পেট্রো-রাসায়নিক শিল্পের গুরুত্ব আলােচনা করাে | পেট্রো-রাসায়নিক শিল্পকেন্দ্রগুলি বন্দর বা তেলশােধনাগারের কাছে গড়ে ওঠার কারণ কী?

পেট্রো-রাসায়নিক শিল্পের গুরুত্ব

যে শিল্পে পেট্রোলিয়াম বা খনিজতেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের উপজাত দ্রব্য থেকে রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় অনুসারী শিল্পের কাঁচামাল ও নানারকমের ভােগ্যপণ্য উৎপাদন করা হয় তাকে পেট্রোরাসায়নিক শিল্প বলে। বর্তমান যুগে এই শিল্পের ওপর নির্ভরশীলতা এত বেশি যে একে শিল্পদানব বলা হয় বা এই শিল্পের ভবিষ্যৎ উজ্জ্বল বলে একে সূর্যোদয় শিল্পও বলা হয়। বিভিন্ন দিক থেকে এই শিল্পের অবদান লক্ষ করা যায়। যেমন一


[1] অনুসারী শিল্পের বিকাশ : পেট্রোরাসায়নিক শিল্পজাত দ্রব্য যেমন—কৃত্রিম তন্তু, প্লাস্টিক, কৃত্রিম রবার, পলিমার, পলিথিন প্রভৃতি। এগুলি পুনরায় কাঁচামালরূপে বয়ন শিল্প, রং তৈরি, ওষুধ তৈরি, প্লাস্টিক দ্রব্য তৈরি, জলের পাইপ, ট্যাংক ইত্যাদি তৈরিতে কাজে লাগে। তাই এই পেট্রোরসায়ন শিল্পকেন্দ্রকে ঘিরে প্রচুর অনুসারী শিল্প গড়ে উঠেছে।


[2] সম্পদ সৃষ্টির বৃহত্তম উৎস : এই শিল্পে কাঁচামালের পরিমাণের তুলনায় উৎপাদিত দ্রব্যের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়। এজন্য প্রতি একক বিনিয়ােগের সাপেক্ষে সম্পদ সৃষ্টির পরিমাণও সর্বাধিক।


[3] কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি : পেট্রো-রসায়ন শিল্প মূলধন নিবিড় ও সেই সঙ্গে শ্রমনিবিড় শিল্প এবং এই শিল্পের মাধ্যমে অন্যান্য শিল্পের বিকাশ ঘটায় প্রচুর সংখ্যক লােকের কর্মসংস্থানের সুযােগ সৃষ্টি হয়।


[4] ক্ষুদ্রায়তন শিল্পের সহায়ক : অনুসারী শিল্প যেমন- প্লাস্টিক শিল্প সাধারণত মাঝারি ও ক্ষুদ্র আয়তনের হয়ে থাকে। তাই এ ধরনের শিল্পের ভবিষ্যৎ পেট্রোরসায়ন শিল্পের ওপর নির্ভর করে।


[5] গবেষণার সুযোগসুবিধা : পেট্রোরসায়ন শিল্পে গবেষণার মাধ্যমে নতুন পণ্যসামগ্রী তৈরির প্রচুর সুযােগ আছে। ফলে এই শিল্পের জন্য গবেষণামূলক কাজে নিয়ােগের সম্ভাবনা বেশি।


পেট্রোরাসায়নিক শিল্পকেন্দ্রগুলি বন্দর বা তেলশােধনাগার-কেন্দ্রিক হওয়ার কারণ


তেলশােধনাগার বা বন্দরের কাছাকাছি পেট্রোরাসায়নিক শিল্পকেন্দ্র গড়ে ওঠার কারণগুলি হল一


  • এই শিল্পের কাঁচামাল হল ন্যাপথা, মিথেন, ইথেন, প্রােপেন প্রভৃতি। এসব তরল ও গ্যাসীয় কাঁচামাল খনিজ তেল পরিশােধন করার সময় উপজাত দ্রব্যরূপে পাওয়া যায়।


  • এসব দ্রব্য অন্যত্র পরিবহণ করা ঝুঁকিপূর্ণ, কারণ এগুলি সহজে দাহ্য।


  • এগুলি ট্যাঙ্কারে ভরা ও ট্যাঙ্কার থেকে খালি করা সময়সাপেক্ষ এবং এতে অপচয় হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। থাকে। তা ছাড়া, পরিবহণ ব্যয় বাড়ে এবং কিছু পরিমাণে পরিবেশ দূষণ ঘটায়।


  • তেলশােধনাগারগুলিকে কেন্দ্র করে অন্যান্য বহু সহযােগী শিল্পের সমাবেশ ঘটে থাকে। এরূপ শিল্প সমাবেশযুক্ত অঞ্চলে পেট্রোরাসায়নিক শিল্প গড়ে তুললে বহির্ব্যয় সংকোচ তত্ত্ব অনুসারে উৎপাদন-ব্যয় কম হয়।


  • তেল শােধনাগারগুলির অধিকাংশই বন্দরের কাছাকাছি গড়ে ওঠায় পেট্রোরসায়ন শিল্প কেন্দ্রগুলিও শিল্পের প্রয়ােজনীয় অন্যান্য কাঁচামাল বা যন্ত্রপাতি আমদানি ও উৎপাদিত দ্রব্য রপ্তানি করার সুবিধা পায়।


ভারতে পেট্রো-রসায়ন শিল্পের সমস্যা ও সম্ভাবনা কী?


আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের পেট্রো-রসায়ন শিল্পের সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও। এ দেশে পেট্রো-রসায়ন শিল্পের উন্নতির কারণগুলি লেখাে।


উদীয়মান বা সূর্যোদয় শিল্প বলতে কী বােঝায়? অথবা, শিল্পদানব কাকে বলে? পেট্রোরসায়ন শিল্পের উন্নতির অনুকূল ভৌগােলিক কারণগুলি আলােচনা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)