উদাহরণসহ জীবনধারণভিত্তিক কৃষির বন্টন ও বৈশিষ্ট্য আলােচনা করাে।

প্রধানত ভরণপােষণের তাগিদে গ্রাম্য পরিবেশে যে কৃষিকাজের দ্বারা কৃষক তার পারিবারিক সদস্যদের এবং স্থানীয় জনগণের খাদ্যের চাহিদা পূরণ করে তাকে জীবনধারণভিত্তিক কৃষি বা জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি বলে। স্থানান্তর কৃষি, স্থায়ী কৃষি এবং নিবিড় কৃষি প্রণালীগুলি জীবণধারণভিত্তিক কৃষির অন্তর্গত।


জীবনধারণভিত্তিক কৃষির বণ্টন

(১) যাযাবরী বা স্থানান্তর কৃষি প্রণালী ক্রান্তীয় বৃষ্টিবহুল জলবায়ু অঞ্চলে দেখতে পাওয়া যায়। এই কৃষিব্যবস্থার অন্তর্গত দেশগুলি হল— আফ্রিকার দক্ষিণ-মধ্যাংশ, দক্ষিণ ও মধ্য আমেরিকা এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অধিবাসী সম্প্রদায়ের মধ্যে বেশি প্রচলিত। ভারতের উত্তর-পূর্বের পার্বত্য অঞ্চলের রাজ্যগুলিতে এবং ওডিশা, অবিভক্ত অন্ধ্রপ্রদেশ, কেরল ও মধ্যপ্রদেশের পাহাড়ি অঞ্চলগুলিতে এই কৃষিব্যবস্থা দেখা যায়।


(২) স্থায়ী কৃষি প্রণালী পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে দেখা যায়। যেমন-দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডে, মধ্য ও দক্ষিণ-পূর্ব আফ্রিকাতে, মধ্য আমেরিকার হাইতিতে এবং ক্রান্তীয় বৃষ্টি অরণ্যের প্রান্তভাগে।


(৩) নিবিড় বা প্রগাঢ় কৃষি পদ্ধতি প্রচলিত আছে দক্ষিণ, দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ার দেশগুলিতে, উত্তর আমেরিকার মেক্সিকো, দক্ষিণ আমেরিকার ব্রাজিলের পূর্বভাগ, নীলনদ অববাহিকা, উত্তর-পশ্চিম ইউরােপ ও ভূমধ্যসাগরের তীরবর্তী দেশগুলির কিছু অংশে।


জীবনধারণ ভিত্তিক কৃষির বৈশিষ্ট্য


(১) স্থানান্তর ও স্থায়ী কৃষি


  • স্থানান্তর ও স্থায়ী কৃষিতে জমির স্বাভাবিক উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে বৃষ্টিপাতের ওপর নির্ভর করে কৃষিকাজ করা হয়।

  • জঙ্গল পুড়িয়ে পরিস্কার করে জমি তৈরি করা হয় কিংবা অনুন্নত এলাকাগুলিতে স্থায়ী জমিতে চাষ করা হয়।

  • প্রাচীন পদ্ধতিতে পুরােনাে যন্ত্রপাতির সাহায্যে চাষবাস করা হয়। জমি কর্ষণে জৈব শক্তির সঙ্গে কায়িক শ্রমও প্রয়ােগ করা হয়। জমিতে জৈব সারের ব্যবহার বেশি হয়।

  • কেবলমাত্র খাদ্যশস্যের চাষ হয়। প্রধান ফসল হল ধান, গম, ভুট্টা, জোয়ার, বাজরা, সাবু, কলা প্রভৃতি। এধরনের চাষের ক্ষেত্রে বছরে একবারই ফসল ফলানাে হয়।

  • ফলনের হার খুবই কম। উদ্বৃত্ত শস্য কিছু প্রায় থাকে না। এই কৃষিব্যবস্থায় যুক্ত কৃষকদের আর্থিক সচ্ছলতা কম।


(২) নিবিড় কৃষি


  • কৃষি জোতগুলি খুবই ছােটো। জমির ওপর জনসংখ্যার চাপ খুব বেশি।

  • কম পরিমাণ জমি থেকে প্রচুর পরিমাণে খাদ্যশস্য ফলনের জন্য উচ্চফলনশীল বীজ, সার, কীটনাশক, জলসেচ ইত্যাদির প্রয়ােজন হয় ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।

  • হস্তচালিত যন্ত্রের ব্যবহার যেমন আছে তেমনি প্রচুর কায়িক শ্রমও প্রয়ােজন। এই কৃষি সেজন্য মূলধন ও শ্রমনিবিড়।

  • প্রধান ফসল হল ধান। এ ছাড়া গম, বার্লি, ছােলা, যব প্রভৃতি চাষ করা হয়। কিছু অর্থকরী ফসলেরও চাষ হয়। পুষ্টিকর খাদ্যের জন্য মাছ ধরা, গােরু, মহিষ, ছাগল, হাঁস, মুরগি, মৌমাছি প্রতিপালন করা হয়।

  • জমিতে বছরে দু থেকে তিন বার এবং নদী বদ্বীপগুলিতে বছরে তিনবার ধান চাষ হয়।

  • মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমাণ খুবই কম। উৎপাদিত শস্যের পুরােটাই নিজস্ব প্রয়ােজনে ব্যয় হয়। উদ্বৃত্ত কিছু থাকলে তা স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে।