“আর একজনের কথা তাঁর মনে হয়, যিনি নিজের অস্থি দিয়ে মানুষের মনে সবুজতা এনেছিলেন।”—উৎস নির্দেশ করো। কার কথা এখানে বলা হয়েছে? আলোচ্য গল্পে তাঁর প্রসঙ্গ ওঠার কারণ কী?

“পেয়ারার ডাল দিয়ে গুলতি করবার সময় মনে হল, এটা ঠিক ক্রিশ্চানসম্মত কাজ নয়, যদি লাগে পাখীদের।"- উৎস নির্দেশ করো। গুলতি বানানো ক্রিশ্চানসম্মত কাজ নয় কেন?


আলোচ্য অংশটি কমলকুমার মজুমদারের 'মতিলাল পাদরী' নামক ছোটোগল্প থেকে নেওয়া হয়েছে।

মতিলাল পাদরীর একমাত্র আশা আকাঙ্খা ছিল পূর্ণাঙ্গ ক্রিশ্চান হওয়া। ক্রিশ্চান হওয়া মানে রাগ, ঈর্ষা, দ্বেষাদি সমস্ত দোষ থেকে মুক্ত হয়ে মন স্বভাব এবং চরিত্রকে নিত্যসত্ত্ব অবস্থায় স্থাপন করা। অর্থাৎ তখন বিশ্ববাসী সমস্ত মানুষ, পশু, পাখি ইত্যাদি সমস্ত প্রাণীকে নিজের আত্মীয় জ্ঞান করে সহমর্মী হওয়া। কিন্তু পাখি তাড়ানোর জন্যে যখন গুলতি করবার কথা মতিলাল চিন্তা করলেন, তখনই ক্রিশ্চানীয় এই ভাবনা তাঁর মনে সঞ্চারিত হওয়ার ফলে তিনি দ্বিধাগ্রস্ত হয়েছিলেন। কারণ গুলতি দিয়ে পাখিকে আঘাত করলে পাখি বেদনা যেমন পাবে, তেমনি কোনো কোনো পাখি মারাও যেতে পারে। তাই গুলতি বানানো তিনি ক্রিশ্চান সম্মত কাজ নয় বলে মনে করেছিলেন।



'ক্রিশ্চান হবার বাসনা নিয়ে এক টিলা থেকে আর এক টিলায় বহুবার পার হয়েছেন, প্রার্থনা করেছেন। কার কথা বলা হয়েছে? এ কথার তাৎপর্য কী?

আলোচ্য কথাটি মতিলাল পাদরী সম্বন্ধে বলা হয়েছে।

মতিলাল পাদরী চেয়েছিলেন সম্পূর্ণ ক্রিশ্চান হতে। ক্রিশ্চান হওয়া মানে কেবল যিশুখ্রিষ্টকে শ্রদ্ধা করা কিংবা বাইবেল পাঠ ও অনুধ্যান করা নয়। ক্রিশ্চান হওয়া মনে মানবতায় পূর্ণ হওয়া। ঈশ্বরপুত্র যিশু নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে এই শিক্ষাই দিতে চেয়েছিলেন মানুষদের। তাই বলেছিলেন প্রতিবেশীকে সেবা করলে তাঁকেই সেবা করা হবে। মতিলাল এই আদর্শে দীক্ষিত হয়ে তাঁর গির্জার আশে পাশের বহুদূর অঞ্চল পর্যন্ত জনপ্ল্যাণে ব্যাপৃত ছিলেন। তাঁর স্বভাব ছিল বালকবৎ। দৃষ্টি ছিল ক্ষমাসুন্দর। মানুষের কোনো অন্যায় কর্মকেই তিনি দোষাবহ মনে করতেন না। সেই ক্ষমাশীলতা, সেই মহানুভব তা নিয়ে তিনি এক টিলা থেকে অন্য টিলায় বহুবার গিয়েছেন, প্রার্থনা করেছেন কেবলমাত্র মানবতায় পূর্ণ হয়ে মানুষের সেবা করে যিশুর সেবা অভিপ্রায়ে। তাঁর এই অভিপ্রায়কেই এখানে 'ক্রিশ্চান হবার বাসনা' বলা হয়েছে।



“আর একজনের কথা তাঁর মনে হয়, যিনি নিজের অস্থি দিয়ে মানুষের মনে সবুজতা এনেছিলেন।”—উৎস নির্দেশ করো। কার কথা এখানে বলা হয়েছে? আলোচ্য গল্পে তাঁর প্রসঙ্গ ওঠার কারণ কী?

আলোচ্য অংশটি কমলকুমার মজুমদারের ‘মতিলাল পাদরী’ নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। এখানে যিশুখ্রিস্টের স্মরণ প্রসঙ্গে এই কথা বলা হয়েছে।

আলোচ্য গল্পে বর্ষার রাত্রে ভামর যখন গির্জাঘরে এসে পৌঁছেছিল তখন সে আসন্ন প্রসবা। অজ্ঞাত কুলশীল ভামর গির্জা ঘরে সন্তান প্রসব করায়, পাদরী মনে করেছিলেন ভামরের সন্তান রূপে অযাচিতভাবে দুর্যোগের রাত্রে ঈশ্বরের দূত আবির্ভূত হয়েছেন। বাইবেলে বর্ণিত যিশুর জন্মও এই রকমই এক রাত্রে আস্তাবলে হয়েছিল। তিনি এসে মানবতার দীক্ষা দিয়েছিলেন বিশ্ববাসীকে। নিজের জীবন বিপন্ন করে, সমস্ত অত্যাচার সহ্য করে শিখিয়েছিলেন ক্ষমা করার নম্রতা, ভালোবাসার প্রবণতা।



“হে রে মদ্দ যা যা ক্রেশ্চান ক্ষ্যাপা হইছে গো, ড্যাকরা তুই না ক্রেশ্চান, উয়াকে বাঁচা, বাঁচা গাঁ শালা।”—উক্তিটি কার? এই মন্তব্যের কারণ কী?

আলোচ্য উক্তিটি বীণার।

আষাঢ় মাসের বর্ষণ মুখর রাত্রে অজ্ঞাতকুলশীল ভামর যখন গির্জাঘরে এসে সন্তান প্রসব করল, তখন মতিলাল পাদরী ছাড়া আর সকলে বিব্রত ও বিরক্ত হয়েছিল। তারা মনে করেছিল এতে গির্জা ঘরের পবিত্রতা নষ্ট হয়েছে। বীণা দাই সন্তান প্রসব করিয়েছিল, সে যুক্তি দেখিয়েছিল যে, গির্জাঘরের মধ্যে ভামর সন্তান প্রসব করতে পারলে, সেও চুটা (বিড়ি) খেতে পারবে। মতিলাল তখন তাকে যে এসেছে তার মাহাত্ম্য বোঝাতে চেয়েছিলেন। তারপরেই তিনি সকলকে সেই শুভ সংবাদ দেবার জন্যে ঘণ্টা বাজাতে শুরু করলেন। পাদরীর এই কাণ্ড দেখে বিস্মিত বীণা, ফুললকে উক্ত কথাটি বলেছিল। সরল গ্রাম্য চিন্তনে সে পাদরীর অধ্যাত্ম ভাবনাকে স্বাভাবিক ভাবেই স্পর্শ করতে পারেনি। তাই সে পাদরীর আচরণকে ক্ষ্যাপামী মনে করে, ফুললকে এই কথা বলেছিল।



“হাঁসছ বড় যে, কি গো দূতবাবু—জন্ম জন্ম তোমায় গান শুনালাম গো”—উক্তিটি কার? এই উক্তিটির মধ্যে দিয়ে বক্তার কোন বিশ্বাস দ্যোতিত হয়েছে?

আলোচ্য উক্তিটি বদন হিজড়ের।

বদন হিজড়ে লোকমুখে শুনেছিল যে, মতিলাল পাদরীর গির্জায় ‘দূতঠাকুর' এসেছে। সেই শুনে সে দূতঠাকুরকে দেখতে ও তাকে গান শোনাতে এসেছিল। ভামর পাদরীর কথায় ছেলেকে কোলে নিয়ে বসলে বদন শিশুপুত্র তথা দূতঠাকুরের চারপাশে ঘুরে ঘুরে গান গাইতে শুরু করল। কিছুক্ষণ পরে শিশুর মুখের দিকে তাকিয়ে আন্তরিক ভাবে সে ওই কথাগুলি বলেছিল। এই কথার প্রেক্ষিতে স্পষ্ট হয়ে ওঠে তার বিশ্বাসের জগৎ। ধর্মের বিভিন্নতার মধ্যেও মূল ঐশ্বরীর শক্তি যে একটাই এই বিশ্বাস তার মধ্যে দৃঢ়ভাবে ছিল। তাই বাউল গান কীর্তন গানের বুলিতে সে গির্জা ঘরের দূতঠাকুরের বন্দনা করতে পেরেছিল। এবং যুগে যুগে যে রকমারি ভাবে সেই এক-এর বন্দনা গানই গেয়ে এসেছে—দূত ঠাকুরকে এই কথাটাই সে বলতে চেয়েছিল। তাই উক্ত উক্তিটির মধ্যে দিয়ে বদনের মধ্যে যে একেশ্বরবাদের প্রতি অসীম বিশ্বাস ছিল, তাই দ্যোতিত হয়েছে।