আরােহণ ও অবরােহণ পদ্ধতি সম্বন্ধে আলােচনা করাে।

আরােহণ

যে প্রক্রিয়ায় নদীর ক্ষয়জাত ও পরিবাহিত সমস্ত পদার্থের পুঞ্জীভবন (Accumulation) ও সঞ্চয় (Deposition) ঘটে থাকে তাকে নদীর আরােহণ (Aggradation) বলে।


কারণ : নদীর আরােহণ ঘটে থাকে নদীর বিস্তৃত মৃদু ঢাল অংশে এবং প্লাবনভূমিতে ঢাল খুব কম হওয়ায় বােঝা অপসারণের হার অপেক্ষা পলি দ্রুত নদীগর্ভে থিতিয়ে পড়ে। কোনাে কারণে নদীতে বােঝার পরিমাণ বেড়ে গেলে নদীর বােঝা বহনক্ষমতা কমে যায়। তখন নদীগর্ভে পলি সঞ্চিত হয়। নদীবক্ষ ভরাট হতে হতে অনেক চর-এর সৃষ্টি হয়। তখন নদীর জল অনেকগুলি শাখায় ভাগ হয়ে বিভিন্ন খাতে বইতে থাকে, যাকে নদীর প্রতিসারী প্রবাহ (Divergent Flow) বলা হয়। এর ফলে নদীর বহনক্ষমতা আরও কমে যায় ও সঞ্চয় প্রক্রিয়া ঘটে থাকে।


ফলাফল : ভূমির ঢাল হ্রাস পায় ও সমভূমি গঠিত হয় বিভিন্ন ধরনের সঞ্চয়জাত ভূমিরূপ যেমন দ্বীপ, পলিগঠিত শঙ্কু, স্বাভাবিক বাঁধ, প্লাবনভূমি ইত্যাদি গড়ে ওঠে।


অবরােহণ

বহির্জাত প্রক্রিয়াসমূহের মধ্যে যেসব প্রক্রিয়া ভূপৃষ্ঠের উঁচু স্থানগুলিকে নগ্ন করার (Denudate) মাধ্যমে নিম্ন ক্ষয়ের শেষ সীমায় নিয়ে আসে অর্থাৎ ভূমিভাগের উচ্চতার হ্রাস ঘটায় তাকে অবরােহণ (Degradation) বলে। আবহবিকার, ভর অপসারণ বা পুঞ্জিত স্খলন (Mass Wasting) ও ক্ষয়সাধন—অবরােহণে প্রধান ভূমিকা পালন করে। তবে নদীর ক্ষয়কাজের ফলে অবরােহণ সবচেয়ে বেশি হয়। তাই অবরােহণ বলতে সাধারণত নদীর ক্ষয়কাজকে বােঝায়। নদী যান্ত্রিক (ঘর্ষণ, অবঘর্ষ, লম্ফদান) ও রাসায়নিক (দ্রবণ) প্রক্রিয়ায় ক্ষয় করে থাকে।


কারণ : অবরােহণের মাত্রা নির্ভর করে নদীর শক্তির (Energy) ওপর ও ভর সঞলনের পরিমাণের ওপর। আবহবিকার এই প্রক্রিয়াগুলিকে পরােক্ষভাবে সাহায্য করে। বৃষ্টিপাতের পরিমাণ, তাপমাত্রার হ্রাসবৃদ্ধি, উচ্চতা, ভূমির ঢাল, শিলার ধরন, মাটির প্রকৃতি, উদ্ভিদ আচ্ছাদনের পরিমাণ, অববাহিকার, ভূ-আলােড়নজনিত উত্থান এবং বর্তমানে প্রবলভাবে মানুষের প্রভাব ইত্যাদি প্রধান নিয়ন্ত্রক হিসেবে কাজ করে।


ফলাফল : ভূমির উত্তল ও অবতল ঢাল তৈরি হয়, ঢালের পশ্চাৎ অপসারণ ঘটে এবং এর মান বেড়ে যায়। বিভিন্ন প্রকার ক্ষয়জাত ভূমিরূপ তৈরি হয়। ভূপৃষ্ঠের উঁচুনীচু অবস্থা ক্রমশ মসৃণতা লাভ করে।