ভারতের পাট শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি আলােচনা করাে।

ভারতের পাট শিল্পের বর্তমান পরিস্থিতি

স্বাধীনতার আগে ও পরে দীর্ঘসময় ধরে ভারতের জাতীয় অর্থনীতিতে পাট শিল্পের অবদান বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমানে ভারতের 40-45 লাখ কৃষি পরিবার, 2.6 লাখ শিল্প শ্রমিক এবং তৃতীয় ক্ষেত্রের পরিসেবার সঙ্গে যুক্ত 1.4 লাখ কর্মী এই শিল্পের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরােক্ষভাবে যুক্ত আছে। কিন্তু বর্তমানে ভারতীয় পাট শিল্পকে নানাধরনের সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়েছে। যেমন—কাঁচামালের অভাব, আন্তর্জাতিক বাজার ও বিকল্প তন্তুজাত দ্রব্যের সঙ্গে প্রতিযােগিতা, অভ্যন্তরীণ বাজারে চাহিদা হ্রাস প্রভৃতি।


তবে বর্তমানে বিজ্ঞানের সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে ভারতে পাট শিল্পের অবস্থার কিছু পরিবর্তন হয়েছে। পাটের উৎপাদন ও শিল্প-সংক্রান্ত বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিগত কয়েক বছরে অবস্থাটির যথেষ্ট পরিবর্তন হয়েছে।


(১) পাটের ব্যবহার সংক্রান্ত দিক : ভারতীয় পাটের গুণগত মান কম হওয়ায়, কাঁচামাল হিসেবে ভারতীয় পাটের ব্যবহার কম হয়। তাই এই পাট থেকে উন্নতমানের পলিমার তন্তু উৎপাদন করে শিল্পে ব্যবহার করা হয় যা, অনেক হালকা, টেকসই ও স্বল্প দামের হয়। এই পলিমার যানবাহন শিল্পে, বিশেষ করে গাড়ির সিট তৈরি করেত, হেডলাইনার ও ট্রাঙ্ক লাইনার তৈরি করতে ব্যবহার করা হয়। আবার পাটতন্তু থেকে Geotextile জাতীয় দ্রব্য তৈরি করে তা মৃত্তিকা ক্ষয় রােধ, পার্বত্য অঞ্চলে ঢালের স্থায়িত্ব বৃদ্ধি করা, নদীর পাড় ভাঙন রােধ, রাস্তার দুধারে ফুটপাত তৈরিতে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়াও পাটের ও পাটজাত দ্রব্যের চিরাচরিত ব্যবহার হ্রাস পাওয়ায়, পাটজাত দ্রব্য উৎপাদনে বিভিন্ন প্রকার বৈচিত্র্য আনা বা নতুন ধরনের দ্রব্য উৎপাদন করা হচ্ছে, যথা বাজারের ব্যাগ, হস্তশিল্প দ্রব্য, উপহার দ্রব্য, ঘর সাজানাের শৌখিন দ্রব্য, কার্পেট, বস্ত্র ও অলঙ্কার, দড়ি, জুতাে, কুশন, গদি প্রভৃতি।


(২) পাট উৎপাদনের বর্তমান অবস্থা : দেশ ভাগের পরে বিদেশ থেকে উন্নতমানের পাট আমদানি করা হত। কিন্তু সবুজ বিপ্লবের পরে ভারতে উচ্চফলনশীল বীজ, জলসেচ, প্রযুক্তির প্রয়ােগ করে উচ্চমানের পাটের ফলনের বৃদ্ধি ঘটানাে হয়েছে।


(৩) পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন : উন্নত প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের সাফল্যকে কাজে লাগিয়ে এবং সরকারি সহযােগিতায় বিগত কয়েক বছরে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেয়েছে। জুট কমিশনের তথ্য অনুযায়ী 2012 সালে ভারতে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদনের পরিমাণ ছিল 1.91 মিলিয়ন টন। বিদেশের বাজারে চাহিদা আছে এমন কিছু পাটজাত পণ্যের (কার্পেট ব্যাকিং ক্লথ, ত্রিপল, কার্পেট, কাগজ দেওয়া চট) উৎপাদন শুরু করার পর থেকেই ভারতে পাটজাত দ্রব্যের উৎপাদন বেড়েছে।


এ ছাড়াও পাটজাত পণ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি পাওয়ার অন্যান্য কারণগুলি হল—বিদ্যুতের বর্ধিত জোগান, উৎপাদন ক্ষমতার পূর্ণ ব্যবহার, অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাজারে পাটজাত পণ্যের চাহিদার পুনরায় বৃদ্ধি প্রভৃতি।


(৪) পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি ও বাজার : 2009-13-এর মধ্যে পাটের দাম ক্রমশ বৃদ্ধি পাওয়ায় পাট শিল্পের উৎপাদন খরচও সামগ্রিক ভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাই সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলি পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি ও বাজার বৃদ্ধির দিকে বিশেষ নজর দিয়েছে। এই উদ্দেশ্যে পাটজাত পণ্যসংক্রান্ত শিল্পগুলিকে পঞ্চবার্ষিকী পরিকল্পনার আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। রপ্তানি বাড়ানাের উদ্দেশ্যে 1976 সালে সরকার রপ্তানিযােগ্য পাটজাত পণ্যের ওপর থেকে রপ্তানি শুল্ক তুলে নেয়। ক্যাশ কমপেনসেনটরি সাপাের্ট প্রকল্প (CCS) ও ভারতীয় পাট কর্পোরেশনের মাধ্যমে বিদেশ থেকে পাট আমদানি করে পাটজাত পণ্যের রপ্তানি বাড়ানাের চেষ্টা করা হয়। ভারতে জুট অ্যাডভাইসরি বাের্ড (JAB), ন্যাশনাল জুট বাের্ড (NJB) প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানগুলির মাধ্যমে পাটজাত পণ্যের ওপর বিভিন্ন প্রকার পরীক্ষানিরীক্ষা ও প্রদর্শনী বা মেলার আয়ােজন করার মাধ্যমে অভ্যন্তরীণ বাজারে পাটের চাহিদা বাড়ানাে ও পাটজাত থলে বা বস্তার ব্যবহার আবশ্যিক করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

উদাহরণসহ শিল্পের বিভিন্ন শ্রেণিবিভাগ উল্লেখ করাে। কাগজ শিল্প গড়ে ওঠার কারণগুলি সংক্ষেপে উদাহরণসহ আলােচনা করাে।


পশ্চিমবঙ্গে পাট শিল্পের অবস্থান ও একদেশী ভবনের কারণগুলি আলােচনা করাে।


ভারতে পাট শিল্পের সমস্যাগুলি আলােচনা করাে। এই সমস্যা সমাধানে গৃহীত পদক্ষেপগুলি সংক্ষেপে লেখাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)