তুলাে চাষের অনুকূল অবস্থা বর্ণনা করাে।

তুলাে চাষের অনুকূল অবস্থা


(ক) তুলাে চাষের ভৌগােলিক অবস্থা :

(১) জলবায়ু : তুলাে ক্রান্তীয় ও উপক্রান্তীয় জলবায়ু অঞ্চলের ফসল।


উষ্ণতা : তুলাে চাষের জন্য গড়ে 20 °সে. থেকে 25 °সে উষ্ণতা প্রয়ােজন। 16 °সে.-এর কম উয়তা তুলাে চাষের পক্ষে ক্ষতিকর।


বৃষ্টিপাত : তুলাে চাষের জন্য বছরে 65-100 সেমি বৃষ্টিপাত প্রয়ােজন। বৃষ্টিপাত একটানা না হয়ে মাঝে মাঝে হলে ভালাে হয়। এইভাবে গাছ যখন বড়াে হয় এবং তুলাের গুটি বের হয়, তখন শীতল ও শুষ্ক রৌদ্রকরােজ্জ্বল আবহাওয়া প্রয়ােজন। এই সময় প্রচুর বৃষ্টিপাত অথবা উয় আবহাওয়া থাকলে তুলাের গুটিগুলি ঝরে যেতে পারে।


সামুদ্রিক বায়ু : সামুদ্রিক আবহাওয়া তুলাে গাছের পক্ষে হিতকর। সেজন্য দ্বীপ বা সমুদ্র-সন্নিহিত অঞ্চলে তুলাের চাষ ভালাে হয়।


তুষারপাত : তুলাে গাছের জন্য অন্তত 200টি তুহিনমুক্ত দিনের প্রয়ােজন। তা না হলে তুলাে গাছ ও গুটিগুলি নষ্ট হয়ে যায়। এজন্য উত্তর আমেরিকার তুলাে বলয়ের উত্তর সীমা হল 200টি তুহিনমুক্ত দিবসরেখা। ক্রান্তীয় ও উপ-ক্রান্তীয় অঞ্চলে 50 সেন্টিমিটারের কম বৃষ্টিপাতযুক্ত অঞ্চলে সেচ-ব্যবস্থার প্রবর্তন করেও তুলাে চাষ করা হয়।


(২) ভূপ্রকৃতি : সমতল বা সামান্য তরঙ্গায়িত ঢালু ভূমিভাগে তুলাে চাষ ভালাে হয়। সমতল কৃষিক্ষেত্রে যান্ত্রিক পদ্ধতিতেই যে কেবল তুলাে চাষ করা যায় তা নয়, এই কৃষিক্ষেত্র জলসেচের জন্যও সুবিধাজনক। তবে জমিতে জল জমে থাকলে তা তুলাে গাছের পক্ষে ক্ষতিকর। তাই জলনিকাশের জন্য জমিতে সামান্য ঢাল থাকা প্রয়ােজন।


(৩) মৃত্তিকা : তুলাে চাষের জন্য চুনযুক্ত উর্বর দোআঁশ মাটি প্রয়ােজন। কৃয়মৃত্তিকা বা চারনােজেম (Chernozem) জাতীয় মাটি তুলাে চাষের পক্ষে আদর্শ। ভারতের দাক্ষিণাত্যের লাভাজাত কৃয়মৃত্তিকায় তুলাের চাষ ভালাে হয় বলে একে কৃয় তুলাে মৃত্তিকা (Black Cotton Soil) বলে। তুলাে চাষের মাটি যদি উচ্চ জলধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন হয় তবে সেক্ষেত্রে তুলাের গুণগতমান বৃদ্ধি পায়।


(খ) তুলাে চাষের অর্থনৈতিক অবস্থা :


(১) সার : তুলাে গাছ মাটির উর্বরাশক্তি দ্রুত নষ্ট করে দেয় এই কারণে মাটিতে সার দেওয়ার প্রয়ােজন হয়। মাটি থেকে শিকড়ের মাধ্যমে তুলাে গাছ যেসব খনিজ পদার্থ (যেগুলি গাছের খাদ্য) গ্রহণ করে তাদের অধিকাংশ তুলোর বীজে সঞ্চিত হয়। এই কারণে অনেক সময় তুলোর বীজ থেকে আঁশ ছাড়িয়ে নিয়ে সেই বীজ গুঁড়াে করে মাটিতে মিশিয়ে দেওয়া হয়, যাতে মাটির উর্বরাশক্তি কিছুটা বৃদ্ধি পায়। এ ছাড়া অন্যান্য রাসায়নিক সারও ব্যবহার করা হয়।


(২) কীটনাশকের ব্যবহার : তুলাে গাছে পােকার উপদ্রব প্রায় লেগেই থাকে। বিশেষ করে বল-উইভিল (Boll-weevil) নামক একপ্রকার পােকা তুলাে গাছকে নষ্ট করে দেয়। এই পােকার হাত থেকে গাছগুলিকে রক্ষা করতে বিভিন্ন কীটনাশক ওষুধ ব্যবহার করা প্রয়ােজন।


(৩) শ্রমিক : তুলাে গাছ থেকে গুটি তােলা এবং গুটি থেকে তুলাের আঁশ ছাড়াতে প্রচুর সুলভ শ্রমিকের প্রয়ােজন। আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রে যন্ত্রের সাহায্যে গুটি তােলা হয় বটে, কিন্তু তাতে কাঁচা ও পাকা গুটি একসঙ্গে মিশে যায়। ফলে তুলাের উৎকর্ষতা নষ্ট হয়। সুতরাং হাতে করে তুলাের গুটি তােলাই শ্রেয়, এর ফলে কেবল পরিণত গুটিগুলিই তােলা যাবে, যা তুলাের উৎকর্ষতা বৃদ্ধিতে সহায়ক।


(৪) মূলধন : তুলাে চাষে সার, কীটনাশক ওষুধ, জলসেচ এবং আধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয় বলে পর্যাপ্ত মূলধনের প্রয়ােজন।


(৫) পরিবহণ : বাণিজ্যিক ফসল এবং কার্পাস-বয়ন শিল্পের প্রধান কাঁচামাল হওয়ায় বিক্রয়কেন্দ্র এবং শিল্পকেন্দ্রের মধ্যে উত্তম যােগাযােগ ব্যবস্থা তুলাে চাষের উন্নতির পক্ষে সহায়ক।


(৬) চাহিদা বা বাজার : শিল্পোন্নত অথবা ঘন জনবসতিপূর্ণ বাজারের অবস্থান তুলাে চাষের পক্ষে অপরিহার্য।