জীবনধারণভিত্তিক বা জীবিকাসত্তাভিত্তিক কৃষি এবং বাণিজ্যিক কৃষির মধ্যে পার্থক্য উল্লেখ করাে।
জীবনধারণভিত্তিক ও বাণিজ্যিক কৃষির পার্থক্য
জীবনধারণভিত্তিক কৃষি
প্রধানত ক্রান্তীয় অঞ্চলের জনবহুল এলাকার কৃষিকাজ।
জমির আয়তন ছােটো হয়।
জমিতে জনসংখ্যার চাপ বেশি থাকে।
মাথাপিছু জমির পরিমাণ কম থাকে।
শ্রমিকের মজুরি কম। কৃষিক্ষেত্রে ছদ্ম বেকারত্ব দেখা যায়।
অধিকাংশ কৃষিশ্রমিক নিরক্ষর, কুসংস্কার আচ্ছন্ন এবং কৃষির বেশিরভাগটাই অভিজ্ঞতা নির্ভর।
এই কৃষি শ্রম প্রগাঢ় চরিত্রের কারণ কৃষি শ্রমিক অত্যন্ত সহজলভ্য।
ভারী যন্ত্রপাতি যেমন—ট্রাক্টর, হারভেস্টার ইত্যাদির ব্যবহার প্রায় হয় না, প্রাচীন পদ্ধতিতে চাষ করা হয়।
কৃষিতে মূলধন বিনিয়ােগ প্রয়ােজনের তুলনায় কম।
স্থানীয় চাহিদা পূরণের উদ্দেশ্যে ও নিজেদের জীবনধারণের জন্য এই কৃষিকাজ করা হয়।
প্রধান উৎপাদিত শস্য ধান। এ ছাড়াও বহু-ফসলি পদ্ধতিতে অন্যান্য শস্যের চাষ করা হয়।
কৃষিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের সুস্পষ্ট প্রভাব লক্ষ করা যায়।
মাথাপিছু উৎপাদনর পরিমাণ কম এবং উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণও কম।
যথেষ্ট পরিমাণ অর্থের প্রয়ােজন হয় বলে উৎপাদন ব্যয় বেশি।
উৎপাদিত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণ প্রায় নেই।
বাণিজ্যিক কৃষি
প্রধানত নাতিশীতােয় অঞ্চলের কম জনবহুল এলাকার কৃষিকাজ।
জমির আয়তন বড়াে হয়। যেমন—আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্র গম চাষের জন্য ব্যবহৃত জমি 350 থেকে 800 হেক্টরের মধ্যে হয়।
জমিতে জনসংখ্যার চাপ কম থাকে।
মাথাপিছু জমির পরিমাণ বেশি থাকে।
শ্রমিকের মজুরি অনেক বেশি।
এই কৃষিকাজে নিযুক্ত শ্রমিকরা সুশিক্ষিত, বিজ্ঞানমনস্ক এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি প্রয়ােগে দক্ষ।
এই কৃষি শ্রম প্রগাঢ় চরিত্রের নয়।
আধুনিক উন্নত মানের যন্ত্রপাতি যেমন—ট্রাক্টর, হারভেস্টার ইত্যাদি ব্যবহার করে চাষ করা হয়।
কৃষিতে মূলধন বিনিয়ােগ প্রয়ােজনের তুলনায় বেশি।
বাণিজ্য বা রপ্তানির উদ্দেশ্যেই এই প্রকার কৃষিকাজ করা হয়।
প্রধান উৎপাদিত শস্য গম। মূলত এক-ফসলি পদ্ধতিতে শস্যের চাষ করা হয়।
কৃষিতে প্রাকৃতিক পরিবেশের প্রভাব থাকলেও মানুষের প্রযুক্তি জ্ঞান কার্যকরী ভূমিকা নেয়।
মাথাপিছু উৎপাদনের পরিমাণ বেশি এবং উদ্বৃত্ত ফসলের পরিমাণও বেশি।
প্রাথমিক ব্যয় বেশি হলেও পরবর্তী পর্যায়ে উৎপাদন ব্যয় কম হয়।
উৎপাদিত পণ্যের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অংশগ্রহণই প্রাধান্য পায়।