উদাহরণসহ শিল্পের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করাে। কাগজ শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি সংক্ষেপে উদাহরণসহ আলােচনা করাে।

শিল্পের শ্রেণিবিভাগ


(১) কাঁচামালের উৎস অনুসারে

  • অরণ্যভিত্তিক শিল্প : কাগজ শিল্প, রবার শিল্প ইত্যাদি।

  • কৃষিভিত্তিক শিল্প : খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ, পাট, কার্পাস বয়ন শিল্প ইত্যাদি।

  • খনিজভিত্তিক শিল্প : লৌহ ইস্পাত শিল্প, তামা শিল্প ইত্যাদি।

  • প্রাণীভিত্তিক শিল্প : দুধ শিল্প, পশম শিল্প ইত্যাদি।


(২) শিল্পজাত দ্রব্যের ব্যবহার অনুসারে

  • নির্মাণমূলক উৎপাদন শিল্প : লৌহ ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম শিল্প ইত্যাদি।

  • ভােগ্যপণ্য উৎপাদন শিল্প : কার্পাস বয়ন শিল্প, চিনি শিল্প ইত্যাদি।

  • মূলধনি দ্রব্য উৎপাদন শিল্প : রাসায়নিক শিল্প ইত্যাদি।


(৩) কাঁচামালের প্রকৃতি অনুসারে

  • ধাতব শিল্প : লৌহইস্পাত শিল্প, তামা শিল্প ইত্যাদি।

  • অধাতব শিল্প : তেল পরিশােধন শিল্প ইত্যাদি।


(৪) শিল্পের আয়তন অনুসারে

  • বৃহৎ শিল্প : লৌহ ইস্পাত শিল্প, পেট্রোরাসায়নিক শিল্প ইত্যাদি।

  • মাঝারি শিল্প : খাদ্যপ্রক্রিয়াকরণ শিল্প ইত্যাদি।

  • ক্ষুদ্র শিল্প : মৃৎ শিল্প, রেশম শিল্প ইত্যাদি।


(৫) উৎপাদন পদ্ধতি অনুসারে

  • যন্ত্র শিল্প : তামা শিল্প ইত্যাদি।

  • হস্ত শিল্প : মাদুর শিল্প, মৃৎ শিল্প ইত্যাদি।


কাগজ শিল্প গড়ে ওঠার কারণসমূহ

[1] কাঁচামালের জোগান : কাগজ শিল্পে প্রয়ােজন বনজ কাঁচামাল, যেমন নরম কাঠ, সাবাই ঘাস, বাঁশ, আখের ছিবড়া ইত্যাদি এবং রায়াসনিক দ্রব্য, যেমন-কস্টিক সােডা, সােডা অ্যাশ, ব্লিচিং পাউডার, রং ইত্যাদি। প্রয়ােজনীয় কাঁচামালগুলি সহজলভ্য হওয়ায় কানাডার সেন্ট লরেন্স ও উইনিপেগে কাগজ শিল্প গড়ে ওঠেছে।


[2] জলের পর্যাপ্ত জোগান : এক মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনে জল লাগে প্রায় এক লক্ষ গ্যালন। পর্যাপ্ত জলের সরবরাহ থাকায় হুগলি নদীর তীরে অবস্থিত ত্রিবেণি ও বাঁশবেড়িয়াতে কাগজকল গড়ে উঠেছে।


[3] পর্যাপ্ত বিদ্যুতের সরবরাহ : এক মেট্রিক টন কাগজ উৎপাদনে 2,000 কিলােওয়াট/ঘণ্টা বিদ্যুৎ লাগে। বিদ্যুতের এই বিপুল চাহিদার জন্য কাগজকলগুলি সাধারণত জলবিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাছাকাছি গড়ে ওঠে। উদাহরণ- কানাডার সেন্ট লরেন্স ও উইনিপেগ।


[4] উন্নত পরিবহণ ব্যবস্থা : উৎপাদক অঞ্চল থেকে কাঁচামাল সংগ্রহ, রাসায়নিক দ্রব্য আমদানি এবং উৎপাদিত কাগজ রপ্তানি প্রভৃতির জন্য পরিবহণের সুব্যবস্থা থাকা দরকার। কলকাতা বন্দর রেল ও সড়কের মাধ্যমে যুক্ত থাকায় ত্রিবেণিতে টিস্যু কাগজকল গড়ে উঠেছে।


[5] সুলভ শ্রমিক : কাগজ শিল্প গড়ে ওঠার জন্য সুলভ ও দক্ষ শ্রমিকের সরবরাহ থাকা প্রয়ােজন যাতে, কাগজের উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে এর উৎপাদন ব্যয়ও কম হয়। ভারতের কাগজকলগুলি এ ধরনের সুবিধা পেয়ে থাকে।


[6] মূলধনের জোগনি : কাগজ শিল্প বৃহদায়তন মূলধন-ভিত্তিক শিল্প। যন্ত্রপাতি, কাঁচামাল প্রভৃতি ক্রয়, পরিকাঠামাের উন্নতি, বণ্টন ব্যবস্থার প্রসার প্রভৃতি কারণে এই শিল্পে প্রচুর মূলধন দরকার। ভারতের কলগুলিতে প্রাথমিক পর্যায়ে ব্রিটিশ মূলধন ছিল। বর্তমানে মূলত দেশীয় মূলধনে কাগজকলগুলি পরিচালিত হয়।


[7] চাহিদা বা বাজার : স্থানীয়ভাবে কাঁচামাল না পাওয়া গেলেও বেশি চাহিদার কারণে ও অন্যান্য সুযােগসুবিধা থাকলে আমদানি করা কাঁচামালের ওপর নির্ভর করে কাগজ শিল্প গড়ে ওঠে। যেমন—জাপান, জার্মানি, দক্ষিণ কোরিয়া প্রভৃতি দেশের কাগজের কল।


[8] উন্নত পরিকাঠামো ও সরকারি নীতি : প্রশাসনিক সুপরিকাঠামাে, প্রযুক্তি এবং উদার সরকারি নীতি এই শিল্প গড়ে উঠতে সাহায্য করে। মহারাষ্ট্রের কাগজকলগুলি গড়ে ওঠার পিছনে এ ধরনের সুবিধা রয়েছে।



ভারতে কাগজ শিল্পের কী কী সমস্যা আছে? সমস্যাগুলি কীভাবে সমাধান করা সম্ভব তা আলােচনা করাে।


ভারতে কাগজ শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি আলােচনা করাে। ভারতের কোথায় কোথায় সংবাদপত্র ছাপার কাগজ বা নিউজপ্রিন্ট কারখানা গড়ে উঠেছে?


কানাডার কাগজশিল্পের পরিচয় দাও। কাগজের আমদানিকারক ও রপ্তানিকারক দেশগুলি কী কী?


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)