্নয়ন কর্পোরেশন গঠন করা হয়েছে। এ ছাড়া, জুট মডার্নাইজেশন ফান্ড স্কিম নামে 150 কোটি টাকার একটি আধুনিকীকরণ প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে।


  • বিদেশি বাজারে চাহিদা আছে এমন পাটজাত দ্রব্য, যেমন কার্পেট, কাগজ, ব্যাকিং প্রভৃতি সামগ্রী উৎপাদন করে রপ্তানি বাড়ানাে হয়েছে।


  • অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটজাত দ্রব্যের চাহিদা ও ব্যবহার বাড়াতে বিভিন্ন রাজ্যে পাটজাত পণ্যের প্রদর্শনী ও মেলার আয়ােজন করা হচ্ছে। এ ছাড়াও ভারত সরকার খাদ্যশস্য, চিনি, সিমেন্ট এমন কয়েকটি বিশেষ দ্রব্যের শিল্পতে পাটজাত থলে বা বস্তার ব্যবহার বাধ্যতামূলক করেছে।


  • পাট শিল্পের সামগ্রিক উন্নয়নের জন্য ভারত সরকার UNDP-এর সঙ্গে একটি যৌথ পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।