প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ও গঠন আলােচনা করাে। প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখাে।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের উৎপত্তি ও গঠন

প্রবল গতিসম্পন্ন উচ্চচাপ কেন্দ্রের বহির্মুখী ঘূর্ণমান অধােগামী বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। সাধারণত হিমমণ্ডলে ও নাতিশীতােয় মণ্ডলের কোনাে কোনাে স্থানে অত্যধিক শৈত্যের জন্য অথবা শীতকালে শৈত্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ওই অঞ্চলে গভীর উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। চাপটালকে অনুসরণ করে উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে শীতল ও ভারী বাতাস বাইরের দিকে অর্থাৎ নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে বাতাস উচ্চচাপ কেন্দ্র থেকে দক্ষিণাবর্তে ও দক্ষিণ গােলার্ধে বাতাস বামাবর্তে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু শুষ্ক ও শীতল হওয়ায় আকাশে কোনাে মেঘ সৃষ্টি হয় না। তাই এই বায়ুপ্রবাহের ফলে বৃষ্টিপাত হয় না। আকাশ রােদে ঝলমল করে। হিমমণ্ডল ও নাতিশীতােয় অঞ্চল ছাড়াও উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে ট্রপােস্ফিয়ারের উধ্বাংশে প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।


নিম্ন মধ্য অক্ষাংশের ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাত অনেক সময় উত্তরে অবস্থিত পশ্চিমা বায়ুপ্রবাহ অঞ্চলকে ভেদ করে প্রবিষ্ট হয় এবং তার ফলে মেরুপ্রদেশীয় ও ক্রান্তীয় বায়ু উভয়ই তাদের উৎপত্তিস্থল থেকে অপসারিত হয়। এভাবে ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মাধ্যমে মেরুপ্রদেশীয় ও ক্রান্তীয় বায়ু পরস্পরের মধ্যে স্থানবিনিময়ের দ্বারা ভূপৃষ্ঠের বিভিন্ন অংশে উয়তার তারতম্যে একটি সমতা আনার চেষ্টা করে।


প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য


শীতল নাতিশীতােয় অঞ্চলে ও হিমমণ্ডলের কোনাে কোনাে স্থানে শীতের প্রকোপ হঠাৎ বেড়ে গেলে বায়ুর চাপ বেড়ে যায়। ফলে কেন্দ্রে উচ্চচাপের সৃষ্টি হয়। উচ্চচাপ অঞ্চলের বাইরের দিকে নিম্নচাপ অবস্থান করায়, উচ্চচাপ অঞ্চলের শুষ্ক ও শীতল বায়ু প্রবল বেগে কুণ্ডলীর আকারে বাইরের দিকে প্রবাহিত হয়। এইরুপ প্রবল গতিসম্পন্ন বহির্মুখী ঘূর্ণমান অধােগামী বায়ুপ্রবাহকে প্রতীপ ঘূর্ণবাত বলে। এর বৈশিষ্ট্যগুলি হল—


  • আঞ্চলিক অবস্থান : প্রতীপ ঘূর্ণবাত সাধারণত নাতিশীতােয়মণ্ডল ও হিমমণ্ডলে প্রবাহিত হয়। এই ঘূর্ণবাত প্রধানত শীতল স্থলভাগের ওপর সৃষ্টি হয়।


  • বায়ুর চাপ : প্রতীপ ঘূর্ণবাতের কেন্দ্রে থাকে উচ্চচাপ এবং বাইরের দিকে থাকে নিম্নচাপ। এর কেন্দ্র ও বহির্ভাগে বায়ুচাপের পার্থক্য থাকে প্রায় 10 থেকে 20 মিলিবার।


  • বায়ুপ্রবাহের দিক : এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীত দিকে প্রবাহিত হয়।


  • বায়ুর গতিবেগ : প্রতীপ ঘূর্ণবাতে বায়ুর গতিবেগ কম হয়।


  • বিস্তৃতি : প্রতীপ ঘূর্ণবাত বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করে।


  • স্থায়িত্বকাল : প্রতীপ ঘূর্ণবাত দীর্ঘকাল স্থায়ী হয়।


  • আবহাওয়া : প্রতীপ ঘূর্ণবাতে মেঘ সৃষ্টি হয় না। ফলে বায়ু শুষ্ক ও আকাশ পরিষ্কার থাকে।


  • ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ : গতিবেগ কম হওয়ায় প্রতীপ ঘূর্ণবাতে কোনােরকম ক্ষয়ক্ষতি হয় না।


ঘূর্ণবাতের চক্ষু কাকে বলে? ক্রান্তীয় ও নাতিশীতােয় ঘূর্ণবাতের পার্থক্য নিরূপণ করাে।


ঘূর্ণবাত ও প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করাে। ঘূর্ণবাতের বৈশিষ্ট্য লেখাে।


ক্লান্তীয় ঘূর্ণবাত কোথায় কী নামে পরিচিত? উয় ও শীতল সীমান্তের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)