নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।

নিরক্ষীয় জলবায়ু অঞ্চলের বৈশিষ্ট্য

নিরক্ষরেখার উভয় দিকে 5° - 10° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষরেখার মধ্যে এই জলবায়ু বিরাজ করে বলে এটি নিরক্ষীয় জলবায়ু নামে পরিচিত। এই জলবায়ু ক্রান্তীয় বৃষ্টি-অরণ্য জলবায়ু ও ক্রান্তীয় উষ্ণ-আর্দ্র জলবায়ু নামেও পরিচিত। এই অঞ্চলে সূর্যরশ্মি সারা বছর প্রায় লম্বভাবে পড়ে বলে সারাবছরই এই অঞ্চলের উষ্ণতা বেশি থাকে এবং পরিচলন প্রক্রিয়ায় এই অঞ্চলে সারাবছর প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে বলে এখানে একটিমাত্র ঋতু—উষ্ণ-আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে। ঋতুবৈচিত্র্যহীন এই জলবায়ুর বৈশিষ্ট্যগুলি হল一


উষ্ণতা-সাক্ৰান্ত বৈশিষ্ট্য :


  • বাৎসরিক উষ্ণতার প্রসর : এই অঞ্চলে মধ্যাহ্ন সূর্য সারা বছর প্রায় মাথার ওপর অবস্থান করে এবং দিন ও রাত্রির পার্থক্যও প্রায় একই থাকে। তাই এই অঞ্চলে বাৎসরিক উষ্ণতার পার্থক্য বা প্রসর তেমন থাকে না, মাত্র 2 °সে. থেকে 3 °সে.।


  • গড় মাসিক উষ্ণতা : এই অঞ্চলের গড় মাসিক উষ্ণতা 24 °সে. থেকে 27 °সে, হয়ে থাকে।


  • দৈনিক উষ্ণতার প্রসর : এই অঞ্চলে বাৎসরিক উষ্ণতার পার্থক্য কম হলেও দৈনিক উষ্ণতার প্রসর অনেক বেশি, প্রায় 5 °সে. থেকে 20 °সে.। ফলে রাতে কিছুটা শীত অনুভূত হয়।


  • রাতে উষ্ণতা হ্রাস : রাতের বেলা বায়ুর উষ্ণতা কমে যায় বলে ভােরের দিকে আকাশ কুয়াশায় ঢেকে যায় এবং শিশির জমে।


  • আয়ন বায়ুর আগমন : সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সময় নিরক্ষীয় নিম্নচাপ বলয়ের স্থান পরিবর্তন ঘটলে কোনাে কোনাে স্থানে আয়ন বায়ুর অনুপ্রবেশ ঘটে। ফলে কিছুটা আরামবােধ হয়।


  • উষ্ণ-আর্দ্র খবর উপস্থিতি : এই অঞ্চলে উয়তার তেমন প্রসর থাকে না বলে একটি মাত্র ঋতু—উষ্ণ-আর্দ্র ঋতু বিরাজ করে।


বায়ুর চাপ ও বায়ুপ্রবাহ-সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :


  • স্থায়ী নিম্নচাপ অঞ্চল : সারাবছর অধিক উয়তার জন্য এই অঞ্চলে একটি স্থায়ী নিম্নচাপ অঞ্চলের সৃষ্টি হয়েছে। এখানে বায়ুর গড় চাপ 1000 - 1012 মিলিবারের মধ্যে।


  • মৃদু চাপটাল : এই অঞ্চলে বায়ুর চাপটাল খুব কম। সেই কারণে বায়ু প্রায় গতিহীন। তাই এই অঞ্চল নিরক্ষীয় শান্তমণ্ডল (Equatorial Doldrums) নামে পরিচিত।


  • পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি : তীব্র সূর্যকিরণের জন্য এই অঞ্চলের বায়ুতে পরিচলন স্রোতের সৃষ্টি হয়। ঊর্ধ্বমুখী বায়ু প্রসারিত হয়ে শীতল ও ঘনীভূত হয়। ফলে এই অঞ্চলে পরিচলন প্রক্রিয়ায় প্রচুর বৃষ্টিপাত ঘটে।


  • অভিসারী অঞ্চলের সৃষ্টি : উত্তর-পূর্ব ও দক্ষিণ-পূর্ব আয়ন বায়ু এই অঞ্চলে মিলিত হয়ে আন্তঃক্রান্তীয় অভিসারী অঞ্চল (Inter-Tropical Convergence Zone বা ITCZ) সৃষ্টি করে।


  • দমকা হাওয়ার আগমন : মাঝে মাঝে বজ্রপাতের সঙ্গে দমকা হাওয়া অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরমের কষ্ট কিছু লাঘব করে।


মেঘাচ্ছন্নতা ও বৃষ্টিপাত সংক্রান্ত বৈশিষ্ট্য :


  • কিউমুলােনিম্বাস মেঘের উপস্থিতি : সারাবছরই এই অঞ্চলের আকাশ কিউমুলােনিম্বাস মেঘে ঢাকা থাকে।


  • বজ্রবিদ্যুৎসহ বৃষ্টিপাত : সাধারণত রাত্রিবেলা ও সকালবেলা আকাশ মেঘমুক্ত থাকে। দুপুরের কিছু আগে থেকে আকাশে মেঘ জমতে শুরু করে এবং বিকাল 3 টে থেকে 4 টের মধ্যে বজ্রবিদ্যুৎসহ প্রবল বৃষ্টিপাত হয়। এই জন্য এইরূপ বৃষ্টিপাতকে Four o'clock Rain বলে।


  • গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত : গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 250 সেমি। এই অঞ্চলে শুষ্কতম মাসেও 6 সেমির বেশি বৃষ্টিপাত হয়।


  • বৃষ্টিপাতের অসম বণ্টন : বৃষ্টিপাতের বণ্টন সর্বত্র সমান নয়। পেরুর ইকুইটসে গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাতের পরিমাণ প্রায় 261 সেমি, কিন্তু আকাসায় এর পরিমাণ প্রায় 365 সেমি। আফ্রিকার ক্যামেরুন পর্বতের পাদদেশে এর পরিমাণ 1,000 সেমি। স্থলভাগ অপেক্ষা জলভাগে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি।


  • বজ্রঝড়ের উপস্থিতি : বৃষ্টিপাতের সময় বজ্রঝড় হয়ে থাকে। এই অঞ্চলের সর্বত্র বছরে প্রায় 75-150 দিন বজ্রঝড় হয়ে থাকে।


  • বৃষ্টিবলয়ের স্থানান্তর : সূর্যের উত্তরায়ণ ও দক্ষিণায়নের সঙ্গে সঙ্গে বৃষ্টি বলয়ও উত্তর ও দক্ষিণে সরে যায়। তাই, নিরক্ষরেখার কাছাকাছি স্থানের উয়তা ও বৃষ্টিপাত-সূচক লেখচিত্রে দুটি শীর্ষ দেখা যায়।


  • সর্বাধিক বর্ষণ দিন : নিরক্ষীয় অঞ্চলে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যেমন বেশি, তেমনি এই অঞ্চলে বর্ষণ দিনের সংখ্যাও বেশি। এই অঞ্চলে বছরে 200 থেকে 300 দিন বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।


ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান নির্দেশ করাে। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল আর্দ্র এবং শীতকাল শুষ্ক ব্যাখ্যা করাে।


ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু অঞ্চলের অবস্থান নির্দেশ করাে। এই জলবায়ু অঞ্চলে গ্রীষ্মকাল শুঙ্ক ও শীতকাল আর্দ্র হয় কেন?


কোপেনকৃত জলবায়ুর শ্রেণিবিভাগটি উল্লেখ করাে। মৌসুমি জলবায়ু অঞ্চলে পর্ণমােচী উদ্ভিদের অরণ্য সৃষ্টি হয়েছে—ভৌগােলিক কারণ ব্যাখ্যা করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)