জীবনধারণভিত্তিক কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে স্থানান্তরের প্রক্রিয়াটি উল্লেখ করাে।

জীবনধারণভিত্তিক কৃষি থেকে বাণিজ্যিক কৃষিতে স্থানান্তর

জীবনধারণভিত্তিক কৃষি কৃষকের নিজস্ব পারিবারিক চাহিদা এবং স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে বলে এই কৃষিতে লাভের পরিমাণ অনেক কম থাকে। যার ফলে কৃষকদের আর্থিক স্বচ্ছলতা বৃদ্ধি পায় না। কিন্তু পরিবর্তিত অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটে অর্থনৈতিক কার্যাবলির অন্যান্য ক্ষেত্রগুলির যেভাবে উন্নতি ঘটছে তার সাথে সংগতি রেখে কৃষিকাজেরও পরিবর্তন ঘটছে। জীবনধারণভিত্তিক কৃষিকে লাভবান করার জন্য ওই ধরনের কৃষিকে বাণিজ্যভিত্তিক করে গড়ে তােলার চেষ্টা করা হচ্ছে। ভারত, চিন, শ্রীলঙ্কা, ভিয়েতনাম-সহ বিভিন্ন উন্নয়নশীল দেশে এই পরিবর্তন যথেষ্ট নজর কেড়েছে। 1990 খ্রিস্টাব্দের পরবর্তী পর্যায়ে বিশ্বায়ন এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি জীবনধারণভিত্তিক কৃষিতে এই অভাবনীয় পরিবর্তন ঘটাতে সাহায্য করেছে। জীবনধারণভিত্তিক কৃষির বাণিজ্যিক চরিত্রে পরিবর্তন দু-ভাবে ঘটেছে- [1] গাঠনিক পরিবর্তন ও [2] সামাজিক পরিবর্তন।


[1] গাঠনিক পরিবর্তন : 1950-এর দশকের পর থেকে জীবনধারণভিত্তিক কৃষিতে ধীরে ধীরে কিছু গাঠনিক পরিবর্তন আসতে শুরু করে। এই পরিবর্তন গুলি হল一


  • বিনিয়ােগ বৃদ্ধি : বর্তমানে জীবনধারণভিত্তিক কৃষিক্ষেত্রে বিনিয়ােগের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। বেরির (Berry) মতানুযায়ী 1950-70-এর দশকের মধ্যে পাঞ্জাব, হরিয়ানায় মূলধন বিনিয়ােগের পরিমাণ ভারতের জনপ্রতি জাতীয় বিনিয়ােগের তুলনায় 35% বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।


  • নতুন উপকরণ সমূহের প্রয়ােগ : বর্তমানে জীবন ধারণভিত্তিক কৃষিতে নতুন উপকরণগুলির যথেষ্ট মাত্রায় প্রয়ােগ বৃদ্ধি পেয়েছে। জলসেচের প্রসার, উচ্চফলনশীল বিভিন্ন বীজের ব্যবহার, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের পরিকল্পিত প্রয়ােগের মাধ্যমে উৎপাদন ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন ঘটেছে। নতুন উপকরণগুলি ব্যবহারের মাধ্যমে ভারতে সবুজ বিপ্লব ঘটায় জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি অনেকটা বাণিজ্যিক প্রকৃতি ধারণ করেছে।


  • পরিকাঠামােগত উন্নয়ন : বিভিন্ন আনুষঙ্গিক পরিকাঠামাে যেমন—পরিবহণ ব্যবস্থার উন্নতি, বিদ্যুৎ সরবরাহের উন্নতি, বিপণন ব্যবস্থার উন্নতি, সহজ শর্তে কৃষিঋণ পাওয়ার সুযােগ ইত্যাদি জীবনধারণভিত্তিক কৃষিকে বাণিজ্যিক কৃষিতে পরিবর্তনে সাহায্য করেছে।


[2] সামাজিক পরিবর্তন : মে সমাজ ব্যবস্থায় জীবনধারণভিত্তিক কৃষি প্রচলিত ছিল সেই সমাজ ব্যবস্থারও ধীরে ধীরে নানা পরিবর্তন ঘটছে। ফলে কৃষির প্রকৃতি জীবনধারণভিত্তিক থেকে বাণিজ্যিক হতে শুরু করেছে। যেমন


  • প্রান্তিক চাষির সংখ্যা হ্রাস : এই কৃষিভিত্তিক এলাকায় প্রান্তিক চাষির সংখ্যা উল্লেখযােগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে।


  • শস্যাবর্তন পদ্ধতির প্রচলন : জীবনধারণভিত্তিক কৃষি এলাকায় দো-ফসলি, তিন-ফসলি শস্য চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। 1970 থেকে 2010 খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত বিগত 40 বছরে ভারতে জীবনধারণভিত্তিক কৃষিতে খাদ্যশস্য হিসেবে ধান চাষের পাশাপাশি সহযােগী শস্য যেমন—ভুট্টা, পাট, মাছ ইত্যাদির চাষও বৃদ্ধি পেয়েছে।


  • চুক্তি চাষ : বিশ্বায়ন এবং উদারীকরণ নীতির প্রসারের ফলে বিভিন্ন দেশে কৃষিতে প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়ােগের পরিমাণ বেড়েছে। জীবনধারণভিত্তিক কৃষিকে চুক্তি চাষের অন্তর্ভুক্ত করায় এর প্রকৃতি ক্রমশ বাণিজ্যভিত্তিক হচ্ছে। ভারতে বিভিন্ন বহুজাতীক সংস্থা (যেমন—স্পেনসার) কৃষকদের সাথে চুক্তির মাধ্যমে কৃষি উৎপাদনের সাথে যুক্ত হয়েছে। যার ফলে ভারতের বহু জায়গার জীবনধারণ ভিত্তিক কৃষি বাণিজ্যিক প্রকৃতি লাভ করেছে।


কৃষিকাজে ব্যবহৃত প্রধান আধুনিক উপকরণগুলি কী কী? কৃষিকাজে আধুনিক উপকরণগুলি ব্যবহারের গুরুত্ব বা সুবিধা এবং সমস্যা বা অসুবিধাগুলি উল্লেখ করাে।


কৃষিকাজে ব্যবহৃত আধুনিক উপকরণগুলি সম্পর্কে আলােচনা করাে।


জীবনধারণভিত্তিক বা জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি এবং বাণিজ্যিক কৃষির মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করাে।


Geography সব প্রশ্ন উত্তর (দ্বাদশ শ্রেণীর)