ক্রান্তীয় মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর পার্থক্য লেখাে | গ্রিনহাউস প্রভাব বলতে কী বােঝ?

ক্রান্তীয় মৌসুমি ও ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর পার্থক্য


ক্রান্তীয় মৌসুমি জলবায়ু :

  • নিরক্ষরেখার উভয়দিকে 10° থেকে 24° অক্ষরেখার মধ্যে বিস্তৃত। তবে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় এই জলবায়ু 30° উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।


  • গ্রীষ্মকালীন গড় উষ্ণতা থাকে 27°সে. থেকে 32°সে. পর্যন্ত। শীতকালীন গড় উষ্ণতা থাকে 10°সে. থেকে 27°সে. পর্যন্ত। বার্ষিক উষ্ণতার প্রসর 10 °সে. থেকে 20 °সে. পর্যন্ত হয়।


  • বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 150 সেমি থেকে 200 সেমি হয়। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ বেশি (প্রায় 90 শতাংশ)। শীতকালে সামান্য বৃষ্টিপাত হয়।


  • উঁচু পার্বত্য অঞ্চল বাদে কোথাও তুষারপাত হয় না।


  • গ্রীষ্মকালে এই অঞ্চলের ওপর লম্বভাবে সূর্যরশ্মি পড়ে বলে স্থলভাগের ওপর নিম্নচাপ বিরাজ করে। শীতকালে তির্যকভাবে সূর্যরশ্মি পড়ে বলে স্থলভাগের ওপর উচ্চচাপ বিরাজ করে। উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু এবং শীতকালে উত্তর-পূর্ব মৌসুমি বায়ু প্রবাহিত হয়।


  • পর্ণমােচী উদ্ভিদ (যেমন শাল, সেগুন, পলাশ, আম, জাম, নিম, বট); চিরহরিৎ উদ্ভিদ (যেমন-মেহগনি, আবলুস); কাঁটাঝােপ ও গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ এবং ম্যানগ্রোভ জাতীয় উদ্ভিদ (যেমন-সুন্দরী, গরান, গেঁওয়া) ইত্যাদি জন্মায়।


ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ু :

  • উভয় গােলার্ধে মহাদেশগুলির পশ্চিমপ্রান্তে 30° থেকে 45° উত্তর ও দক্ষিণ অক্ষাংশ পর্যন্ত বিস্তৃত।


  • গ্রীষ্মকালীন গড় উয়তা থাকে 21 °সে. থেকে 27 °সে. পর্যন্ত। শীতকালীন গড় উয়তা থাকে 4°সে. থেকে 10 °সে. পর্যন্ত। বার্ষিক উয়তার প্রসর 11 °সে. থেকে 17 °সে. পর্যন্ত হয়।


  • বাৎসরিক গড় বৃষ্টিপাতের পরিমাণ 35 সেমি থেকে 90 সেমি হয়। গ্রীষ্মকালে বৃষ্টিপাত প্রায় হয় না। শীতকালেই প্রধানত বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে।


  • এই জলবায়ু অঞ্চলের অন্তর্গত বহু জায়গায় তুষারপাত হয়।


  • জলবায়ু অঞ্চলটিতে উপক্রান্তীয় উচ্চচাপ বলয়ের অবস্থান লক্ষ করা যায়। উত্তর গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে আয়ন বায়ু এবং দক্ষিণ গােলার্ধে শীতকালে পশ্চিমা বায়ু প্রবাহিত হয়। উত্তর গােলার্ধে শীতকালে পশ্চিমা বায়ু এবং দক্ষিণ গােলার্ধে গ্রীষ্মকালে আয়ন বায়ু প্রবাহিত হয়। বিভিন্ন স্থানীয় বায়ুপ্রবাহ যেমন-খামসিন, সিরকো, ঘিবলি, মিস্ট্রাল, বােরা প্রভৃতি এই জলবায়ু অঞ্চলে দেখা যায়।


  • ওক, কর্ক, জলপাই, ইউক্যালিপটাস প্রভৃতি গাছ জন্মায়। কিছু সরলবর্গীয় উদ্ভিদ-পাইন, ফার, সিডার ইত্যাদি দেখা যায়। গুল্মজাতীয় উদ্ভিদ যেমন—রােজমেরি, লরেল, ল্যাভেনডার ইত্যাদি জন্মায়।


গ্রিনহাউস প্রভাব


আধুনিককালে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড, মিথেন, নাইট্রোজেন অক্সাইড, ক্লোরােফ্লুরােকার্বন, জলীয়বাল্প ইত্যাদি গ্রিনহাউস গ্যাসের মাত্রাতিরিক্ত ঘনত্ব বৃদ্ধির জন্য এই গ্যাসগুলি মিলিতভাবে বায়ুমণ্ডলে চাঁদোয়ার মতাে একটি গ্যাসীয় স্তরের সৃষ্টি করে এবং এই স্তর গ্রিনহাউসের মতাে আচরণ করে। এর ফলে পৃথিবীর গড় তাপমাত্রা বেড়ে যায় এবং এই তাপমাত্রা বৃদ্ধির ঘটনাকে গ্রিনহাউস প্রভাব বলে।