স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করাে। জলজ উদ্ভিদ ও জাঙ্গল উদ্ভিদের মধ্যে পার্থক্য লেখাে।

স্বাভাবিক উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ

মানুষের কোনাে প্রচেষ্টা বা হস্তক্ষেপ ছাড়াই যেসব উদ্ভিদ প্রধানত জলবায়ু, ভূপ্রকৃতি ও মাটির প্রভাবে প্রকৃতিতে জন্মায়, বিকশিত হয় এবং প্রাকৃতিক বাসস্থান গড়ে তােলে, সেইসব উদ্ভিদকে স্বাভাবিক উদ্ভিদ বলে।


উদ্ভিদের সঙ্গে জলের সম্পর্কের ভিত্তিতে বাস্তুবিদগণ উদ্ভিদের শ্রেণিবিভাগ করে থাকেন। এই পরিপ্রেক্ষিতে 1895 খ্রিস্টাব্দে ই. ওয়ারমিং (E. Warming) মাটিতে উপস্থিত জলের পরিমাণের ওপর নির্ভর করে উদ্ভিদকে প্রধান তিনটি শ্রেণিতে ভাগ করেছেন। এগুলি হল- [1] জলজ উদ্ভিদ [2] জাঙ্গল বা মরু উদ্ভিদ [3] সাধারণ উদ্ভিদ বা মেসােফাইট। পরবর্তী সময় ওয়ারমিং উপলব্ধি করেন যে, উদ্ভিদের বৈশিষ্ট্য নির্ধারণে শুধু জল নয়, মৃত্তিকারও বিশেষ গুরুত্ব আছে। তাই জলের চাহিদা ও মৃত্তিকার প্রকৃতি অনুসারে উদ্ভিদ গােষ্ঠীকে পুনরায় নিম্নলিখিতভাবে শ্রেণিবিভাগ করেন—


(১) জনসমৃদ্ধ পরিবেশের উদ্ভিদ : জলজ উদ্ভিদ বা হাইড্রোফাইট (Hydrophytes)।


(২) মরু পরিবেশের উদ্ভিদ : এদের দশটি উপবিভাগে ভাগ করা হয়। এগুলি হল


  • আম্লিক মৃত্তিকার উদ্ভিদ বা অক্সিলােফাইট (Oxilophytes), 

  • বরফাবৃত মৃত্তিকার উদ্ভিদ বা সাইকোলােফাইট(Psycholophytes)

  • লবণাস্বু উদ্ভিদ বা হ্যালােফাইট (Halophytes),

  • পাথরে জন্মানাে উদ্ভিদ বা লিথোফাইট (Lithophytes),

  • নুড়ি ও বালিতে জন্মানাে উদ্ভিদ বা স্যামােফাইট (Psammophytes),

  • পরিত্যক্ত স্থানে জন্মানাে উদ্ভিদ বা চেরসােফাইট (Chersophytes),

  • মরু ও স্টেপ অঞ্চলের উদ্ভিদ বা এরেমােফাইটস(Eremophytes),

  • সাভানা অঞ্চলের উদ্ভিদ বা সিলােফাইটস(Psilophytes),

  • ঝােপ-জঙ্গল বা স্কেরােফাইলাস(Sclerophyllous),

  • সরলবর্গীয় উদ্ভিদ বা কনিফেরাস(Coniferous)


(৩) মাঝারি পরিবেশের উদ্ভিদ : সাধারণ বা মধ্যবর্তী উদ্ভিদ বা মেসােফাইট (Mesophytes)।


জলজ উদ্ভিদ ও জাঙ্গল উদ্ভিদের পার্থক্য


জলজ উদ্ভিদ :

  • আর্দ্র জলবায়ুর উদ্ভিদ।

  • সম্পূর্ণ জলজ পরিবেশে জন্মায়।

  • সাধারণত দীর্ঘমেয়াদি।

  • কোশগুলি বড়াে ও স্পঞ্জের মতাে এবং গহ্বরযুক্ত। কোশের কোনাে প্রকার সংকোচন বা প্রসারণ ঘটে না।

  • কোশগুলি স্পঞ্জের মতাে হওয়ায় এগুলি বায়ুপূর্ণ থাকে, ফলে উদ্ভিদ সহজেই জলে ভেসে থাকতে পারে।

  • এ জাতীয় উদ্ভিদের পাতা তৈলাক্ত।

  • এই প্রকার উদ্ভিদের পাতা বড়াে হয়।

  • প্রস্বেদন ক্রিয়া অনেক বেশি মাত্রায় হয়। স্টোমাটা দিনে খােলা রাখে এবং রাতে বন্ধ রাখে।


জাঙ্গল উদ্ভিদ :

  • মরু ও মরুপ্রায় এবং শুষ্ক জলবায়ুর উদ্ভিদ।

  • বাতাস প্রায় জলীয় বাষ্পহীন, অধিক বাষ্পীভবন ও মাটিতে জলের অভাব প্রকট এমন শুষ্ক বা প্রায় শুষ্ক পরিবেশে জন্মায়।

  • ক্ষণস্থায়ী থেকে দীর্ঘমেয়াদি।

  • কোশগুলির কোনাে নির্দিষ্ট আকার নেই। পরিবেশের সঙ্গে অভিযােজন ঘটানাের জন্য জলের পরিমাণ বাড়লে কোশের প্রসারণ ঘটে এবং হ্রাস পেলে কোশের সংকোচন ঘটে।

  • এরা ভাসমান নয়, এরা স্বস্থানিক।

  • এজাতীয় পাতা মােমজাতীয় পদার্থ দিয়ে আবৃত থাকে।

  • এদের পাতা সরু কাঁটায় পরিণত হয়।

  • প্রস্বেদন ক্রিয়া অনেক কম। স্টোমাটা দিনে বন্ধ রাখে এবং রাতে খােলা রাখে।