“সংসারের অন্য প্রয়োজন হ্যাংলা কুকুরের মতো এই আমার শখের বিলিতি কুকুরের উচ্ছিষ্ট চেটে ও শুঁকে কেমন করে যে বেঁচে ছিল তার রহস্য আমার চেয়ে আমার স্ত্রী বেশি জানতেন।”–উৎস নির্দেশ করে উক্তিটির ব্যাখ্যা করো।

“সংসারের অন্য প্রয়োজন হ্যাংলা কুকুরের মতো এই আমার শখের বিলিতি কুকুরের উচ্ছিষ্ট চেটে ও শুঁকে কেমন করে যে বেঁচে ছিল তার রহস্য আমার চেয়ে আমার স্ত্রী বেশি জানতেন।”– উৎস নির্দেশ করে উক্তিটির ব্যাখ্যা করো।

আলোচ্য উক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পয়লা নম্বর' নামক গল্প থেকে নেওয়া হয়েছে। 

গল্পকথক অদ্বৈতচরণ ছিলেন একাগ্রচিত্ত গ্রন্থকীট। বই-এর জগতের বাইরে তাঁর দৃষ্টি ছিল না। এমনকি নিজের সংসার ও স্ত্রীর প্রতিও কোনো নজর ছিল না তাঁর। তাঁর যা কিছু অর্থ-সামর্থ্য ছিল সবই ব্যয়িত হত বই কেনায়। সংসারের বরাদ্দ নিয়ে কোনো ভাবনা চিন্তা তাঁর ছিল না, এমনকি সংসার খরচের টাকা কমিয়ে তাও ব্যয় করতেন বই সংগ্রহ করতে। স্ত্রী নিরুদ্দিষ্ট হবার পর তাঁর অন্যমনস্কতার বেড়ায় টান পড়ল, তখন তিনি উপলব্ধি করতে পারলেন, সংসারের কোনো সংবাদই তিনি কখনও রাখেননি। কীভাবে তাঁর সংসার যে এতকাল চলেছে তার হিসেব একমাত্র তাঁর স্ত্রী অনিলাই জানতেন। এই কথাটা ব্যক্ত করতেই গল্পকথক ওই উক্তিটি করেছেন।



“গাড়ি-ঘোড়া লোক-লস্কর নিয়ে সে যেন দশ-মুণ্ড বিশ-হাতের পালা জমিয়েছে।”—কে, কার উদ্দেশ্যে এই মন্তব্য করেছেন? কেন করেছেন?

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পয়লা নম্বর' নামক গল্পের গল্পকথক অদ্বৈতচরণ, তাঁর প্রতিবেশী সিতাংশুমৌলি সম্বন্ধে আলোচ্য মন্তব্যটি করেছেন।

অদ্বৈতচরণ একজন গ্রন্থকীট। নির্জন গলির দ্বিতীয় নম্বর বাড়িতে তিনি বাস করেন। অন্য ব্যাপারে অন্যমনস্ক হয়ে অনন্যমনস্ক পড়াশোনায়। কিন্তু তাঁর সেই নির্জন নিস্তব্ধপ্রায় গলিতে সাড়া জাগিয়ে তুলেছিলেন নরোত্তমপুরের জমিদার সিতাংশুমৌলি। ঠাকুর-চাকর-সহিস-ঘোড়া-গাড়ি-টেনিস-গান-বাজনায় চব্বিশ ঘণ্টাকে মুখরিত করে তিনি বাস করতে শুরু করেছিলেন পয়লা নম্বর বাড়িটিতে। একজন লোকের জন্যে এত চাকর-বাকর এত গাড়ি-ঘোড়ার আয়োজন দেখে অদ্বৈতচরণ সিতাংশুকে দৈত্য আখ্যা দিয়েছিলেন। একা লোকের তো আয়োজন দেখেই তাঁকে রাবণের সঙ্গে তুলনা করতে আলোচ্য মন্তব্যটি তিনি করেছিলেন।



“আমি চললুম। আমাকে খুঁজতে চেষ্টা কোরো না। করলেও খুঁজে পাবে না।”—অভিমানক্ষুব্ধ পত্রটির রচয়িতা কে? সে কোথায় ও কেন চলে গিয়েছিল?

আলোচ্য পত্রটির রচয়িতা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের 'পয়লা নম্বর' গল্পের নায়িকা অনিলা।

পুঁথির ব্যুহ ভেদ করে, তত্ত্বজ্ঞানের কুয়াশা কাটিয়ে তার স্বামী অদ্বৈতচরণ ধন্য করতে পারেনি তার জীবন-যৌবনকে। অন্যদিকে সেই নিঃসঙ্গ মনের পাড়ে প্রেমের হাতছানি দিয়েছিল সিতাংশমৌলি। একদিকে সামাজিক বন্ধু, অন্যদিকে অসামাজিক প্রেমে অবগাহন প্রস্তাব এই দু-এর টানাপোড়েন থেকে আত্মরক্ষা করার জন্যে এবং উভয়ের কাছেই অধরা থাকতে গৃহত্যাগ করতে হয়েছিল তাকে। কেন না, একদিকে যেমন তার স্ত্রী-জীবনটি হয়েছিল অবহেলিত, অন্যদিকে তেমনি সিতাংশুর প্রেমের শ্রদ্ধানষ প্রস্তাবে সাড়া দিলে তার মর্যাদা ক্ষুণ্ণ হত অবশ্যই। তাই আত্মস্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে নিরুদ্দেশ হওয়া ছাড়া অন্য কোনো পথ তার সামনে খোলা ছিল না। তাই অনিলা সংসার ত্যাগ করে নিরুদ্দেশ হয়ে গিয়েছিল।



“কিন্তু দেখলুম হঠাৎ এই আঘাতে আমার মধ্যে নব্যকালের জ্ঞানীটি মূর্ছিত হয়ে পড়ল, আর কোন আদিকালের প্রাণীটা জেগে উঠে ক্ষুধায় কেঁদে বেড়াতে লাগল।”—উক্তিটি কার? উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ করো।

আলোচ্য উক্তিটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘পয়লা নম্বর' নামক গল্পের গল্পকথক অদ্বৈতচরণের।

স্ত্রী অনিলা গৃহত্যাগ করে চলে যাওয়ার পর, অদ্বৈতচরণ বাস্তবের মাটিতে পা রেখে বুঝতে পারলেন পুঁথিগত বিদ্যা দিয়ে জ্ঞানের ক্ষুধা মেটানো যেতে পারে, কিন্তু মনের ক্ষুধা তাতে মেটে না। আধুনিক সাহিত্য বিজ্ঞান সম্বন্ধে জ্ঞানার্জন করে তিনি যখন স্ত্রীর গৃহত্যাগের বিষয়টি উপন্যাস বিশ্লেষণের আদলে ভাবতে বসলেন, তখনই দেখলেন, তল পাচ্ছেন না। তাঁর সেই আধুনিক জ্ঞানী মন পরাস্ত হয়ে গেল আদিকালের চিত্তবৃত্তির কাছে—যে চিত্তবৃত্তি স্বভাবজাত, যে চিত্তবৃত্তি যুগযুগান্তর ধরে মানুষের হৃদয়গভীরে প্রবহমান। বিরহের মধ্যে দিয়ে অদ্বৈতচরণ প্রকৃত জ্ঞান লাভ করতে সমর্থ হলেন।