জে বি ওয়াটসনের পরীক্ষা লেখো

জে বি ওয়াটসনের পরীক্ষা

আচরণবাদী ধারণার উপর ভিত্তি করে ওয়াটসন তার তত্ত্বটি দেন। তিনি বিশ্বাস করতেন, শিশু যে পরিবেশে বড় হয় সেই পরিবেশ তার আচরণের উপর প্রভাব ফেলে।

➽ উপকরণ: ওয়াটসন অনুবর্তন প্রক্রিয়ার মধ্যে তার পরীক্ষাটি করেন। ছােটো ১১ মাসের শিশু (ছেলে) অ্যালবার্ট-এর সাহায্যে পরীক্ষাটি করেন তিনি। তাই তিনি এই পরীক্ষাটির নাম দেন ‘Little Albert Experiment।

➽ পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষণ : ছােট্ট অ্যালবার্টকে বিভিন্ন প্রাণী যেমন— ইদুর, খরগােশের সঙ্গে খেলতে দেওয়া হত। শিশুটি ভয়ও পেত না। কিছু সময় যাবৎ পরীক্ষাটি এইরকম চলার পর ওয়াটসন ও তার সহকারী (স্ত্রী) রােজালি রায়না প্রাণীটির সংযােগে শিশুটি আসা মাত্রই উচ্চ শব্দধ্বনি করতেন। এই শব্দে শিশুটির ভয়সূচক প্রতিক্রিয়া শুরু হল। যতবার শব্দধ্বনির পুনরাবৃত্তি ঘটানাে হচ্ছে সাদা ইদুরটিকে স্পর্শ করা মাত্র ততবারই ভয় পাচ্ছে। এইভাবে অনুবর্তনের মাধ্যমে শিশুটি প্রাণীটিকে দেখামাত্র প্রচণ্ড ভয় পেতে শুরু করল এবং কাদতে লাগল।

➽ সিদ্বান্ত : এই পরীক্ষার দ্বারা ওয়াটসন এই সিদ্ধান্তে আসেন যে, কেবলমাত্র ইতর প্রাণী নয়, মানবশিশুর শিখন প্রক্রিয়াকেও অনুবর্তনের সাহায্যে স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা দেওয়া যায়। অ্যালবার্ট নামক শিশুটির আনন্দের অনুভূতি পরিবর্তিত হয়েছে ভয়ের অনুভূতির অনুবর্তনমূলক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে। এক্ষেত্রে খরগােশ হল অনুবর্তিত উদ্দীপক এবং শিশুটির ভয় পাওয়া অনুবর্তিত প্রতিক্রিয়া।

প্রাক্ষোভিক অনুবর্তনের গুরুত্ব

(১) প্রক্ষোভের সঞ্চালনে সাহায্য করে : শ্রেণিকক্ষে শিক্ষক মহাশয়ের উচিত এমন আকর্ষণীয়ভাবে, শিক্ষাসহায়ক উপকরণ সহযােগে, নাটকীয় বাচনভঙ্গির মাধ্যমে বিষয়বস্তুকে শিক্ষার্থীর সামনে উপস্থাপন করা, যাতে শিক্ষকের বাচনভঙ্গি, আচরণ প্রভৃতি শিক্ষার্থীকে আকৃষ্ট করে। শিক্ষার্থীর এই ভালােলাগা অনুবর্তন ক্রিয়ার মাধ্যমে উক্ত বিষয়ে শিক্ষার্থীকে অনুরক্ত হতে সাহায্য করে এবং শিখনকার্য সার্থকতা পায়।

(২) প্রক্ষোভ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে : অবাঞ্ছিত প্রক্ষোভের জন্য বিদ্যালয়ে যদি শাস্তি পেতে বা তিরস্কৃত হতে হয় তবে ধীরে ধীরে শিক্ষার্থীর মধ্যে প্রক্ষোভের পুনর্গঠন তথা বিকাশ হতে থাকে এবং নতুন প্রক্ষোভ সৃষ্টি হতে বাধ্য।

টেলিস্কোপিক অনুবর্তনের গুরুত্ব

হােলিংওয়ার্থ বলেন। যে, অনুবর্তন প্রক্রিয়া জটিল পরিস্থিতিতে পর্যায়ক্রমে হয় এবং প্রথম উদ্দীপক ও শেষ প্রতিক্রিয়ার মধ্যে সংযােগ স্থাপিত হয়। এই ধরনের অনুবর্তনকে তিনি টেলিস্কোপিক অনুবর্তন বলেন।

(১) শ্রেণি শিখন : এই ধরনের অনুবর্তন শ্রেণি শিখনের ক্ষেত্রে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ।

(২) মনােযােগ : শিক্ষার্থীদের মনােযােগ আনতে শিক্ষক-শিক্ষিকা মহাশয় প্রথম প্রথম জোর করে নানা কৌশল প্রয়ােগ করেন। শ্রেণিতে  ঢুকে শিক্ষক-শিক্ষিকারা প্রথমে বিভিন্নরকম কথার অবতারণা করে, ধীরে ধীরে পাঠোপযােগী পরিবেশ সৃষ্টি করে শিক্ষার্থীদের মনােযােগী করার চেষ্টা করেন।

এভাবেই দেখা যায় দিনের পর দিন এরূপ কৌশলের পর শিক্ষক বা শিক্ষিকা শ্রেণিকক্ষে এলেই শিক্ষার্থীরা মনােযােগী হয়ে যায় এবং শ্রেণি শিখনে অংশগ্রহণ করে। সেক্ষেত্রে রােজ রােজ নতুন বিষয়ের অবতারণার প্রয়ােজন পড়ে না।