স্কটের 'দ্য ট্যালিসম্যান' (The Talisman) উপন্যাসটির সংক্ষিপ্ত পরিচয় দাও।

'দ্য ট্যালিসম্যান' উপন্যাসটির প্রকাশকাল ১৮২৫ খ্রিস্টাব্দ। উপন্যাসের ঘটনাকাল ধর্মযুদ্ধের (Crusade) যুগ, প্রথম রিচার্ডের সময়। মুসলমান অধিকার থেকে তীর্থনগর জেরুজালেম-উদ্ধারার্থ খ্রিস্টানদের সামরিক অভিযান বা জেহাদকে বলা হয় ধর্মযুদ্ধ। উপন্যাসের কাহিনী ইতিহাসের ছায়া অবলম্বনে রচিত।


ইংল্যান্ডের রাজা সিংহহৃদয় রাজা রিচার্ডের (Richard the Lion Hearted) নেতৃত্বে ধর্মযোদ্ধাদের (Crusaders) এক বিরাট বাহিনী জেরুজালেমে শিবির সংস্থাপন করে অবস্থিতি করেছিল। কিন্তু রিচার্ডসহ অন্যান্য দলপতিদের মধ্যে পারস্পরিক মতানৈক্য এবং ঈর্যায় তাঁদের মধ্যেই চলছিল ছিন্নভিন্ন অবস্থা। ওঁদের মধ্যেকার এই অভ্যন্তরীণ সংকটকে আরও ঘনীভূত করল রিচার্ডের অসুস্থতা। ফলে সৈন্যগণও ক্রমশ শক্তিহীন হয়ে পড়তে আরম্ভ করল।


স্যার কেনেথ বা লিওপার্ডের নাইট (Knight) ধর্মযোদ্ধা সেই সময় শিবির থেকে দূরে সারাসনের আমীরের সঙ্গে যুদ্ধে রত ছিলেন, সেই যুদ্ধ চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছুবার আগেই আমীরের সঙ্গে তাঁর বসল দীর্ঘ আলোচনা বৈঠক। এর ফলে উভয়ের মধ্যে গড়ে উঠল পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সমঝোতা। এই আমীর সলদানের প্রেরিত চিকিৎসকের ছদ্মবেশে অসুস্থ রিচার্ডের নিকট খ্রিস্টান শিবিরে এসে উপস্থিত হন এবং রিচার্ডকে সুস্থ করে তোলেন। ইতিমধ্যে একদিন লিওপার্ডের নাইট স্যার কেনেথকে রাত্রিতে ইংরেজ শিবিরের পতাকা রক্ষার দায়িত্ব দেওয়া হয়। কিন্তু রিচার্ডের পত্নী রানী বেরেনগারিয়া একটা বিশেষ খবরের কথা বলে তাকে সেখান থেকে খেলাচ্ছলে ডেকে নিয়ে আসেন। স্যার কেনেথের সেই স্বল্পকালীন অনুপস্থিতির অবসরে তার প্রভুভক্ত শিকারী কুকুরটি আহত হয় এবং ইংরেজ পতাকা হয় ছিন্নভিন্ন। ফলে স্যার কেনেথ অপমানিত হন এবং ওই মূর চিকিৎসকের সহায়তায় রিচার্ডের আদেশে প্রাণদণ্ড থেকে কোনোক্রমে রক্ষা পান। ছদ্মবেশী চিকিৎসক এই আমীর স্যার কেনেথকে ক্রীতদাস হিসেবে রিচার্ডের কাছ থেকে গ্রহণ করেন। আমীর এঁদের সঙ্গে অবশ্য সদয় এবং সম্ভ্রমপূর্ণ ব্যবহারই করেন এবং একজন কৃষ্ণকায় বোবা পরিচারকের ছদ্মবেশে তিনি সার কেনেথকে তাঁর প্রাণ রক্ষাকর্তা রিচার্ড সকাশে প্রেরণ করেন। রিচার্ড তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে ছদ্মবেশী স্যর কেনেথকে চিনতে পারেন এবং স্যার কেনেথের প্রার্থনামতো ওই ইংলিশ পতাকা ছিন্নভিন্ন এবং শিকারী কুকুরকে আহত করার জন্য কে দায়ী তা খুঁজে বের করবার একটা সুযোগ দেন। একদিন খ্রিস্টান রাজবংশীয় পুরুষগণ, সেনাপতিবর্গ ও সৈন্যগণ সমবেত হয়ে যখন পুনঃস্থাপিত ইংরেজ জাতীয় পতাকা অভিবাদন করল, সেই সময় শিকারী কুকুরটি অশ্বারোহী মনফারাটের করেড (Conrade of Montferrat)-এর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। স্যার কেনেথ এবং মনফারাটের মধ্যে হয় দ্বন্দ্বযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে মনফারাট হন আহত এবং পরাজিত। এই সঙ্গে এও জানা যায় যে স্যার কেনেথ হচ্ছেন আসলে স্কটল্যান্ডের যুবরাজ ডেভিড। এর ফলে স্যার কেনেথ-এর সম্ভ্রান্ত বংশীয় পূর্ব প্রণয়ী এডিথ প্লান্টাজেনেটের সঙ্গে মিলনের বাধাও দূর হয়।


ট্যালিসম্যান অর্থ রক্ষাকবচ। এটা হচ্ছে মন্ত্রপূতঃ কবচ, যা দিয়ে আমীর রিচার্ডকে রোগমুক্ত করেন এবং যা স্যার কেনেথকে দান করেন। এর সাহায্যেই স্যার কেনেথ সমস্ত বিপদ-আপদ থেকে ত্রাণলাভ করে তাঁর অভীষ্ট লাভে সমর্থন হন। এই সূত্র থেকেই উপন্যাসটির নাম 'ট্যালিসম্যান'।


উপন্যাসটিতে রয়েছে মধ্যযুগীয় পরিবেশে যুদ্ধ, ষড়যন্ত্র, ধর্মোন্মাদনা, প্রেম, বীরত্ব, আর এর সঙ্গে রয়েছে স্কটের অতুলনীয় ঘটনা বর্ণনা-কৌশল। এরই ফলে উপন্যাসটি সেকালে সাধারণ পাঠকের সপ্রশংস দৃষ্টি লাভ করে এবং পাঠক মহলে সাদরে গৃহীত হয়।