মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।

মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য

আরবি শব্দ ‘মৌসিম' বা মালয় শব্দ 'মনসিন' থেকে মৌসুমি শব্দের উৎপত্তি। এর অর্থ হল ঋতু। ঋতুভেদে দিক পরিবর্তনকারী সাময়িক বায়ুপ্রবাহকে মৌসুমি বায়ু বলে। এটি আর্দ্র ক্রান্তীয় অঞ্চলের জলবায়ু হলেও, উপক্ৰান্তীয় অঞ্চলের কোনাে কোনাে স্থানে এর অস্তিত্ব লক্ষ করা যায়। এই জলবায়ু নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 10° থেকে 24° অক্ষরেখার মধ্যে বিস্তৃত। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই জলবায়ু 30° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত। মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল一


উষ্ণতা-সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :


  • গড় উষ্ণতা : মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে বার্ষিক গড় উষ্ণতা থাকে প্রায় 24 °সে.।


  • গ্রীষ্মকালীন উষ্ণতা : এই অঞ্চলে গ্রীষ্মকালীন গড় তাপমাত্রা থাকে 27 °সে. থেকে 32 °সে.। উত্তর ভারতে এই তাপমাত্র 38 °সে. থেকে 49 °সে. পর্যন্ত হয়ে থাকে। দেশের অভ্যন্তরে দিনেরবেলা তাপপ্রবাহ চলে। প্রখর গ্রীষ্মে সমগ্র উত্তর ভারত লু-এর কবলে পড়ে।


  • উষ্ণতার তারতম্য : গ্রীষ্মকালে বর্ষা আসার আগে উষ্ণতা সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছােয়। বর্ষার শুরুতে উষ্ণতা কিছুটা কমে যায়।


  • শীতকালীন উষ্ণতা : এই অঞ্চলে শীতকালে গড় তাপমাত্রা 10 °সে. থেকে 27 °সে,-এর মধ্যে ঘােরাফেরা করে। উচ্চ অক্ষাংশে এই তাপমাত্রা হিমাকে অথবা হিমাঙ্কের কাছা- কাছি চলে আসে। কোনাে কোনাে স্থানে শৈত্যপ্রবাহ চলল।


  • উষ্ণতার প্রসর : এই অঞ্চলের বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর প্রায় 10 °সে. থেকে 20 °সে.। দিন রাতে উষ্ণতার প্রসরও বেশি। উপকূলবর্তী অঞ্চল অপেক্ষা দেশের অভ্যন্তরে উষ্ণতার প্রসর অনেক বেশি।


বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ-সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :


  • নিম্নচাপ সৃষ্টি : গ্রীষ্মকালে এশিয়ার থলভাগ অধিক উষ্ণ হওয়ায় এই অঞ্চলে গভীর নিম্নচাপ সৃষ্টি হয় এবং ভারত মহাসাগরে সৃষ্টি হয় উচ্চচাপ। বায়ুচাপের পার্থক্যের জন্য সমুদ্রের ওপর অবস্থিত উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে জলীয় বাম্পপূর্ণ সামুদ্রিক বায়ু নিরক্ষরেখা অতিক্রম করে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রবেশ করে। ভারতে এটি দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত। শীতকালে স্থলভাগের উচ্চচাপ অঞ্চল থেকে সমুদ্রের নিম্নচাপ অঞ্চলের দিকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ুপ্রবাহ শীতকালীন মৌসুমি বায়ু নামে পরিচিত।


  • অনিশ্চিত আগমন : মৌসুমি বায়ুর আগমন ও প্রত্যাগমনকাল সর্বদা সুনির্দিষ্ট নয়। নির্দিষ্ট সময়ের আগে বা পরে ঘটে থাকে।


  • বায়ুমণ্ডলীয় গােলযােগ : বর্ষার প্রারম্ভে বিকালের দিকে ক্ষণস্থায়ী বায়ুমণ্ডলীয় গােলযােগ দেখা যায়। এগুলি পশ্চিমবঙ্গ, আসাম ও ওডিশায় কালবৈশাখী, দক্ষিণ ভারতে আবৃষ্টি এবং রাজস্থানে আঁধি নামে পরিচিত।


  • চাপবলয়ের স্থানান্তর : শীতকালে ITCZ নিরক্ষরেখার আরও দক্ষিণে সরে গেলে বায়ুর চাপবলয়গুলিও একটু একটু করে দক্ষিণে সরতে থাকে। ফলে উত্তর ভারত ওই সময় পশ্চিমাবায়ুর দ্বারা প্রভাবিত হয়। এই কারণে ভূমধ্যসাগর থেকে আগত জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ু উত্তর ভারতে ঝড়, বৃষ্টি ও তুষারপাত ঘটায়।


বৃষ্টিপাত-সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :


  • বর্ষাকালীন বৃষ্টিপাত : এই অঞ্চলে মােট বাৎসরিক বৃষ্টিপাতের প্রায় 90 শতাংশ বর্ষাকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর দ্বারা ঘটে থাকে।


  • ঘূর্ণিঝড়ের আগমন : বর্ষার মাসগুলিতে প্রায়ই ঘূর্ণিঝড় হয়ে থাকে।


  • বৃষ্টিপাতের সময় ও পরিমাণ অনিশ্চিত : বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ও সংঘটনকাল অনিশ্চিত। বৃষ্টিপাত সর্বত্র সমহারে বণ্টিত হয় না। এল নিনাের বছরগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম। সমুদ্রের উপকূলবর্তী অঞ্চলগুলিতে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি, কিন্তু দেশের ভেতরের দিকে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ কম।


  • গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ : বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 150 সেমি থেকে 200 সেমি।


  • বন্যা ও খরার আবির্ভাব : মৌসুমি বায়ুর খামখেয়ালিপনায় অধিক বৃষ্টিপাতের জন্য কোথাও বন্যা দেখা দেয়, আবার অনাবৃষ্টির জন্য কোথাও কোথাও খরার আবির্ভাব ঘটে।


  • স্বল্পকালীন শুষ্ক ঋতু : এই জলবায়ুতে একটি স্বল্পকালীন শুষ্ক ঋতু বিরাজ করে।


ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান নির্দেশ করাে। এই জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুঙ্ক ও শীতকাল আর্দ্র হয় কেন?


কোপেনকৃত জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগটি উল্লেখ করাে। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে পর্ণমােচী উদ্ভিদের অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে—ভৌগােলিক কারণ ব্যাখ্যা করাে।


নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)