আবহাওয়া সঞ্চলন সম্পর্কিত কয়েকটি বিষয়ে আলােচনা করাে | ত্রিকোশ তত্ত্ব সম্বন্ধে ধারণা দাও।

আবহাওয়া সঞ্চালন সম্পর্কিত বিভিন্ন বিষয়

বর্তমানে আবহাওয়া সঞ্চলন সম্পর্কে তিনটি ধারণা প্রচলিত আছে। যেমন- [1] ত্রিকোশ তত্ত্ব, [2] রসভি ওয়েভ ও [3] ওয়াকার সার্কুলেশন।


ত্রিকোশ তত্ত্ব


এই ত্রিকোশ তত্ত্ব বায়ুপ্রবাহের অনুভূমিক ও উল্লম্ব সঞলনের কারণ ব্যাখ্যা করতে বিশেষভাবে সাহায্য করে থাকে। এই তত্ত্বে তিনটি বায়ুকোশের অবস্থানকে নির্দেশ করা হয়েছে।


হ্যাডলি কোশ: নিরক্ষীয় অঞ্চলে উয় হালকা বায়ু উর্ধ্বমুখী হয়। এই বায়ু দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে উচ্চ অক্ষাংশের দিকে প্রবাহিত হয় এবং পরে চক্রাকারে নিরক্ষীয় অঞ্চলে ফিরে আসে। উর্ধ্বগামী বায়ু পশ্চিমা বায়ুর সাথে ও নিম্নগামী বায়ু নিরক্ষীয় অঞ্চলে আয়ন বায়ুর সাথে মিশে যায়। এই ধরনের বায়ুচক্রকে হ্যাডলি কোশ বলে। নিরক্ষরেখা থেকে ক্রান্তীয় অঞ্চল (0°-30° অক্ষাংশ) পর্যন্ত এই কোশটি বিস্তৃত হওয়ায় একে ক্রান্তীয় কোশ বলা হয়।


ফেরেল কোশ: নিরক্ষরেখার উভয়দিকে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চল (30° অক্ষাংশ) ও উপমেরু নিম্নচাপ অঞ্চলের (60° অক্ষাংশ) মধ্যে ফেরেল বায়ু সঞ্চালন কোশটি অবস্থিত। এক্ষেত্রে উপক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে দক্ষিণ পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু। (উত্তর গােলার্ধে) ও উত্তর-পশ্চিম পশ্চিমা বায়ু (দক্ষিণ গােলার্ধে মেরু অঞ্চলের দিকে এবং মেরু অঞ্চল থেকে উত্তর-পূর্ব মেরুদেশীয় বায়ু (উত্তর গােলার্ধে) ও দক্ষিণ-পূর্ব মেরুদেশীয় বায় (দক্ষিণ গােলার্ধে) উপক্লান্তীয় অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। নিম্ন অক্ষাংশের উয়তা উচ্চ অক্ষাংশের দিকে পরিবহণের ক্ষেত্রে ফেরেল বায়ু সঞ্চালন কোশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ফেরেল বায়ু সঞ্চালন কোশের একটি বিশাল এলাকা জুড়ে বায়ুপ্রাচীর অবস্থান করে। উপক্রান্তীয় বায়ু ও শীতল মেরু বায়ুর মিলনস্থলে এই বায়ুপ্রাচীর গঠিত হয়।


ফেরেল সঞ্চালন কোশে উর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারে বায়ু পূর্ব দিকের পরিবর্তে পশ্চিম দিক থেকে প্রবাহিত হয়। ট্রপোপজের কাছে এই পশ্চিমা বায়ুর গতিবেগ সবচেয়ে বেশি হয়ে থাকে। এই স্তরে তরঙ্গায়িত বায়ুপ্রবাহের (Rossby Waves) গতিও বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে মেরু অঞ্চলের নিকটে ট্রলােপজের কাছাকাছি উচ্চতায় মেরু জেট বায়ু প্রবাহের (Polar Jet Stream) সৃষ্ট হয়ে থাকে।


উপক্রান্তীয় অঞ্চল থেকে উপমেরু অঞ্চলের দিকে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয় এবং এখানে বায়ু উর্ধ্বগামী হয়ে পশ্চিমা বায়ু রূপে উপক্রান্তীয় অঞ্চলে এসে নিম্নগামী হয়ে ফেরেল বায়ু সঞ্চালন চক্রটি সম্পূর্ণ করে।


মেরু কোশ: এই সঞচলন কোশটি উভয় গােলার্ধে সুমেরু ও কুমেরু উচ্চচাপ বলয় থেকে মেরুবৃত্তপ্রদেশীয় বা উপমেরু নিম্নচাপ বলয়ের মধ্যে বিস্তৃত। মেরু সীমান্তের ঊর্ধ্বমুখী বাতাস কোরিওলিস বলয়ের প্রভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে শীতল ও ভারী বায়ু রূপে মেরু অঞ্চলে নেমে আসে। অত্যধিক শৈত্যের জন্য বাতাসের ঘনত্ব স্বাভাবিকভাবেই বেশি থাকে। আবার উপমেরু অঞ্চলের বাতাস মেরু অঞ্চলে অবতরণ করায় বায়ুর চাপ অনেক বেড়ে যায়। এই দুই অঞ্চলের মধ্যে বায়ুচাপের ঢালের যে শক্তি উৎপন্ন হয় তারই প্রভাবে বায়ু মেরু অঞ্চল থেকে উপমেরু অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। কোরিওলিস বলের প্রভাবে এই বায়ু বিক্ষিপ্ত হয়ে পুবালি (Easterly) বায়ুরূপে এই দুই অঞ্চলের মধ্যে প্রবাহিত হয়। মধ্য অক্ষাংশে শীতল মেরু বায়ু উয় পশ্চিমা বায়ুর সংস্পর্শে এলে এই অঞ্চলে একটি সীমান্ত (মেরু সীমান্ত) গড়ে ওঠে এবং ভিন্নধর্মী বায়ুপুঞ্জের মধ্যে তাপ ও শক্তির স্থানান্তর ঘটে। ভিন্নধর্মী বাতাসের মিশ্রণে এই অঞ্চলের বাতাস চল হয়ে ওঠে। ফলে ঘূর্ণিঝড়ের সৃষ্টি হয়।