প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাগ করাে। উয় ও শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাতের মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করাে।

প্রতীপ ঘূর্ণবাতের শ্রেণিবিভাগ

বায়ুর উচ্চচাপকে কেন্দ্র করে বহির্মুখী ও অধােমুখী ঘূর্ণবাতের সৃষ্টি হয় তা কেবলমাত্র মেরু অঞ্চলে বা নাতিশীতােয় অঞ্চলের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকে না, উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে এবং উর্ধ্ব ট্রপােস্ফিয়ারেও এর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। অবস্থানগত ও প্রকৃতিগত পার্থক্য অনুযায়ী প্রতীপ ঘূর্ণর্বাতকে তিনটি ভাগে ভাগ কার যায়। যথা一


[1] শীতল প্রতীপ ঘূৰ্ণবাতি: হিমমণ্ডলে ও শীতল নাতিশীতায় মণ্ডলে অত্যধিক শৈত্যের জন্য অথবা শীতকালে শৈত্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে উচ্চচাপ কেন্দ্রের সৃষ্টি হয়। উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল ও ভারী বাতাস বায়ুর চাপীয় ঢাল অনুযায়ী নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু উত্তর গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার দিকে এবং দক্ষিণ গােলার্ধে ঘড়ির কাঁটার বিপরীতে প্রবাহিত হয়। এই বায়ু শুষ্ক ও শীতল হওয়ায় মেঘ সৃষ্টি হয় না, তাই বৃষ্টিপাতও হয় না। আকাশ রােদে ঝলমল করে।


[2] উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত: উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে উয় প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। নিরক্ষীয় অঞ্চল ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের উর্ধ্বগামী বায়ু উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে নিম্নগামী হয়। এর ফলে বায়ুর চাপ বৃদ্ধি পায় এবং বাতাস উষ্ণ হয়ে ওঠে। বায়ুর চাপীয় ঢাল অনুযায়ী নিরক্ষীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয় এবং উভয় গােলার্ধে এই উপক্লান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্ল থেকে মেরুবৃ্ও প্রদেশীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। এই দুই বায়ুপ্রবাহ আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে।


[3] প্রতিবন্ধক প্রতীপ ঘূর্ণবাত: ট্রপােস্ফিয়ারের উর্ধ্বাংশে বায়ুর ঊধ্বর্গামী প্রবাহ বাধা পেয়ে বাইরের দিকে ছড়িয়ে পড়ে। ফলে, প্রতিবন্ধক ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়। এইরূপ প্রতিবন্ধক ঘূর্ণবাত মৌসুমি বায়ুর সৃষ্টিতে সর্বাধিক প্রভাব বিস্তার করে।


উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত ও শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাতের পার্থক্য


উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত :


  • 25° থেকে 35° অক্ষরেখার মধ্যে বিস্তৃত উপক্ৰান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।

  • নিরক্ষীয় ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় অঞ্চলের ঊর্ধ্বগামী বায়ু উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চলে নিমজ্জিত হয়। ফলে এই অঞ্চলে বায়ুর চাপ বাড়ে। বায়ুর চাপীয় ঢাল অনুযায়ী উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে বায়ু নিরক্ষীয় নিম্নচাপ ও মেরুবৃত্ত প্রদেশীয় নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

  • উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত অঞ্চলে বায়ুর গতিবেগ ধীর।

  • উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত পৃথিবীর বিশাল অংশ জুড়ে বিস্তৃত।

  • উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাত নিরবচ্ছিন্নভাবে কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাস প্রবাহিত হতে দেখা যায়।

  • উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণ প্রতীপ ঘূর্ণবাতের তীব্রতা বাড়তে থাকে।


শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাত :


  • উচ্চ অক্ষাংশীয় অঞ্চলে বিশেষত হিমমণ্ডলে এবং শীতল নাতিশীতােয় মণ্ডলে অত্যধিক শৈত্যের জন্য অথবা শীতকালে শৈত্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাত সৃষ্টি হয়।

  • হিমমণ্ডলে ও শীতল নাতিশীতােয়মণ্ডলে অত্যধিক শৈত্যের জন্য অথবা শীতকালে শৈত্যের পরিমাণ বৃদ্ধি পেলে ওই অঞ্চলে উচ্চচাপ অঞলের সৃষ্টি হয়। উচ্চচাপ অঞ্চলের শীতল ও ভারী বায়ু বায়ুর চাপীয় ঢাল অনুযায়ী নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে প্রবাহিত হয়।

  • শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাত অঞ্চলে বাতাসের গতিবেগ অপেক্ষাকৃত দ্রুত।

  • শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাতের বিস্তার অপেক্ষাকৃত কম।

  • শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাত প্রবাহের ধারাবাহিকতা অপেক্ষাকৃত কম।

  • উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে শীতল প্রতীপ ঘূর্ণবাতের তীব্রতা কমতে থাকে।