বিশ্বের জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকা লেখাে।

জলবায়ু পরিবর্তনে মানুষের ভূমিকা

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণ সম্পর্কে বিজ্ঞানীদের মধ্যে মদভেদ আছে। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলিকে মূলত দুই ভাগে ভাগ করা যায়— [1] অপার্থিব কারণ [2] পার্থিব কারণ, এই পার্থিব কারণকে আবার দুটি ভাগে ভাগ করা যায়—

  • প্রাকৃতিক কারণ এবং 

  • অপ্রাকৃতিক বা মনুষ্যসৃষ্ট কারণ।


বর্তমানে বিশেষত শিল্প বিপ্লবের পর থেকে অত্যধিক উন্নোয়ন ও অবিবেচনামূলক কাজকর্মের জন্য জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানগুলির ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। আর এর জন্য সম্পূর্ণরূপে দায়ী মানুষের বিচারবিবেচনাহীন কার্যকলাপ। মানুষের বিভিন্ন অপরিণামদর্শী কাজকর্মের জন্য বিপুল পরিমাণে বিভিন্ন গ্রিনহাউস গ্যাস পরিবেশে মিশ্রিত হচ্ছে। যার ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। প্রত্যক্ষ বা পরােক্ষভাবে মানুষের যেসব কর্মকাণ্ডের জন্য এসব ঘটেছে, সেগুলি হল


[1] অত্যধিক জীবাশ্ম জ্বালানির দহন : বিভিন্ন জীবাশ্ম জ্বালানী বিশেষত কয়লার অত্যধিক দহনের ফলে বিপুল পরিমাণে কার্বন মনােক্সাইড এবং কার্বন ডাইঅক্সাইড বাতাসে মিশেছে। শিল্প, কলকারখানা, যানবাহন ইত্যাদি স্থানে যে বিপুল পরিমাণ কয়লা দহন করা হয়, তা থেকে বিভিন্ন ক্ষতিকারক গ্যাসগুলি বাতাসে মেশে। এর মধ্যে বেশিরভাগ ্যাস যেমন— CO২, SO২, NO২, CO ইত্যাদি গ্রিনহাউস প্রকৃতির গ্যাস। ফলে বায়ুমণ্ডলের তাপমাত্রা উত্তরােত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।


[2] অবিবেচনাপ্রসূত বৃক্ষচ্ছেদন : গাছ CO২ শােষণ করে এবং O২ ত্যাগ করে পৃথিবীতে কার্বন ডাইঅক্সাইড এবং অক্সিজেনের ভারসাম্য বজায় রাখে। কিন্তু অত্যধিক পরিমাণে বৃক্ষচ্ছেদন করার ফলে বায়ুমণ্ডলে কার্বন ডাইঅক্সাইড-এর পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলস্বরূপ বায়ুমণ্ডলের উয়তা বৃদ্ধি পাচ্ছে।


[3] খনিজ তেলের অত্যধিক ব্যবহার : অত্যধিক খনিজ তেলের ব্যবহার বায়ুমণ্ডলে CO২ এর পরিমাণ বৃদ্ধি করছে এবং জলবায়ু পরিবর্তনে সহায়তা করে।


[4] দ্রুত নগরায়ণ : মানুষের চাহিদা মেটাতে অত্যধিক দ্রুতহারে নগরায়ণের ফলে ইট, সিমেন্ট, পাথর, লােহার আচ্ছাদনের পরিমাণ বাড়ছে। এইসব পদার্থ বেশি পরিমাণ তাপ শােষণ ও বিকিরণের মাধ্যমে বায়ুমণ্ডল উত্তপ্ত করে তুলছে।


[5] অত্যধিক দ্রুতহারে শিল্পায়ণ : শিল্পায়ণের ফলে স্থাপিত বিভিন্ন কলকারখানার ধোঁয়া ও আবর্জনার উৎক্ষেপণের ফলে বায়ুমণ্ডলে উয়তা ও দূষণ উভয়ই বৃদ্ধি পাচ্ছে।


[6] অত্যধিক ক্লোরােফ্লুরােকার্বন উৎগাদন : CFC একটি উল্লেখযােগ্য গ্রিনহাউস গ্যাস। বর্তমানে রেফ্রিজারেটর, এয়ার কন্ডিশনার ইত্যাদি অত্যধিক ব্যবহারের ফলে প্রচুর পরিমাণে CFC উৎপাদিত হয়, যা জলবায়ু পরিবর্তনে এবং ওজোন ক্ষয়ে সক্রিয় ভূমিকা গ্রহণ করে।


[7] পরিকল্পনাহীনভাবে বর্জ্য পদার্থের নিক্ষেপ : বিভিন্ন হাসপাতাল ও কলকারখানার বর্জ্য পদার্থ থেকে উৎপন্ন মিথেন বায়ুর উয়তা বৃদ্ধিতে সহায়ক।


[8] সার্বিক সচেতনতার অভাব : সর্বোপরি বলা যায় যে জলবায়ুর পরিবর্তন ও তার ভয়াবহতা সম্পর্কে মানুষের সচেতনতার অভাব, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণগুলিকে বাড়িয়ে তুলেছে।


ওজোন স্তর সংরক্ষণের জন্য কী কী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে? গ্রিনহাউস প্রভাব ও বিশ্ব উন্নয়ন-এর মধ্যে সম্পর্ক ব্যক্ত করাে।


গ্রিনহাউস গ্যাসগুলির উৎস সম্পর্কে আলােচনা করাে। গ্রিনহাউস গ্যাস নিয়ন্ত্রণের উপায়গুলি কী কী?


গ্রিনহাউস গ্যাস বৃদ্ধির ফলাফল বা প্রভাবগুলি কী কী।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)