বাংলাদেশের পাট শিল্প সম্পর্কে সংক্ষেপে আলােচনা করাে।

বাংলাদেশের পাট শিল্প

বাংলাদেশ উচ্চমানের পাটজাত তন্তু উৎপাদনে (গড়ে 1.08 মিলিয়ন টন/বছর) বিশ্বে দ্বিতীয় এবং রপ্তানিতে (প্রতি বছর গড়ে 60 লাখ বেলস) বিশ্বে সর্বোচ্চ স্থান অধিকার করেছে। পাট শিল্প বাংলাদেশের এক অন্যতম প্রাচীন উৎপাদন ক্ষেত্র। দেশের প্রায় 35 লক্ষ মানুষ পাট উৎপাদন ও শিল্পের সঙ্গে নানাভাবে জড়িয়ে আছে।


(১) বাংলাদেশের পাট শিল্প উন্নতির কারণ :

  • বিশ্বের মােট উৎপাদনের প্রায় 85 শতাংশেরও বেশি পাট উৎপাদন করা হয় বাংলাদেশের অন্তর্গত গাঙ্গেয় বদ্বীপ ও তার পার্শ্ববর্তী অঞ্চলসমূহতে।


  • অত্যন্ত উর্বর পলিমাটি, অত্যধিক বৃষ্টিপাত ও উয়তার সমন্বয়ে বাংলদেশে উজ্জ্বল ও শক্ত তন্তুুক্ত পাট চাষ করা হয়। এই সােনালি তন্তু বিশ্বের যে-কোনাে দেশে উৎপন্ন পাটের থেকে গুণগত মানে অনেক বেশি এগিয়ে।


  • বাংলাদেশে খুব স্বল্প মজুরিতে দক্ষ শ্রমিক সহজেই পাওয়া যায়। বর্তমানে বাংলাদেশের মােট কর্মশক্তির 25% এই পাট শিল্পের সঙ্গে যুক্ত।


  • পাট যেহেতু পরিবেশবান্ধব সম্পদ তাই পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বিশেষত উন্নত দেশগুলিতে ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং এর সঙ্গেই বিশ্ববাজারে বাড়ছে বাংলাদেশের পাটজাত পণ্যের চাহিদা।


  • পদ্মা ও মেঘনা নদীর বিভিন্ন জলবিদ্যুৎ কেন্দ্র থেকে উৎপন্ন বিদ্যুৎ ও বি.পি.ডি.বি.র বিদ্যুৎ পাওয়ার সুবিধা আছে।


  • পাট শিল্পের জন্য প্রয়ােজনীয় অন্যান্য কাঁচামাল প্রতিবেশি দেশ ভারত থেকে পাওয়া যায়।


  • পদ্মা ও মেঘনা নদীবন্দর, ঢাকা বিমানবন্দর ও বিভিন্ন সড়কপথ ও রেলপথের মাধ্যমে দেশের অভ্যন্তরে ও বিদেশে সহজেই পণ্য রপ্তানি করা যায়।


  • বর্তমানে বাংলাদেশে BJMC, BJMA ও BJSA-এর মতাে সংস্থাগুলি পাটজাত বস্তা, থলে, ব্যাগ, কার্পেট ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের আসবাবপত্র, শৌখিন ঘর সাজানাের দ্রব্য, পরিধেয় বস্ত্র, জুতাে প্রভৃতি উৎপাদনের মাধ্যমে পাটজাত পণ্যে বৈচিত্র্য নিয়ে এসেছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে দেশীয় বাজারও ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে।


(২) বণ্টন : বাংলাদেশের প্রাচীন শিল্পগুলির মধ্যে পাট শিল্প প্রধান ও অন্যতম। 1971 খ্রিস্টাব্দে পাকিস্তান থেকে পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশ বিভক্ত হওয়ার পরে, বেশিরভাগ পুরােনাে পাট শিল্পকেন্দ্রগুলি বাংলাদেশ সরকার নিজেদের অধীনে নিয়ে এসে নতুনভাবে গড়ে তােলে। বর্তমানে বাংলাদেশে প্রায় 219টি পাট শিল্প কারখানা আছে। বাংলাদেশের অধিকাংশ পাট শিল্প গড়ে উঠেছে। মূলত তিনটি অঞ্চলকে কেন্দ্র করে। যথা-

  • ঢাকা,

  • খুলনা এবং

  • চট্টগ্রাম।


(৩) পাট ও পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানি : বাংলাদেশ বিশ্বের অন্যতম প্রধান পাটজাত দ্রব্যের রপ্তানিকারক দেশ। বাংলাদেশ থেকে বিশ্বের 80% পাটতন্তু ও দ্রব্য বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করা হয়।


বাংলাদেশ প্রতি বছর পাট ও পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে 611 মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে থাকে। রপ্তানিকৃত প্রধান দ্রব্যগুলি হল—বিভিন্ন ধরনের ব্যাগ, থলে, বস্তা, পাটজাত বস্ত্র, পাটজাত দড়ি, টেবিল ম্যাট, কার্পেট, ত্রিপল প্রভৃতি।


যে সকল দেশে বাংলাদেশের পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করা হয় সেই দেশগুলি হল—ভারত, চিন, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম, জাপান, শ্রীলঙ্কা, অস্ট্রেলিয়া, আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, নিউজিল্যান্ড, পােল্যান্ড, রাশিয়া, মিশর, মেক্সিকো, জর্ডন, তুরস্ক প্রভৃতি।